মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালন করা হয়। 'শিবরাত্রি' কথাটা দুটি শব্দ থেকে এসেছে। 'শিব' ও 'রাত্রি', যার অর্থ শিবের জন্য রাত্রী। দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ দিন মহাশিবরাত্রি। এদিন ভক্তি মনে পুজো করলে বাবা ভোলেনাথের ভক্তদের মনবাঞ্ছা পূরণ হয়। তারকেশ্বর সহ দেশের ভিন্ন প্রান্তে ভোলেবাবার মাথায় জল ঢালতে ভক্তদের সমাগম হয়। প্রায় এক মাস আগে থেকে চলে প্রস্তুতি।
শিবরাত্রিতে ২ বিশেষ যোগ
এই বছর ৮ মার্চ পড়েছে শিবরাত্রি। এই বিশেষ দিনে সমস্ত সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ, সিদ্ধি যোগ ও শিব যোগ গঠিত হচ্ছে। এদিন মন থেকে কেউ যদি নিয়ম মেনে ভোলেবাবার পুজো করেন, তাহলে সেই শিব তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এবং সে আর্থিক সুবিধা পায়। জ্যোতিষীদের মতে, বহু বছর পর তিনটি শুভ যোগ তৈরি হচ্ছে। মহাশিবরাত্রিতে প্রথম যে যোগ গঠিত হবে, তা হল শিব যোগ।
শাস্ত্র অনুসারে, যে ভক্ত শিবের উপাসনা করেন, ভগবান শিব প্রসন্ন হোন তার প্রতি এবং আশীর্বাদ বর্ষণ করবেন। দ্বিতীয় যোগ হল সিদ্ধি যোগ। সিদ্ধি যোগে, কোনও শিব ভক্ত, মহাদেবের মন্ত্রোচ্চারণ করলে, তার প্রতি কৃপা বর্ষণ করেন শিব। এই মহাশিবরাত্রিতে তৃতীয় যোগ যেটি গঠিত হচ্ছে, তা হল সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ। এই যোগে ভগবান শিবের আরাধনাকারী ভক্তরা সকল প্রকার ফল লাভ করেন। তার প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ হয়।
জ্যোতিষীরা বলছেন যে, কেউ যদি বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়, তবে এই শিবরাত্রিতে তাকে শিবলিঙ্গে হলুদের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে ভোলেনাথকে নিবেদন করতে হবে। ফলে তার বিবাহের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে। আপনি যদি শিক্ষা এবং ব্যবসায় সমস্যার সম্মুখীন হন তবে এই সমাধানটি চেষ্টা করুন।
কালসর্প দোষ
কালসর্প দোষ জন্মছকের এমন একটি অবস্থা, যেখানে সাতটি গ্রহ যেমন বৃহস্পতি, রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, শুক্র এবং শনি সকলেই রাহু এবং কেতুর ছায়ায় ঢাকা পড়ে অর্থাৎ এই সাতটি গ্রহ যখন এক পঙক্তিতে চলে আসে আর তারা ঢাকা পড়ে রাহু ও কেতুর ছায়ায়, তখন সৃষ্টি হয় পূর্ণ কালসর্প দোষ। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, কুণ্ডলীতে কাল সর্প দোষ থাকলে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
কাল সর্প দোষের নাম শুনলেই মানুষের মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনার কুণ্ডলীতে কালসর্প দোষ থাকে তাহলে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। ছোট ছোট প্রতিকার করলেই আপনি এই দোষ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সামনেই মহাশিবরাত্রি। এই দিনটি কাল সর্প দোষ কাটানোর দারুণ শুভ। হিন্দু ধর্মে ভগবান শিবের গলায় সাপকে শুভ বলা মনে করা হয়। দেবাদিদেব মহাদেবের পুজোর দিন আপনি কুণ্ডলীতে থাকা অশুভ কাল সর্প দোষ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। এর জন্যে রয়েছে কিছু প্রতিকার।
কালসর্প দোষ এড়ানোর পদ্ধতি
* শিবরাত্রির দিন কোনও জ্যোতির্লিঙ্গের পুজো করুন।
* এদিন বাড়ির বা মন্দিরের শিবলিঙ্গে রৌপ্য সাপ নিবেদন করা দারুণ শুভ।
* সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় কিছু খাবেন না। তবে জল খেতে পারেন।
* স্নানের সময় পূর্ব দিকে মুখ রাখুন।
* প্রতিদিন জল দিয়ে শিবের অভিষেক করুন এবং বেল পাতা নিবেদন করুন।
* শিবরাত্রিতে মহাদেবের মহাভিষেক করুন।
* লাল চন্দন, সুপারি, প্রবাল, কমলগট্টের উপর কলাব মুড়িয়ে পুজো-অর্চনার স্থানে রাখুন।
* জীবন থেকে দুঃখ দূর করুন, সম্পদ অর্জন করুন এবং আপনার স্বপ্নকে সত্যি করুন।
* সন্ধ্যায় শিবের সামনে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান।
* ঘরে ময়ূরের পালক রাখুন
* সকাল- সন্ধ্যা হনুমান চাল্লিসা পাঠ করুন।
* কোনও ধর্মীয় স্থান বা দরিদ্রকে জল ও খাবার দান করুন
* আপনার মোবাইল এবং ল্যাপটপে শেষনাগের উপর শুয়ে থাকা বিষ্ণুর ছবি রাখুন। কিংবা সেই ছবি আপনার বাড়িতে এমনভাবে রাখুন যাতে আপনি ঘরে প্রবেশ করার সময় দেখতে পান।
(Disclaimer: এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ অনুমান এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে। আজতক বাংলা এটি নিশ্চিত করে না।)