scorecardresearch
 

শুভেন্দু বনাম তৃণমূল টক্করে তুমি কার? একুশেও বঙ্গ রাজনীতির কেন্দ্রে ফের 'শহিদ পরিবার'

কোনও সন্দেহ নেই ২০০৭ সালের নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন ২০১১ সালে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা জয়ের রাস্তা প্রশস্ত করেছিল। সেই নন্দীগ্রামই ২০২১ সালের ভোটের আগে ফের একবার বাংলার রাজ্য রাজনীতির ভরকেন্দ্র। যার জন্য ৫ বছর পর জনসভা করতে ছুটে আসতে হয় তৃণমূলনেত্রীকে। শুধু ছুটে আসাই নয় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আগামী বিধানসভা থেকে সেই নন্দীগ্রামে নিজের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার এই ঘোষণাই এখন আলোড়িত হচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। জোর আলোচনা চলছে তাঁর এই মাস্টারস্ট্রোক নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে এতদিন পরে কেন নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা মনে পড়ল তৃণমূলনেত্রীর। ১৩ বছর আগের সেই আন্দোলনের স্মৃতি এখনও তাঁর হৃদয়ে অমলিন। সোমবার নন্দীগ্রামে পা রেখেই তা বোঝাতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সেই শহিদ পরিবারগুলির ভোট এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ঝুলিতেই যাবে তো? তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।

Advertisement
ফের একবার বঙ্গ রাজনীতির আলোচনায় সেই শহিদ পরিবারগুলি ফের একবার বঙ্গ রাজনীতির আলোচনায় সেই শহিদ পরিবারগুলি
হাইলাইটস
  • জমি আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসাবেই রাজ্য রাজনীতিতে মমতার উত্থান
  • নন্দীগ্রাম আন্দোলনের বলি হয়েছিলেন ৪১ জন
  • ফের একবার বঙ্গ রাজনীতির আলোচনায় সেই শহিদ পরিবারগুলি

কোনও সন্দেহ নেই ২০০৭ সালের নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন ২০১১ সালে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা জয়ের রাস্তা প্রশস্ত করেছিল। সেই নন্দীগ্রামই ২০২১ সালের ভোটের আগে ফের একবার বাংলার রাজ্য রাজনীতির ভরকেন্দ্র। যার জন্য ৫ বছর পর জনসভা করতে ছুটে আসতে হয় তৃণমূলনেত্রীকে। শুধু ছুটে আসাই নয় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আগামী বিধানসভা থেকে সেই নন্দীগ্রামে নিজের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার এই ঘোষণাই এখন আলোড়িত হচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। জোর আলোচনা চলছে তাঁর এই মাস্টারস্ট্রোক নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে এতদিন পরে কেন নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা মনে পড়ল তৃণমূলনেত্রীর। ১৩ বছর আগের সেই আন্দোলনের স্মৃতি এখনও তাঁর হৃদয়ে অমলিন। সোমবার নন্দীগ্রামে পা রেখেই তা বোঝাতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সেই শহিদ পরিবারগুলির ভোট এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ঝুলিতেই যাবে তো? তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।

আবেগ নাকি অঙ্ক! ১১০ আসনে শুভেন্দুকে আটকাতে নন্দীগ্রামই কি অস্ত্র মমতার?

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ  নন্দীগ্রামে জমি রক্ষার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে ১৪ জন আন্দোলনকারী প্রাণ হারান। পরবর্তীকালে আহত বেশ কয়েকজনও মারা গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে নন্দীগ্রামে আন্দোলনের বলি হয়েছিলেন ৪১ জন। জমি আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসাবেই রাজ্য রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান শুরু হয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই।  ২০০৮ সালে প্রথমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম সরকারকে  হটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে ঘাসফুল। নন্দীগ্রামের রাজনীতিতে বরাবরই কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে  এই সব শহিদ পরিবার। এতদিন তৃণমূলের পাশেই থাকতে দেখা গিয়েছে এই মানুষগুলিকে।  বর্তমান রাজ্য রাজনীতির নতুন হাওয়ায় সেই শহিদ পরিবারগুলি ফের একবার কল্কে পেতে শুরু করেছে।

Advertisement
নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবার
নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবার

২০২০ সালের শেষে গেরুয়া ঝাণ্ডা হাতে নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই শুভেন্দু যিনি এতদিন কখনও থেকেছেন তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ, কখনও এলাকার বিধায়ক। তারপর থেকেই তাল কাটছে নন্দীগ্রাম। জমি আন্দোলনের কৃতিত্ব কার তা নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে কিছুদিন ধরে। নন্দীগ্রামে শহিদ দিবস পালনেও শুভেন্দু বনাম তৃণমূলের টক্কর দেখেছেন রাজ্যবাসী। শুধু তাই নয় শুভেন্দুর হাত ধরে শহিদ এবং নিখোঁজদের পরিবারের একটা বড় অংশকে দেখা গেছে বিজেপির কর্মসূচিতে হাজির থাকতে। নন্দীগ্রামের সভায় গত ৮ জানুয়ারি শুভেন্দুর দাবি ছিল ৪১ জন শহিদের মধ্যে ৩০ জনের পরিবারের লোক এসেছিলেন তাঁদের পাশে থাকতে। শহিদ পরিবারের সদস্যদের অনেককেই প্রকাশ্যে বলতে শোনা যায়, "দাদা সারা বছর আগলে রাখেন আমরা তাই দাদার পাশেই।"

শুভেন্দুর সভার ঠিক ১০ দিন পরে নন্দীগ্রামের তেখালিতে সোমবার এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রীর সভায় উপস্থিত ছিল ৯ জন শহিদের পরিবার। তাঁদের সরকারের পক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা করে সাহায্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শহিদ পরিবার এবং নিখোঁজ পরিবারের পেনশনের ব্যবস্থা করবে সরকার। শহিদ পরিবারগুলিকে কাছে টেনে মমতা যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন নন্দীগ্রামের আন্দোলনের মূল নেত্রী তিনিই। খেজুরিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার জবাবী সভায় ফের একাবর শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাজির করালেন শুভেন্দু। 

মমতার টার্গেটে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র! একুশের ভোটে বাংলায় গেরুয়া-তারকা কি শুধুই শুভেন্দু?

বিজেপির মঞ্চে উপস্থিত শহিদ পরিবারের সদস্যদের দাবি, এতদিন তাদের খোঁজ খবর রেখেছেন একমাত্র শুভেন্দু অধিকারী। সহ সহায্যই করেছেন শুভেন্দু।  দিদি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই কথা রাখেননি। ১৪ বছর ধরে কোনও খোঁজ নেননি। দেওয়া কথা কোটনাই  এতদিনে রেখে উঠতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শুভেন্দু অধিকারী যেদিকে সেদিকেই থাকবে নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবার। 

নিজেদের সভামঞ্চে শহিদ পরিবারগুলিকে উপস্থিত করে দুই তরফই রাজৈনিত চমক দিতে চাইছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কে? তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত। তৃণমূল দাবি করছে  মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে নন্দীগ্রাম। যার একজনই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা নিজেও নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে দাবি করছেন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবরুদ্ধ নন্দীগ্রামে আন্দোলন করেছিলেন। যদিও দল নির্বিশেষে তৃণমূল বিরোধী শিবিরের দাবি নন্দীগ্রাম আন্দলনের কাণ্ডারী ছিলেন শুভেন্দুই। এই আন্দোলনকে হাতিয়ার করেই রাজ্য নিজেদের মাটি শক্ত করেছিল তৃণমূল। শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে রাজ্য সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি হয়েছিল। যে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জন্য সর্বভারতীয় প্রচারে এসেছিলেন মমতা শুভেন্দু বিদায়ের পর সেখানে ৫ বছর পর পা রাখলেন তৃণমূলনেত্রী। তৃণমূলনেত্রী  নন্দীগ্রাম আমার মনে রয়েছে বলে দাবি করলেও এতদিন শহিদ পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এসেছেন শুভেন্দুই। তাই শুভেন্দুর দলবদলের সঙ্গে ফের একবার সেই আলোচনায় উঠে এসেছে নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবারগুলি। 


 

Advertisement