scorecardresearch
 

১০০ আসন আর ২ কোটি ভোট! মোদী-মমতার বাংলা জয়ের মূল ফ্যাক্টর?

আমাদের দেশে যে কোনও নির্বাচনে একটা বড় ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু ভোট । বঙ্গ রাজনীতিও এর বাইরে নয় । পশ্চিমবঙ্গের ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের দিকে নজর রয়েছে সব রাজনৈতিক দলেরই । এই সংখ্যাই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণ করবে অন্তত ১০০টি বিধানসভা আসনের । লড়াইটা বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট, তৃণমূল আর অবশ্যই বিজেপির। আট দফা নির্বাচন পর্ব পার করে বাংলার মসনদে কারা বসবেন তা জানা যাবে ২ মে। কিন্তু তার আগেই নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

Advertisement
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার সরকার গঠন করতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করছে সংখ্যালঘু ভোটের ওপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার সরকার গঠন করতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করছে সংখ্যালঘু ভোটের ওপরেই
হাইলাইটস
  • এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটাররা নির্ণায়ক হতে চলেছেন
  • এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা
  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার সরকার গঠন করতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করছে সংখ্যালঘু ভোটের ওপরেই

আমাদের দেশে যে কোনও নির্বাচনে একটা বড় ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু ভোট । বঙ্গ রাজনীতিও এর  বাইরে নয় । পশ্চিমবঙ্গের ৩০  শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের দিকে নজর রয়েছে সব রাজনৈতিক দলেরই । এই সংখ্যাই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণ করবে অন্তত ১০০টি বিধানসভা আসনের । লড়াইটা বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট, তৃণমূল আর অবশ্যই বিজেপির। আট দফা নির্বাচন পর্ব  পার করে বাংলার মসনদে কারা বসবেন তা জানা যাবে ২ মে। কিন্তু তার আগেই নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। রাজ্যের বর্তমান শাসক দল তৃণমূলের দাবি, তারাই ফের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা দখল করতে চলেছে। অন্যদিকে, উনিশের নির্বাচনের পর এরাজ্যে প্রধান বিরোধী হয়ে ওটা  বিজেপির দাবি ফের ১০ বছর পর বাংলায় প্রকৃত পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে বাংলায় এবার তৃণমূলের হ্যাটট্রিক হবে কিনা তা অনেকটাই নির্ভর করছে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের কতটা ঝোলায় টানতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  কারণ গত দুই বিধানসভা ভোটে যে মুসলিম ভোটের ওপর আধিপত্য ছিল তৃণমূলের এবার তাতে থাবা বসতে চলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর তাই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে নিয়ে অঙ্কের খেলায় মেতেছে সব রাজনৈতিক দলই। এই পরিস্থিতিতে বাংলার আবস্থা ঠিক কী চলুন তা দেখে নেওয়া যাক।

১৯'এই পরিবর্তনের আভাস, শ্রীচৈতন্যের ভূমিতে “জয় শ্রীরাম”?

সংখ্যালঘু ভোটে জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান
রাজ্যে মোট ২৯৪ টি বিধানসভার আসন রয়েছে। বিজেপি দাবি করছে এবার ২০০ বেশি আসনে ফুঁটবে পদ্ম। অন্যদিকে তৃণমূলেরও আশা তাদের আসন সংখ্যাও ২০০ পার করে যাবে। রাজ্য রাজনীতিতে এভাবে, নানা সম্ভাবনার কথা বলা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কিন্তু সংখ্যালঘু মুসলিমদের হাতে রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক  বিশ্লেষকরা। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটার রয়েছেন। ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ১০০ থেকে ১২৫ টি আসনে মুসলিম ভোটাররা নির্ণায়ক শক্তিতে রয়েছেন। এসব আসনে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুসলিম ভোটার রয়েছেন। জেলাভিত্তিক হিসাবে মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরে ৪৩ টি আসনে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উত্তর দিনাজপুরে মুসলিম জনসংখ্যার হার ৫০.৯২ শতাংশ। মুর্শিদাবাদে ৭০.২ শতাংশ এবং মালদহে ৫১. ২৭ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। এছাড়া নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান এবং বীরভূম জেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মুসলিম ভোটার রয়েছেন। এসবের মধ্যে কোনো কোনো যায়গায় ৩০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার।

Advertisement

BJP-র প্রথম 'সিপাহী', ইনি নুসরতের গড়ে ফুটিয়েছিলেন পদ্ম

গত দুই বিধানসভায় তৃণমূলে জয়জয়কার
সংখ্যালঘু ভোট নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে এমন প্রায়  ৯০টি আসন ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের দখলে ছিল।  জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী  ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৫৯ শতাংশ বাঙালি মুসলিম বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ১২৫ টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসনের মধ্যে ৯১ টিতে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট জিতেছিল। বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৩৩ টি আসন। এরপর ২০১৫ সালে কলকাতা পুরসভা ভোটের ফলে দেখা যায়  অবাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত গার্ডেনরিচ, এন্টালি এবং বেলেঘাটা বিধানসভা এলাকায় বেশ কিছু ওয়ার্ডে কংগ্রেস এবং বাম প্রার্থীরা জয়ী হন। অন্যদিকে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল ১২৫ টির মধ্যে একাই এগিয়ে ছিল ৮১ টি আসনে। অন্যদিকে, কংগ্রেস ২৫ টি এবং বামফ্রন্ট ১৫ টি এবং বিজেপি ৪ টি আসনে এগিয়ে ছিল। ২০১৬ বিধানসভা ভোটেও সেই চিত্রে বদল হয়নি। মুসলিম ভোটের ৩০ শতাংশের অধিকাংশটাই গেছিল তৃণমূলের ঘরেই। তবে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি ১৮ টি আসন পেয়ে চমকপ্রদ ফল করে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল কংগ্রেস গত লোকসভা নির্বাচনে আরও ভালো ফল করতে পারতো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২০১১ এবং ২০১৬-এর নির্বাচনে যে বিপুল সংখ্যক মুসলিম ভোট পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন, সেই মমতার প্রতি কিছুটা বিরাগভাজন হয়েছিলেন মুসলিমরা।

 

মুসলিম ভোটে ভাগ চাইছেন না মমতা
মুসলিম ভোটে ভাগ চাইছেন না মমতা

 

রাজ্য-রাজনীতি ও মুসলিম তোষণ
২০১১ সালে বামফ্রন্টকে পরাজিত করে ঐতিহাসিক পালাবদলে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাপক মুসলিম জনসমর্থন আদায় করেছিলেন। বলা হয়  সাচার কমিটির রিপোর্টকে কাজে লাগিয়ে এই সাফল্য পেয়েছিলেন মমতা। সাচার কমিটির রিপোর্টের মোদ্দা বক্তব্য ছিল, বাম আমলে এই রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়ন হয়নি। মুসলিমরা আর্থসামাজিক ভাবে দুর্বিষহ অবস্থায় বসবাস করছেন। সাচার কমিটির রিপোর্ট মুসলিম ভোট টানতে তৃণমূলকে সহায়তা করেছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এরপর ক্ষমতায় আসার পর মুসলিমদের জন্য মমতা একাধিক কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছেন। যেমন, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীদের বিনামূল্যে সাইকেল দেওয়া হয়েছে, মেধাবী মুসলিম পড়ুয়াদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যে সমস্ত অঞ্চলে উর্দু ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি সেখানে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে উর্দু ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । আর এই কারণেই তৃণমূলনেত্রী সংখ্যালঘু মুসলমান তোষণের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন । তকমা লেগেছে সংখ্যালঘুদের 'ভোটব্যাঙ্ক' হিসেবে ব্যবহার করার।  রাজ্য রাজনীতিতে মমতার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির অভিযোগ, মুসলিম ভোট ঝোলায় টানতে মমতা তোষণের রাজনীতি করেছেন। এই প্রচার চালিয়ে গত লোকসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু ভোটারকে প্রভাবিত করতে সফল হয়েছে বিজেপি। কখনও তৃণমূলনেত্রীকে দেখা যায়  মুসলিম মহিলাদের মত চাদর দিয়ে মাথা ঢাকতে, কখনও আবার নমাজ বা দোয়ার ভঙ্গি করতে, বক্তৃতার শেষে  ‘ইনশা আল্লা’বলতে । তৃণমূলনেত্রীর এই  সংখ্যালঘু তোষণ তুলে ধরেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর কাছে পৌঁছতে চাইছে বিজেপি । 

Advertisement

 

একুশের ভোটের নির্ণায়ক শক্তি?
একুশের ভোটের নির্ণায়ক শক্তি?

বাংলায় এবার মুসলিম ভোটে বিভাজন?
বাংলা ভোট এবার মেরুকরণের দিকে এগিয়ে চলেছে ক্রমশ। আট দফার ভোটে প্রথম দুই দফায় এরাজ্যে আদিবাসী ভোট ছিল মূল ফ্যাক্টর। কিন্তু তৃতীয় দফা থেকেই অষ্টম দফা পর্যন্ত এবার সংখ্যালঘু ভোটই হতে চলেছে মূল চালিকা শক্তি। তৃণমূল চাইছে  ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের পুরোটাই তাদের পক্ষে থাকুক। তার সঙ্গে টার্গেট করা হচ্ছে  ৭০ শতাংশ হিন্দু ভোটের ২০-২৫ শতাংশকে। বিজেপি আবার তার পাল্টা ৭০ শতাংশ হিন্দু ভোটকে একত্রিত হতে আবেদন জানাচ্ছে। এই অবস্থায় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রধান আব্বাস সিদ্দিকী  এবং মিম প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন।  ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখার লড়াই বাম আমলেও দেখা গিয়েছিল ।  দেশের মধ্যে প্রথম সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক দফতর গঠন থেকে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তৈরি হয়েছিল বাম জমানায় । দু'টি হজ হাউস থেকে উর্দু অ্যাকাডেমি তৈরির উদাহরণও রয়েছে বাম আমলেই । বাম জমানায় ভূমি সংস্কারের ফলে রাজ্যে জমি-প্রাপকদের ১৮  শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু জনতা, ইন্দিরা আবাস যোজনার প্রাপকদের ২২  শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের ৯.৭  শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের,এসএসকে শিক্ষকদের ৩৭  শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদের ১৮ শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু ।  কিন্তু, বাম নেতাদের 'দূরদর্শীতার' অভাবের জন্য বিষয়টি তেমন ভাবে প্রচার পায়নি। একুশের ভোটে কিন্তু তৃণমূলের সেই ভোটব্যাঙ্কেই বিভাজনের ছায়া দেখা যাচ্ছে। আর এই বিভাজন হলে সবচেয়ে উপকৃত হবে বিজেপি। 

তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক  মহাজোটের থাবা?
একুশের ভোটে কংগ্রেস-বাম-সিদ্দিকী একজোট হয়েছে মুসলিম ভোটকে সঙ্ঘবদ্ধ করার লক্ষ্যে। এরমধ্যে বাংলার একাধিক কেন্দ্রে মিম প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি ভোটপ্রচার ও প্রার্থী দেওয়া তৃণমূলনেত্রীর কপালের ভাজকে আরও শক্ত করেছে। রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে যে দাবি করা হয়েছিল তার কিছুই হয়নি। বস্তুত মমতা সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের কোনও উন্নয়ন হয়নি দাবি করছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী।  রাজ্যে মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে  তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন ওয়েইসিও। ফলে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক এবার ভেঙে খানখান হতে পারে। এই অবস্থায় ভোট প্রচারে গিয়ে এবার সংখ্যালঘুদের কাছে  সরাসরি মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ভাগ না করার আবেদন করছেন তৃণমূলনেত্রী। সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ধরাতে বিজেপিই আব্বাস ও ওয়েইসিকে কাজে লাগিয়েছে, তাঁদের প্রচুর টাকা দেওয়া হয়েছে এমন দাবিও করতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলনেত্রীকে।

বিজেপির সুচারু চাল
যদি এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটে বিভাজন হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে বিজেপি তাতে কোনও সন্দেহ নেই।  বিজেপি মূলত হিন্দুত্ববাদের উপর জোর দিয়েছে। আর সেই কারণেই মুসলমানদের কাছে তেমন ভাবে পৌঁছতে পারেনি। মুসলমান ভোটারদের নগণ্য সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে গেরুয়া শিবির। ফলে  মুসলিম ভোটের বিভাজনের দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। এরমধ্যেই গত মঙ্গলবার কোচবিহারের সভা থেকে সুচারু বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতার মুসলিমদের এককাট্টা করার বিষয়টিকে টেনে তুলে সরাসরি কিছু না বলেও হিন্দুদের একজোট হওয়ার মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন মোদী। তবে বিজেপি মানেই যে হিন্দুত্বাবাদীদের দল৷, এই তকমা ঘোচাতে কিন্তু বঙ্গভোটের ময়দানে তৎপর গেরুয়া শিবির৷ বিশেষ করে তিন তালাক রদের পর রাজ্যের মহিলা মুসলিম ভোটাররা পাখির চোখ মোদী-শাহদের। একুশের ভোটের আগে  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের লাগাতার দলে যোগদানের পাশাপাশি প্রার্থী তালিকায় একগুচ্ছ সংখ্যালঘু মুখ রাখা হয়েছে।  সাধারণত বিজেপি নেতাদের ভাষণে উপেক্ষিতই থাকে মুসলিম সমাজ। কিন্তু একুশের ভোট ময়দানে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের জন্য মোদী সরকার কী করেছে তার খতিয়ান তুলে ধরতে দেখা গিয়েছে স্বয়ং বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে। মুসলিমদের দুরবস্থার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি কাঠগড়ায় তোলেন দিলীপবাবু। একুশের ভোটে ‘মুসলিম-বিরোধী’ তকমা মুছে ফেলা বিজেপির কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সেই কাজে যে তারা অনেকটা সফল হয়েছে  তার প্রমাণ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে । এ রাজ্যে মুসলিম ভোটার বেশি এমন কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটসংখ্যা অনেকটাই প্রমাণ করেছে, মুসলিমরাও বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন । 

Advertisement

 

সংখ্যালঘু ভোটের দিকে নজর এখন বিজেপিরও

 

সংখ্যালঘুরা কী ভাবছেন?
সংখ্যালঘুদের ভোট সর্বদা পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এসেছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে বাংলায় ২.৪৬ কোটি মুসলমান রয়েছে।  এর মধ্যে ভোটার প্রায় ২ কোটি। বাংলার তিনটি জেলায়- মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হল মুসলিম। এই তিনটি জেলা বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত। সংখ্যালঘু ভোট রাজ্যের প্রায় ১০০ থেকে ১২৫ আসনে নির্ণায়ক শক্তি। এর মধ্যে ৪৩টি অবস্থিত ওই তিনটি জেলায়। বারবার ভোট দিলেও মমতা সরকারের কাজে যে সংখ্যালঘুরা সন্তুষ্ট, এমনটা নয়। বছরের পর বছর ধরে, মমতা মৌলবি ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দিয়েছেন, কিন্তু, আপামর মুসলিম সমাজের জন্য তেমন কিছুই করেননি, এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের মুসলমানদের একটা বড় অংশ। শিক্ষার অভাব, কাজের অভাব, জীবনযাত্রার অনুন্নত মান, সামাজিক ন্যায়বিচার, তাদের আকাঙ্ক্ষা না মেটা, নীতি নির্ধারণে মুসলিম প্রতিনিধিত্বের অভাবের মতো বিষয়গুলি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের অভাবে তারা শুধু হতাশই নন, বেশ ক্ষুব্ধ। তবে তা সত্ত্বেও মুসলমান সম্প্রদায় এবারের ভোটেও তৃণমূল কংগ্রেসকেই ভোট দিতে পারে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বিজেপির বিকল্প হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কার্যকরি বলে মনে করছেন তাঁরা। তৃণমূলের কাছ থেকে প্রত্যাশা মতো কাজ না পাওয়ায় তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ ঠিকই কিন্তু, তারপরেও তাদের মনে কাজ করছে এনআরসির ভয়। বিজেপি সরকারে এলে অসমের মতো বন্দি শিবির বা আরও খারাপ কিছু পরিণতি হবে, বলে তাদের আশঙ্কা। আর সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের বাঁচাবেন, এমনটাই মনে করছিল মুসলিম সমাজের একাংশ।  বিশ্লেষকদের মতে এই অবস্থায় এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের মত কিন্তু নির্ণায়ক হতে পারে।

 

Advertisement