scorecardresearch
 

লোকসভার নিরিখে এগিয়ে BJP, খেলা ঘোরাতে পারবেন অজিত পাঁজার পুত্রবধূ?

আট দফার বঙ্গ ভোটে একাবের শেষ দফায় ভোট রয়েছে উত্তর কলকাতার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে। যার মধ্যে অন্যতম শ্যামপুকুর। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, কলকাতার মধ্যে যে হাতেগোনা ক’টি কেন্দ্রে তৃণমূলের চাপ আছে ভোটবাক্সে, তার মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের নাম৷ যেখানে আবার তৃণমূলপ্রার্থী অজিতকুমার পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজা। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে এই আসন থেকে জিতেই বিধায়ক হয়েছেন পেশায় চিকিৎসক শশী পাঁজা। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফল সব হিসেব উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে। উত্তর কলকাতা তৃণমূলের দখলে থাকলেও বিধানসভা অনুযায়ী ফলে দেখা যাচ্ছে শ্যামপুকুর কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই লড়াইটা যে খুব একটা সোজা হতে যাচ্ছে না তা ভালই জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার অন্যতম এই সদস্যা।

Advertisement
অজিত পাঁজারা যোগ্য পুত্রবধূ শশী পাঁজা অজিত পাঁজারা যোগ্য পুত্রবধূ শশী পাঁজা
হাইলাইটস
  • অষ্টম দফায় ভোট উত্তর কলকাতার ৭টি আসনে
  • যার মধ্যে অন্যতম শ্যামপুকুর বিধানসভা
  • গত ২ বার ঘাসফুল ফুটলেও এবার কোন ফুল তা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে


আট দফার বঙ্গ ভোটে একাবের শেষ দফায় ভোট রয়েছে উত্তর কলকাতার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে। যার মধ্যে অন্যতম  শ্যামপুকুর। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, কলকাতার মধ্যে যে হাতেগোনা ক’টি কেন্দ্রে তৃণমূলের চাপ আছে ভোটবাক্সে, তার মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের নাম৷ যেখানে আবার তৃণমূলপ্রার্থী অজিতকুমার পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজা। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে এই আসন থেকে জিতেই বিধায়ক হয়েছেন পেশায় চিকিৎসক শশী পাঁজা। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফল সব হিসেব উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে। উত্তর কলকাতা তৃণমূলের দখলে থাকলেও বিধানসভা অনুযায়ী ফলে দেখা যাচ্ছে শ্যামপুকুর কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই লড়াইটা যে খুব একটা সোজা হতে যাচ্ছে না তা ভালই জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার অন্যতম এই সদস্যা। প্রবল গরম উপেক্ষা করে প্রচারের ময়দানে নেমে পড়েছেন তিনি। যেখানে গেরুয়া শিবিরের অধিকাংশ নেতা-নেত্রীকে দেখা যাচ্ছে গাড়িতে চড়ে ব়্যালি করতে সেখানে পায়ে হেঁটে জনসংযোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শশী। তারপরেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে হ্যাটট্রিক হবে তো?

 

করোনা বিধি মেনেই প্রচারের ময়দানে
করোনা বিধি মেনেই প্রচারের ময়দানে

শশীর রাজনীতিতে আসা
উত্তর কলকাতার ডাকসাঁইটে কংগ্রেস নেতা ছিলেন অজিত পাঁজা। ১৯৮৪ সাল থেকে টানা ৬বার উত্তর পূর্ব কলকাতা থেকে সাংসদ হয়ে নজির গড়েছিলেন তিনি। হয়েছিলেন কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রীও। পরবর্তী সময়ে মমতা তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করলে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন অজিতও। উত্তর কলকাতায় তাঁর জনভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও জায়গা নেই। সেই অজিত পাঁজারই পুত্রবধূ শশী পাঁজা। তবে রাজনীতির বাইরেও শশীর একটা পরিচয় রয়েছে। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। ড. শশী পাঁজার বাবা পি. ভি. কৃষ্ণাইহ (পিল্লালামারি তেনালি) ছিলেন হিন্দুস্তান মোটরসের চিফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তার সমগ্র কর্মজীবন অতিবাহিত করেছিলেন হিন্দমোটরে। শশীরও ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা সেখানেই। পরে  কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস করেন। তিনি আল্ট্রাসাউন্ড ও বন্ধ্যাত্ব নিয়ে স্পেশালাইজেশন করেছেন।  অজিতকুমার পাঁজার পুত্র ড. প্রসূন কুমার পাঁজাকে বিবাহ করেন শশী। ২০১০ সালে  প্রথমবার ড. শশী পাঁজা কলকাতা পৌরসংস্থার একজন পৌর-প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সেই সময় তিনি মহানাগরিক পরিষদে শিক্ষাবিভাগের দায়িত্ব পান। ২০১১ সালে  শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রথমবার নির্বাচিত হন।  ২০১৬ সালে ড. শশী পাঁজা দ্বিতীয়বারের জন্য জয়লাভ করেছিলেন শ্যামপুকুর থেকে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের মে মাসে তাঁকে সমাজকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Advertisement

 

শশীর প্রচারে জয়া বচ্চন
শশীর প্রচারে জয়া বচ্চন

স্থানীয়দের মার্কশিট
শ্বশুর ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।  পাঁচ দশকের বেশি রাজনৈতিক জীবন৷ তিনি বিধায়ক, রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সব দায়িত্বই সামলেছিলেন। এহেন ডাইসাইটে শ্বশুরের সঙ্গে শশীর তুলনা আসবে তা বলাই বাহুল্য।স্থানীয়দের দাবি, অজিত পাঁজার  জনসংযোগ একেবারেই ভোটকেন্দ্রিক ছিল না৷ সারা বছর ধরে তিনি এমন ভাবে মানুষের পাশে থাকতেন, যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেও তাঁকে এলাকাবাসী আপনই ভাবত৷ লালবাতি গাড়ি কখনও অন্তরায় হয়নি৷ ধর্মীয়, সামাজিক সব ধরনের অনুষ্ঠানে তিনি হাজির থাকতেন।  শশীও তাঁর যোগ্য পুত্রবধূ হয়ে উঠেছেন। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। নিজের বিধানসভা এলাকায় শশী পাঁজার কাজে সন্তুষ্ট এলাকার মানুষ। ভোট এলেই প্রতিশ্রুতির বন্যা জয়ের পর আর প্রার্থীকে দেখা যায় না এমনটা কিন্তু একদমই হয় না । রাজ্যের মন্ত্রী হওয়া সত্বেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন ১২ মাস তাঁর কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়। যখনই সমস্যা নিয়ে যাওয়া হয়েছে তিনি সমাধান করেছেন। 

৭ বার কাউন্সিলর হয়েও প্রথমবার বিধানসভা ভোটে, কেমন লড়বেন ববির ডেপুটি?

৪ দফায় ভোট পড়ল ৮০%, কতজন COVID রোগী দাঁড়ালেন লাইনে?

তারপরেও থাকছে প্রশ্ন
উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্ক, বিবেকানন্দ রোড, সিমলা স্ট্রিট, মধু রায় লেনের অলি গলি চষে প্রচার করে চলেছেন প্রয়াত মন্ত্রী অজিত পাঁজার পুত্রবধূ। বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে পৌঁছে যাচ্ছেন প্রতিটি বাড়ি। এই এলাকারই প্রাক্তন কাউন্সিলর ও মেয়র পারিষদ ছিলেন শশী পাঁজা। তাঁর ওয়ার্ডে উন্নয়নের কাজ হয়েছে যথেষ্ট। বিধায়ক থাকাকালীন সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বাগবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ছাত্র ছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তক বিতরণ, বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা প্রভৃতি জনমুখী পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন। নাগরিক সমস্যার সমাধান করেছেন দ্রুত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবার খতিয়ান তুলে ধরছেন। তারপরেও শশীর হ্যাটট্রিক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ এলাকার অবাঙালি ভোটব্যাঙ্ক। আর এর সঙ্গেই রয়েছে চোরাস্রোতে বইতে থাকা তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বও।

 

কাউন্সিলর হিসাবেও সুনাম ছিল
কাউন্সিলর হিসাবেও সুনাম ছিল

সাধন-শশী সম্পর্ক
 তৃণমূলের দুই মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে ও শশী পাঁজার গণ্ডগোল বহু পুরনো। উত্তর কলকাতায় দুই বিধায়কের অনুগামীদের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা লেগে থাকার খবরও পাওয়া যায়। তবে কেবল শশী নয়, সাধন পাণ্ডের সঙ্গে অজিত পাঁজার সম্পর্কও কোনও কালেই উষ্ণ ছিল না। পাশাপাশি শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে পুরসভার মোট ১১টি ওয়ার্ড রয়েছে৷ এর মধ্যে ১০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া ২০১৫ সালের পুরো ভোটের নিরিখে বাকি ৭, ৮, ৯, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২৪, ২৬– এই নটি ওয়ার্ডই তৃণমূলের অধীনে৷ যেটা একজন তৃণমূল প্রার্থীর কাছে স্বস্তির কথা৷ কিন্তু এখানে বরং উল্টোটাই৷  কারণ, ৭, ৮, ১০,১৭– এই চারটে ওয়ার্ডে শশী পাঁজার বিক্ষুব্ধের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এই ওয়ার্ডগুলিতেই অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ 

Advertisement

২০১৬ সালের নির্বাচনে  সর্বভারতীয় ফরওয়ার্ড ব্লক দলের প্রার্থী পিয়ালি পালকে শশী হারিয়েছিলেন ১৩,১৫৫ ভোটের ব্যবধানে। এবার শশী পাঁজার বিপরীতে লড়ছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থী জীবনকৃষ্ণ সাহা। আছেন বিজেপি প্রার্থী সন্দীপন বিশ্বাস। একুশের  নির্বাচনে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলার বুকে অভূতপূর্ব সাফল্যের পরই এই রাজ্যে পদ্ম  ফোটাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী। তারমধ্যে লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যানে এই কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির।  শ্যামপুকুর কেন্দ্রে রাহুল সিনহার ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মাও রয়েছে। সবমিলিয়ে খাস কলকাতার বুকে এই কেন্দ্রে গেরুয়া ঝড়ের স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই  শ্যামপুকুর কেন্দ্র নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে৷ উত্তর কলকাতায় এই কেন্দ্রটাই তৃণমূলের ভয়ের জায়গায় পরিণত হয়েছে৷ সেটা অজিত পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজারও বিলক্ষণ জানা৷  তাই শশী মুখে জয়ের ব্যাপারে যাই বলুক না, তিনি নিজেও চেনেন তাঁর ঘরশত্রু বিভীষণদের৷ কিন্তু ভোট একটা ফ্যাক্টর৷ যেখানে কাউকেই চটানো চলবে না৷ তাই নরমে-গরমে ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছেন শশী৷ সব মিলিয়ে এবারের ভোটে শ্যামপুকুরে শশীর লড়াই ঘরে-বাইরে দুই তরফেই।
 

Advertisement