রাজ্যে প্রথম দফার ভোট কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শান্তিতেই মিটেছে। এবার পালা দ্বিতীয় দফার। বৃহস্পতিবার ফের বুথমুখী হবে রাজ্যবাসী। এবার ৪ জেলায় ভোট হবে ৩০টি কেন্দ্রে।
প্রথম দফায় বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অংশ ভোট হয়েছিল। এবার জেলার বাকি অংশে ভোট। ভোট হবে বাঁকুড়ার ৮টি কেন্দ্রে। পূর্ব মেদিনীপুরের ৯টি কেন্দ্রে। পশ্চিম মেদিনীপুরেরও ৯টি কেন্দ্রে। এরসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪টি কেন্দ্রে।
তবে সবার নজর থাকছে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের দিকে। কেবল দ্বিতীয় দফা নয়। বাংলার এবারের ভোট পর্বে সবচেয়ে হাইপ্রফাইল লড়াই হতে চলেছে আগামী বৃহস্পতিবার।
গত দু'বার বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন মমতা। ২০১১ কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার উপনির্বাচনে সিপিএমের নলিনী মুখোপাধ্যায়কে ৫৪ হাজার ভোটে হারান মমতা। তবে গত বিধানসভা ভোটে মমতাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়েছিলেন বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি। সেবার ভবানীপুরে ২৯.৭৯ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছিলেন মমতার। তবে ২৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে দিতেছিলেন তিনি। এবার প্রথম নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রীর কাছে এই লড়াই তাঁর পুরনো সহকর্মীর সঙ্গে প্রেস্টিজ ইস্যু।
২০১৬ সালে নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে জিতেই বিধায়ক হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। স্থান পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায়। এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে শুভেন্দুকে। গত ডিসেম্বরে তিনি তৃণমূল ছাড়ার আগে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন৷ তার পর বিজেপিতে যোগদান করেন৷ এর পরই নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গত ডিসেম্বরে তিনি তৃণমূল ছাড়ার আগে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন৷ তার পর বিজেপিতে যোগদান করেন৷ এর পরই নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তৃণমূলনেত্রীকে নন্দীগ্রামে 'হাফ লাখ' ভোটে হারাবেন এমন কথা প্রকাশ্যে আগে বহুবার বলতে শোনা গিয়েছে শুভেন্দুকে।
মমতা-শুভেন্দুর ডুয়েলের পাশাপাশি আর যে প্রার্থীদের দিকে নজর থাকবে তার মধ্য অন্যতম হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়ের অর্থাৎ অভিনেতা হিরণ। খড়গপুর সদর থেকে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হিরণ। এই আসনে কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের বিধায়ক জ্ঞানসিং সোহন পালকে হারিয়ে ষোলোর নির্বাচন জিতে বিধানসভায় পা রেখেছিলেন বর্তমান বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে দিলীপ সাংসদ হতে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রায় ২০ হাজার ভোটে বিজেপি-কে হারিয়ে দেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার।
নন্দীগ্রামের মতোই অনেকেরই নজর থাকছে ডেবরা কেন্দ্রিটর দিকে। যেখানে সম্মুখসমরে রাজ্যের দুই প্রাক্তন আইপিএস। বিজেপির প্রার্থী ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে লড়াই তৃণমূল প্রার্থী হুমায়ন কবীরের।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ। গত লোকসভায় ঘাটালে অভিনেতা দেবের বিরুদ্ধে তাঁকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। সেবার কড়া লড়াই করেও হেরে যেতে হয় একদা মমতা ঘনিষ্ঠ আইপিএসকে। গত বিধানসভায় ডেবারে কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের রাধাকান্ত মাইতি। এবার এই কেন্দ্রে গেরুয়া পতাকা ওড়ানোর দায়িত্ব ভারতীর।
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর। তখনই জল্পনা তৈরি হয়েছিল এবারের ভোটে তিনি ময়দানে নামছেন কিনা। সেই জল্পনা সত্যি হয়েছে। ডেবরায় ভূমিপুত্র হুমায়ুনকে ভারতীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল। এটাই হুমায়ুনের প্রথম ভোটের লড়াই হতে চলেছে।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে ময়না থেকে ভোটের ময়দানে নেমেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দা। মনোজ তিওয়ারি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার দিনেই শুভেন্দু অধিকারীর থেকে গেরুয়া পতাকা নেন দিন্দা। একুশের ভোটেই প্রথমবার প্রার্থী হলেন অশোক। গতবার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী।
এদিকে সবংয়ে তৃণমূলের হয়ে লড়াইয়ের মঞ্চে মানস ভুঁইয়া। একদা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত সবংয়ে এবারে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মানসরঞ্জন ভুঁইয়া। বিজেপির তরফ থেকে দাঁড়াচ্ছেন তৃণমূল-ত্যাগী অমূল্য মাইতি। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে দাঁড়াচ্ছেন কংগ্রেস চিরঞ্জীব ভৌমিক। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস প্রার্থী মানস৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১২৬,৯৮৭৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নির্মল ঘোষ৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৭৭,৮২০৷ কংগ্রেস প্রার্থী মানস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের নির্মল ঘোষকে ৪৯,১৬৭ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের মানস সিপিআইএমের রামপদ সাহুকে পরাজিত করেছিলেন। ২০০৬ সালেও বিধানসভা নির্বাচনে মানস সবং কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন।