আর ক'দিন পর অম্বুবাচী। ঋতুমতী হবেন ত্রিভূবনের আদিশক্তি মা কামাক্ষ্যা। চারদিন ধরে বন্ধ থাকে কামাক্ষ্যা মন্দির। ধরাছোঁয়া যায় মাকে। এই সময়ে জাগ্রত মায়ের সাধনা করলে মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল। অম্বুবাচি উদযাপিত হলেও ঋতুস্রাব নিয়ে এ দেশেই রয়েছে নানা ছুঁৎমার্গ। এ দেশে ঋতুস্রাব নিয়ে রয়েছে নানা কুসংস্কার। সামাজিক প্রচলিত নানা বিধি। ব্যতিক্রম ওড়িশা। বাংলার পাশে রাজ্যে বর্ষার আগমনে যখন ধরা সিক্ত হয় তখন উদযাপিত হয় রজ পরব। এই সময়ে তো ভূদেবী রজঃস্বলা হয়ে ওঠেন।
প্রচলিত বিশ্বাস, আষাঢ় মাসে সূর্য মিথুন রাশিতে প্রবেশে সঙ্গে সঙ্গে ভূদেবী ঋতুমতী হয়ে ওঠেন। পুরাণ বলছে,কাশ্যপ প্রজাপতির কন্যা ভূদেবী। আবার রামায়ণে তিনি সীতার মা। দ্বাপরে তিনি সত্যভামা। শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী। ওড়িশায় জগন্নাথের পত্নী হিসেবেই পূজিত হন ভূদেবী। চার দিন ধরে চলে এই অনন্য রজ উৎসব। বিশ্বাস করা হয়, তিন দিন ভূদেবীর ঋতুস্রাব হয়। চতুর্থ দিন শুদ্ধি স্নানের দিন। এই তিন দিনে মেয়েরা নতুন জামাকাপড় পরেন। ঘরের কোনও কাজ করেন না।
( নারীদেহে কোথায় কোথায় চুল থাকলে সৌভাগ্যের প্রতীক? জানতে পড়ুন এই প্রতিবেদন- মহিলাদের শরীরের এই অংশগুলিতে লোম থাকা শুভ, মেলে লক্ষ্মীর আশিস )
প্রতি বছর 'রজ মহোৎসব' ১৪ জুন শুরু হয়। চলে ৪ দিন ধরে। প্রথম দিনকে বলা হয় পহিলি রজ। দ্বিতীয় দিন মিথুন সংক্রান্তি। সূর্যের মিথুন রাশিতে প্রবেশ করার দিন। তৃতীয় দিন ভূ দহ বা বাসি রজ। চতুর্থ দিন বসুমতী স্নান। প্রাচীন কাল থেকে এই চার দিন ব্যাপী উৎসব পালিত হয়ে আসছে ওড়িশায়। এই সময়ে ভূদেবীর বিশ্রাম দরকার বলে বিশ্বাস করা হয়।
ঘরের মেয়েদেরও কৃষি এবং গৃহস্থালির মতো কাজ করতে দেওয়া হয় না। এই তিন দিন শুধু আরাম করেন মেয়েরা। পছন্দের খাবার দেওয়া হয় তাঁদের। তাঁরা নতুন পোশাক পরেন। দোলনায় আনন্দ করেন।অফিসকাছারিতে মেয়েদের জন্য থাকে উপহার। নানাবিধ ব্যবস্থা। রান্নার কাজ করেন পুরুষরা। গ্রামাঞ্চলে দেশীয় খেলাধুলোর চলও রয়েছে।
সনাতনী বিশ্বাস, শক্তিই নানা রূপে বিরাজমান। কখনও তিনি কালী, কখনও দুর্গা কখনও কামাক্ষ্যা আবার কখনও ভূদেবী। অম্বুবাচী ও রজ পর্বের আচারের ফারাক থাকতে পারে কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন মিলে যায় দুই অঞ্চলের উৎসব। এই উৎসবগুলি কি বলে দেয় না সনাতন ভারত সময়ের চেয়েও কতটা এগিয়ে ছিল!
আরও পড়ুন- মাসের এই তারিখগুলিতে জন্মানো ব্যক্তিরা হন বুদ্ধিমান-সাহসী