scorecardresearch
 

মমতাকে চ্যালেঞ্জ করে হয়েছিলেন জয়ী, এবার গড় রাখতে পারবেন পরেশ?

পরেশ পাল। বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম এক আলোচিত নাম। হাইপ্রফাইল না হলেও তাঁকে নিয়ে আলোচনার থেকে বিতর্কই বেশি হয়। এমনকি সহকর্মীরে সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও সেটাও বাদ নেই। তবে বেলেঘাটা এলাকা বলতেই এখনও একমেবদ্বীতিয়ম তিনি। গত দু'বারের বিধায়ক। এবারও তার ওপর ভরসা রেখেছেন তৃণমূলনেত্রী। ২০২১-এ বিধানসভায় জিতে হ্যাটট্রিক করবেন পরেশ রাজনৈতিক পরিসংখ্যান কিন্তু তেমনটাই বলছে। গত লোকসভা ভোটেও বেলেঘাটা এলাকা থেকে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে একুশে বিজেপির সোনার বাংলার স্বপ্নে বেলেঘাটাতে ঘাসফুলের ওপর পদ্ম ভারী পড়বে নাতো সেই আশঙ্কা কিন্তু একাবেরই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

Advertisement
Paresh Pal Paresh Pal
হাইলাইটস
  • নিজের অদ্ভূত সব কাজের জন্য বরাবরি আলোচনায় থেকেছেন
  • পরেশ পালই সম্ভবত ভারতে প্রথম গণ বিবাহের ধারণাটা চালু করেন
  • TMC নেতা হয়েও রাম-হনুমান প্রীতি!

পরেশ পাল। বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম এক আলোচিত নাম। হাইপ্রফাইল না হলেও  তাঁকে নিয়ে আলোচনার থেকে  বিতর্কই বেশি হয়। এমনকি সহকর্মীরে সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও সেটাও বাদ নেই। তবে বেলেঘাটা এলাকা বলতেই এখনও একমেবদ্বীতিয়ম তিনি। গত দু'বারের বিধায়ক। এবারও তার ওপর ভরসা রেখেছেন তৃণমূলনেত্রী। ২০২১-এ বিধানসভায় জিতে  হ্যাটট্রিক করবেন পরেশ রাজনৈতিক পরিসংখ্যান কিন্তু তেমনটাই বলছে। গত লোকসভা ভোটেও বেলেঘাটা এলাকা থেকে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে একুশে বিজেপির সোনার বাংলার স্বপ্নে বেলেঘাটাতে ঘাসফুলের ওপর পদ্ম ভারী পড়বে নাতো সেই আশঙ্কা কিন্তু একাবেরই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বেলেঘাটা বিধানসভার পরিচিতি
 ১৬৪ নম্বর বেলেঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রটি  কলকাতা পুরসভার ২৮ , ২৯ , ৩০ ,৩৩ , ৩৪ , ৩৫ ,৩৬ , ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড গুলিকে নিয়ে গঠিত। ২০০৬ সালে এই কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় জয়লাভ করেছিলেন। তবে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী পরেশ পাল জয়লাভ করেন। সেবার পরেশ পালের  প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯৩ হাজার ১৮৫। পরেশ পাল জয়লাভ করেছিলেন ৩১ হাজার ৬৮৮ ভোটের ব্যবধানে। ২০১৬ সালেও এই বিধানসভায় ফুটেছিল ঘাসফুল। ভারতীর কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) রাজীব বিশ্বাসকে হারিয়েছিলেন পরেশ পাল। তবে সেবার জয়ের ব্যবধানটা কমে হয়েছিল ২৬,১৭৯। এবারও এই কেন্দ্র বামেরা দাঁড় করিয়েছে রাজীব বিশ্বাসকে। বিজেপির হয়ে ময়দানে নেমেছেন কাশীনাথ বিশ্বাস। গতবার এই কেন্দ্রে বিজেপির ভোট ছিল ৭.১৭ শতাংশ। গত লোকসভা ভোটের নিরিখেও বেলেঘাটায় এগিয়ে ঘাসফুল। তবে এবার বামেদের বদলে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি।

লোকসভায় এগিয়ে BJP, খেলা ঘোরাবেন অজিত পাঁজার পুত্রবধূ?

বেলেঘাটায় পরেশ পাল কতটা ফ্যাক্টর
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ৪ বারের বিধায়ক পরেশ পাল। বেলেঘাটার আগে ২ বার মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন।  প্রথমে কংগ্রেস দলের হয়ে বিধানসভার সদস্য হন ১৯৯৬ সালে। পরের বারও তিনি জয়ী হন। মাঝের পাঁচ বছর বাদ দিয়ে ২০১১ সাল থেকে পরপর দুবার বেলেঘাটার এমএলএ তিনি। দেশ ভাগের  এক বছর আগে জন্ম নেওয়া পরেশ পালের পরিবার উদ্বাস্তু হিসাবে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে এসেছিল। সেই থেকেই পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় পরেশের বাস। বেড়ে ওঠা, রাজনীতি - সবকিছুই ওই এলাকা ঘিরেই।

Advertisement

 

 

পরেশের RSP যোগ থেকে মমতা বিরোধিতা
জীবনের শুরুতে  কংগ্রেসি ঘরানার রাজনীতি করলেও একেবারে ছোটবেলা থেকে তারঁ বেড়ে ওঠা  বামপন্থী দল আরএসপি-র নেতা মাখন পালের কাছে। শোনা যায়, আরএসপি-র মাখন পালকে নিজের বাবার মতো মনে করতেন তিনি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল গঠনের পর আরও অন্যান্য কংগ্রেসীদের মত তিনিও দলবদল করেন।  তবে একবার তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাময়িকভাবে বেরিয়ে গিয়ে পৌরসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  অফিসিয়াল প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে এনেছিলেন পরেশ পাল। তারপরে যদিও তৃণমূল কংগ্রেসেই ফিরে যান পরেশ।

 

৭ বার কাউন্সিলর হয়েও প্রথমবার বিধানসভা ভোটে, কেমন লড়বেন ববির ডেপুটি?

বিধায়কের অদ্ভূত সব কাণ্ড
বিধানসভায় কোনও দিন পরেশ পালকে কোনও বক্তৃতা দিতে বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করতে তেমন ভাবে দেখা যায়নি বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তবে নিজের এলাকায় বরাবরই তিনি অ্যাকটিভ। নানারকম অদ্ভুত আইডিয়াও আসে তাঁর মাথা থেকে। বামফ্রন্টের প্রতীকী মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবার ব্রিগেড ময়দানে। সেই যে বিরাট ঘণ্টা বানানো হয়েছিল, সেটা নাকি  ছিল পরেশ পালের আইডিয়া। শোনা যায় একবার কলকাতায় মশাবাহিত রোগ বাড়ছে বলে ধর্মতলায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাস্তায় বিশাল একটা মশারি টাঙ্গিয়ে দিয়েছিলেন। আরেকবার গরু-ছাগল নিয়ে গিয়ে পথ অবরোধ করেছিলেন। গত বছর কালীপুজোর উদ্বোধনে বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এসে নতুন এক বিতর্কও তৈরি করেছিলেন পরেশ। 

আলোচনায় তাঁর ইলিশ উৎসব ও গণ বিবাহ
শোনা যায় দেশ ভাগের পরে ভারতে চলে আসার পথেই পরেশ পালের  এক বোন হারিয়ে যান। সেই দুঃখ তিনি কোনদিন ভুলতে পারেননি। সেজন্যই অসহায়, দুস্থ মেয়েদের সাহায্য করার জন্য বহু বছর ধরে তার এলাকায় গণ বিবাহ আয়োজন করে আসছেন। পরেশ পালই সম্ভবত ভারতে প্রথম গণ বিবাহের ধারণাটা চালু করেন আজ থেকে  প্রায় ৪০ বছর আগে। এছাড়াও তাঁর আরেকটা বড় উদ্যোগ সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে একমাস ধরে সুভাষ মেলা করা। বর্ষার মরশুমে তাঁর ইলিশ উৎসবও যথেষ্ট আলোচনায় থাকে। এছাড়া বড় করে কালীপুজো ও দুর্গাপুজো তো আছেই।

 

 

লাকার মানুষের মার্কশিট
বেলেঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষজন বিধায়কের কাজে কতটা খুশি তার ওপরই নির্ভর করবে এই কেন্দ্রের নির্বাচনের ফলাফল।  স্থানীয়দের একাংশের দাবি জল ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। সমস্যার কথা সবসময় জিজ্ঞেস করেন এলাকার বিধায়ক।  বেলেঘাটা বিধানসভার বিধায়ক ৩৬৫ দিন সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। গণ বিবাহের ইতিবাচক দিকের কথাও রয়েছে স্থানীয়দের গলায়। এলাকার রিকশাচালক, বিধবা নারীদের নিয়ে গিয়ে ওই অনুষ্ঠানে বিয়ে দেওয়া হয়। পরেশ দল-ধর্ম নির্বিশেষে এলাকাবাসীর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, সেটা এলাকার অনেক বাসিন্দাই মনে করেন।

আলোর নিচে অন্ধকার
এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়  'ইতিবাচক' সামাজিক কাজের জন্য বেলেঘাটা-কাঁকুড়গাছি অঞ্চলের ধনী বাসিন্দাদের কাছ থেকে বড় রকমের চাঁদা আদায় করেন তিনি। পরেশ পাল দলমত নির্বিশেষে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বলে যে কথাটা চালু আছে, তাও নাকি অনেকটাই অসত্য এমনটাও দাবি আরেক পক্ষের। বহু বামপন্থী কর্মী পরেশ পালের সহচরদের অত্যাচারে হয় পাড়া ছাড়া হয়ে আছে অথবা রাজনীতি থেকে সরে গেছেন এমন উদাহরণও রয়েছে। 

Advertisement

পরেশের গেরুয়া ছোঁয়া
একদিকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে যখন নিয়মিত মেজাজ হারাতে দেখা যায়  তৃণমূলনেত্রী  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে,  তখন পরেশ পালের ‘রাম প্রীতি’ বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছিল রাজ্যের শাসক দলকে। বেলেঘাটা এলাকাতেই এই মূর্তিগুলি স্থাপন করেছিলেন পরেশ।  রাজ্য রাজনীতিতে স্পষ্ট মেরুকরণের আবহে সেই সময় পরেশ পালের এই কীর্তি আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।

২০১৯ এর লোকসভা ভোটের ফলের থেকে  শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস।  অন্যদিকে  বিজেপি দাবি করছে তারাই এবার সোনার বাংলা গড়বে। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে এবারের নির্বাচনে  কে জয় লাভ করবে তা বলা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পক্ষেও খুব মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ  ভোটের ফলাফল সবটাই নির্ভর করছে আম জনতার ওপরেই। এদিকে তৃণমূলের অন্দরেই প্রচলিত আছে একটা কথা, রাজনীতি হোক বা সামাজিক কাজকর্ম, চমক দেওয়াটাই পরেশ পালের  স্বভাব। তবে নিজের এলাকা নিয়ে  খুব সংগঠিত পরেশ পাল। এটা কিছুটা সম্ভবত তিনি  শিখেছেন  প্রয়াত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অজিত পাঁজার কাছ থেকে। তিনিও যেমন নিজের নির্বাচনী এলাকার খুঁটিনাটি তথ্য রাখতেন, পরেশও সেই ধারা মেনে চলেন । এটা ঠিক, দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও মন্ত্রীও যেমন হননি, তেমনই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও পাননি পরেশ পাল। এলাকার বাইরে বেরিয়ে রাজনীতি বা সামাজিক কাজ করতে কখনই খুব একটা দেখা যায় না পরেশ পালকে। তবে বেলেঘাটা অঞ্চলে  তার যথেষ্ট  প্রভাব রয়েছে। একুশের ভোটে সেই প্রভাব তিনি বজায় রাখতে পারেন কিনা এটাই অখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পরেশ পালের কাছে। 


 

Advertisement