নির্বাচনের বাকি এখনও মাস পাঁচেক। কিন্তু তার আগেই উত্তপ্ত বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ। চলতি সপ্তাহেই শিলিগুড়ির উত্তরকন্যা অভিযানে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের। সেই রেশ এখনও মেটেনি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে উলেনের দেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে এখনও আকচাআকচি চলছে। এর সঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলা ঘিরে গত দু'দিন ধরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে। তারওপর এবার হালিশহরে দলের এক বুথ সভাপতির খুনকে ঘিরে নতুন করে রাজ্যের দিকে নিশানা সাজাতে শুরু করেছে বিজেপি নেতৃত্ব।
জানা যাচ্ছে এদিন হালিশহরে গৃহসম্পর্ক অভিযান কর্মসূচিতে এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে যাচ্ছিলেন বিজেপিকর্মীরা। তাঁদের মধ্যে একদম হালিশহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈকত ভাওয়াল। বছর চল্লিশের সৈকত ছিলেন আরএসএসের কর্মকর্তা। তিনি ওই এলাকার বিজেপির বুথ সভাপতিও। অভিযোগ, বিকেল ৫টা থেকে ৫.৩০টার মধ্যে কয়েকজন দুষ্কৃতী সৈকত ও তাঁর সহকর্মীদের ঘিরে ধরে। তখনই বাঁশ, লাঠি, ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় সৈকতকে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
হালিশহর পুরসভার কর্মী সৈকতের মৃত্যুতে তৃণমূলের দিকেই অভিযোগের তির ভারতীয় জনতা পার্টির। এলাকার সাংসদ অর্জুন সিং দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন , “পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তৃণমূল। রাজনৈতিকভাবে না পেরে উঠেই এভাবে আক্রমণ করছে। তবে এভাবে মানুষকে আটকে রাখা যাবে না।”
এদিন দলীয় কর্মীর ওপর হামলার খবর পেয়েই হাসপাতালে পৌঁছন মুকুল পুত্র তথা বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। তিনি বলেন, পরিকল্পিত ভাবেই খুন করা হয়েছে সৈকত ভাওয়ালকে। এর যে বদলা হবে সেই হুঁশিয়ারিও দেন শুভ্রাংশু। বিধায়কের কথায়, "বদলা নিতে গিয়ে আরেক মায়ের কোল খালি করার কথা আমি বলব না। তবে এর বদলা হবেই।"বিজেপি নেতা মুকুল রায়ও নিজের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে বিজেপিকর্মীর খুনের ছবি তুলে ধরে তৃণমূল শাসনের নৃশংসতাকে কাঠগড়ায় তোলেন।
This time I would just let the visuals communicate the horror that TMC has unleashed. Saikat Bhawal, an ardent RSS karyakarta and resident of 6no. ward Halisahar, was killed today. Local MLA Subhranshu Roy rushed to the hospital.
— Mukul Roy (@MukulR_Official) December 12, 2020
Democracy is dead in West Bengal. #AarNoiAnnay pic.twitter.com/TwtHdMJVBK
যদিও তৃণমূলের তরফে সব অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। এরাজ্যে বার বার তাঁদের দলীয় কর্মীরা রাজনৈতিক হিংসার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করে চলেছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূল শাসনে শতাধিক বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন বলে দাবি নেতৃত্বের। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অরাজগতার অভিযোগ তুলেই এবার বাংলার ক্ষমতায় আসতে চাইছে পদ্মশিবির। এরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির শোচনীয়তা তুলে ধরতে শালিশহরে দলীয় কর্মী খুনের ঘটনাকে আগামী দিনে নিজেদের আন্দোলনে অন্যতম অস্ত্র করে তুলবে গেরুয়া শিবির, এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।