'আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরি বোল।' এই মজার ছড়া জানেন না এরকম খুব কম বাঙালিই আছেন। এমনিতেই বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। তবে অনেক উৎসবগুলির মধ্যে সকলের পছন্দের তালিকায় প্রথমের দিকেই থাকে দোলযাত্রা (Dolyatra) বা হোলি (Holi)। আর দোলযাত্রার ঠিক আগের দিন আট থেকে আশি সকলে মেতে ওঠেন 'ন্যাড়া পোড়া' (Nyara Pora) রীতিতে। ছোটরা আবার অনেকে ন্যাড়া পোড়াকে 'বুড়ির ঘর' পোড়ানো বলে।
যদিও বাংলার বাইরে এই রীতি 'হোলিকা দহন' নামে পরিচিত। উদ্দেশ্য ও কারণ মূলত একই হলেও রীতি পালনের ধরণে স্থানভেদে পার্থক্য আছে। হোলির ঠিক আট দিন আগে কোনও শুভ কাজ করা উচিত না। সেই সময়কালকে হোলিকা দহন বলা হয়। তবে এই রীতি মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ভারত,নেপাল কিংবা পশ্চিম বাংলার বাইরে প্রচলিত। বাঙালিদের অনেকটা একই ধরণের উৎসব পালনের রীতি আছে যাকে ন্যাড়া পোড়া বলে। তবে সেটি হয় দোলযাত্রার আগের দিন। কোনও অশুভ শক্তিকে হারিয়ে, শুভ শক্তি জয়ের উদযাপন হল এই রীতির মূল উদ্দেশ্য।
ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহনের সময়কাল
এই বছর যেহেতু হোলি ২৯ মার্চ পড়েছে। তাই ন্যাড়া পোড়ার দিন ২৮ মার্চ এবং হোলিকা দহনের সময়কাল ২২ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত। যদিও মূল পূজা ২৮ তারিখেই হবে।
আরও পড়ুন: রঙের উৎসব! তবে অনেকটাই আলাদা দোল আর হোলি
ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহনের গুরুত্ব
শ্রীকৃষ্ণ ও প্রহ্লাদকে ঘিরেই হোলি উৎসব পালিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, শ্রীকৃষ্ণ ও প্রহ্লাদ দু'জনেই বিষ্ণুর অংশবিশেষ। প্রহ্লাদ ছিল রাজা রাজা হিরণ্যকশিপুরের ছেলে। সে ছিল একজন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। এই প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা। সেই উদ্দেশে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেন সে। হোলিকা ভেবেছিলেন, তিনি তাঁর মায়াবী ক্ষমতাবলে বেঁচে যাবেন এবং পুড়ে ছাই হয়ে যাবে প্রহ্লাদ। কিন্তু আসলে হয়েছে তার উল্টোটাই। বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগেনি এবং আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় কাশ্যপ কন্যার। প্রহ্লাদকে বাঁচাতে বিষ্ণুর হোলিকা বধকে উদযাপন করা হয় এভাবেই।
ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহনের নিয়ম
হোলির আগের দিন কোনও খোলা মাঠ বা স্থানে কাঠ ও জ্বালানি মজুদ করে সাজানো হয়। তার উপর একটি একটি পুত্তলি রাখা হয়, যা হোলিকার প্রতীকী রূপ। ন্যাড়া পোড়ার আগে সুতো দিয়ে সেই স্তূপাকৃতির চারপাশ বেঁধে দেওয়া হয়।
তারপর তিন বা সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হয়। তবে মনে করা হয় ন্যাড়া পোড়ার ছাই বাড়িতে আনা শুভ। পরের দিন ভোরে উঠে পূর্বপুরুষদের তর্পণ করলে ভাল। নয়তো কোনও জলাশয়ে সেটি ভাসিয়ে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন ভেষজ আবির, জানুন পদ্ধতি
অনেকে এই সময়ে নিজেদের বাড়ি রঙ করেন ও সাজান। সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাবার, বিশেষত গুজিয়া, মালপোয়ার মতো মিষ্টির ব্যবস্থা করা হয়। মনে করা হয় এই ন্যাড়া পোড়াতে মনের সব লোভ, হিংসা, পাপ ও সমস্ত নেতিবাচক শক্তি এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।