গোটা বিশ্বে আবারও মন্দার আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে। ২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই গত দুই বছর ধরে করোনা সংকটের সঙ্গে লড়াই করা গোটা বিশ্ব চরম অর্থ শঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছে।
শুরু থেকেই এই যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে পড়েছে। এই যুদ্ধের কারণে, ইতিমধ্যে করোনার সঙ্গে যুঝতে থাকা অর্থনীতির সামনে জোগান-শৃঙ্খল সংকটও দেখা দিয়েছে, যা আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের প্রতিটি দেশকে প্রভাবিত করছে।
এখন ফের ২০০৮ সালের মতো মন্দার আশঙ্কায় রয়েছে বিশ্ব বাজার। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি ইলন মাস্কও এই আর্থিক মন্দার আশঙ্কায় ভীত। ভারতের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
যে কোনও দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে তার অর্থনীতির ওপর। যখন অর্থনীতিতে কিছু সময়ের জন্য (অন্তত বছরের তিন চতুর্থাংশের জন্য) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেমে যায়, কর্মসংস্থান কমে যায়, মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে এবং মানুষের আয় অপ্রত্যাশিতভাবে কমতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয় অর্থনৈতিক মন্দা (Recession)।
সারা বিশ্বে যখন থেকে করোনা মহামারী শুরু হয়েছে, তখন থেকেই বিশ্বের একাধিক দেশে অর্থনীতির মন্দার কবলে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে লড়াই এই শঙ্কটময় সময়কে আরও শোচনীয় করে তুলেছে। এখন বেশিরভাগ বাজার বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই গোটা বিশ্বে ২০০৮ সালের মতো মন্দা (Recession) আসতে পারে।
অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাজারে আঘাত করতে শুরু করেছে। অপরিশোধিত তেলের দামের তীব্র পতন নিয়ে নিয়ে অনুমান করা হচ্ছে। তার উপর সোনার দামে বড়সড় পতন হয়েছে। এমনই চারটি পরিস্থিতির জেরে বিশ্ব আর্থিক মন্দার পরিস্থিতি উদ্ভুত হয়েছে। চলুন এ বিষয়ে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক...
ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড (WTI) ৮.৪% বা ৯.১৪ ডলার কমে ৯৯.২৯ ডলার প্রতি ব্যারেল হয়েছে। এর আগে মে মাসে ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। বিদেশি ব্রোকারেজ ফার্ম সিটি দাবি করেছে, চলতি বছরের শেষে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬৫ ডলারে নেমে আসতে পারে।
মার্কিন প্রাকৃতিক গ্যাসের ফিউচার দর ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নিউ ইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ (NYMEX) অগাস্টে ডেলিভারির জন্য গ্যাস ফিউচার দরে ৩.৬ শতাংশ পতন দেখেছে। এটি ৫.৫২৪ ডলার এমএমবিটিইউতে (MMBTU) নেমে এসেছে।
সোনার দর গত সাত মাসের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। সোনার দর ১.৯ শতাংশ কমে ১৭৭৪.২৬ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে। গত সাত মাসের মধ্যে এটাই স্বর্ণের সর্বনিম্ন দর। রুপোর দরও ০.৬ শতাংশ কমে ১৯.৮৪ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী সোনার দামে এই পতন লক্ষ্য করা গেছে যা আর্থিক মন্দার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মন্দার আশঙ্কায় সারা বিশ্বের শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে। S&P 500 প্রথম লেনদেনের সময় ১.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বেঞ্চমার্কের ৯৫ শতাংশ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে লাল চিহ্নে। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৬১৫ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ কমে ৩০,৫১৫ এ পৌঁছেছে। Nasdaq ১.৩ শতাংশ কমেছে।