চারণকবি বৈদ্যনাথের বর্ণনায়, '...শাল মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা- পোড়ামাটি রাঙা তোমার ভূমি। তীরে ভাঙা তরী গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী।' জঙ্গলমহলের অন্যতম জেলা বাঁকুড়া। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে অন্যতম জনপ্রিয় জেলা। মুকুটমণিপুর, ঝিলিমিলি, বিষ্ণুপুর,জয়রামবাটি, শুশুনিয়া পাহাড়, বিহারিনাথ পাহাড়-- শীতকালে বাঙালির অন্যতম সেরা গন্তব্য। বাঁকুড়ার তাপমাত্রা চরমভাবাপন্ন। শীতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। গ্রীষ্মে তীব্র দহন। জলকষ্ট।
জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। পুরসভা এলাকাও রয়েছে। একদা মল্লরাজাদের রাজধানী বিষ্ণুপুরের ইতিহাস বহু প্রাচীন। জড়িয়ে রয়েছে মল্ল রাজবংশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস। ১৯৫১ সালে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। ২০১১ সালের শেষ জনগণনা অনুযায়ী, বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে জাতভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে বৌদ্ধ ০.০১ শতাংশ, খ্রিস্টান ০.১৪ শতাংশ , জৈন ০.০৯ শতাংশ, মুসলিম ৪.৯ শতাংশ, তফসিলি ২৯.১ শতাংশ, তফসিলি উপজাতি ১৭ শতাংশ, শিখ ০.০২ শতাংশ।
রাজনৈতিক চিত্রটি কেমন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের?
বাঁকুড়ার লালমাটিতে ২০১৯ সালে ফুটেছিল পদ্ম। বস্তুত, জঙ্গলমহল গতবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে খালি হাতেই ফেরায়। বাঁকুড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একাধিকবার সামনে এসেছে পঞ্চায়েত ভোটের সময়। বাঁকুড়া জেলায় মোট দুটি লোকসভা কেন্দ্র, বাঁকুড়া ও বিষ্ণপুর। বাঁকুড়া জেলায় এবারে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে বাঁকুড়া জেলার দলের সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীকে। অন্যদিকে বাঁকুড়ায় এবারও বিজেপি টিকিট দিয়েছে গতবারের জয়ী সুভাষ সরকারকে। বামেদের প্রার্থী আইনজীবী নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত। একসময় বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র। ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা বাম সাংসদ ছিলেন প্রয়াত বাসুদেব আচারিয়া। ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অভিনেত্রী মুনমুন সেন হারিয়ে দেন বাসুদেবকে। তারপর থেকে বামেরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তারপর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট। না, এবার আর মুনমুন সেনকে নয়। তৃণমূল টিকিট দেয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। দুঁদে রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন সে বার। কিন্তু দলের গোষ্ঠীকোন্দলের প্রভাব পড়ে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কী ঘটেছিল?
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের মুনমুন সেন ভোট পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৮২ হাজার ৯১১টি। বামপ্রার্থী বাসুদেব আচারিয়া ভোট পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০। বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার সে বার ভোট পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার ৮৫৩টি। ২০১৯ সালে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ভোট পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ১২২। সুভাষ সরকার ভোট পান ৬ লক্ষ ৭২ হাজার ২০২। বামেদের ভোট কমে গিয়ে বামপ্রার্থী অমিয় পাত্র ভোট পান মাত্র ১ লক্ষ ১৪টি।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটেও দাপট গেরুয়া শিবিরের
বাঁকুড়া লোকসভায় মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। শালতোড়া, রঘুনাথপুর, ছাতনা, রানিবাঁধ, রায়পুর, তালড্যাংরা, বাঁকুড়া। এরমধ্যে রঘুনাথপুরে বিজেপি জিতেছিল, শালতোড়ায় বিজেপি, ছাতনায় বিজেপি, রানিবাঁধে জেতে তৃণমূল কংগ্রেস, রায়পুরে তৃণমূল, তালড্যাংরায় তৃণমূল ও বাঁকুড়া কেন্দ্রে জিতেছিল বিজেপি।