বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। কিন্তু গল ছাড়ার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। তিনি তৃণমূলেই আছেন বললেন জিতেন্দ্র। জানালেন, ‘‘দল ছাড়ার কথা বলে ভুল করেছিলাম। মন্তব্য প্রত্যাহার করছি। দলনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।’’ বৃহস্পতিবার পদত্যাগের পর কলকাতায় এসেছিলেন জিতেন্দ্র। শুক্রবার রাতে নিউ আলিপুরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠকের পর গলে বরফ। ভোলবদল করে জিতেন্দ্র জানিয়ে দেন তিনি তৃণমূলেই আছেন।
গত সোমবারই রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে আসানসোল পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের প্রধান এবং পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লেখেন। অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে আসানলোল পুরসভাকে৷ রাজ্যের জন্যই আসানসোল স্মার্ট সিটি হওয়ার সুযোগ হারিয়েছে ৷ শুভেন্দু অধ্যায় দেখে শিক্ষা নেওয়া তৃণমূল এরপর শুভেন্দুর মান ভাঙাতে ময়দানে নামে। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ঠিক হয় শুক্রবার জিতন্দ্রকে নিয়ে বৈঠক করবেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু তার আগেই বৃহস্পতিবার দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানান পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। বৃহস্পতিবার দল ছাড়ার আগে পুর প্রশাসকের পদ থেকেও ইস্তফাও দেন জিতেন্দ্র। বুধবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেন্দ্রর মান ভাঙাতে উত্তরবঙ্গ থেকে ফোন করেছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পানাগড়ে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হয়েছিলেন জিতেন্দ্র। তার আগে দলের জেলা সভাপতি হিসেবে তাঁর শেষ সভা এমনটাও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তিনি যে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন সেই আভাস মিলছিল। জিত্য়েন্দ্র পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দিকে একের পর এক তোপ দাগতে থাকেন। এমনকি পদত্যাগের দিনও শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে গলা ফাটান।
এর আগে শুভেন্দু অধিকারী বিক্ষুব্ধ হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সেই বৈঠকের ফল হয়েছিল শূন্য। পরের দিনই শুভেন্দু জবাব দিয়েছিলেন, 'মাফ করবেন'। তবে জিতেন্দ্র ক্ষেত্রে কিন্তু সফল হল ঘাসফুল শিবির। শুক্রবার রাতে নিউ আলিপুরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠক হয় জিতেন্দ্রর। সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরও। তাঁর পরেই জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘দল ছাড়ার কথা বলে ভুল করেছিলাম। মন্তব্য প্রত্যাহার করছি। দলনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।’’ জিতেন্দ্রর পাশে দাঁড়িয়ে অরূপ বিশ্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জিতেন্দ্র তিওয়ারি দলে ছিলেন। আছেন। থাকবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপির বিরুদ্ধে শেষ লড়াই লড়বেন।’’
এদিকে জিতেন্দ্র আসানসোলের পুর প্রশাসক-সহ তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর এদিনই জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে জবাবি চিঠি দিয়েছিলেনন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে গতকাল দল ছাড়লেও বিধায়ক পদ ছাড়েননি তিনি। ফিরহাদের চিঠি ছিল পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্রের উদ্দেশেই। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনার চিঠি পেয়েছি। চিঠির বক্তব্য আমাকে ভীষণ অবাক করেছে। কোন বাধ্যবাধকতা থেকে আপনাকে ওই চিঠি লিখতে হয়েছে, আমি জানতে খুবই আগ্রহী।’’
এদিকে দলত্যাগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জিতেন্দ্রর ভোলবদল নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। তৃণমূল ছাড়লেও তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার রাস্তা যে কন্টকময় তা ভালই বুঝতে পারছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। খোদ আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ই জিতেন্দ্রর গেরুয়া শিবিরে আসার বিপক্ষে ছিলেন। মুখ খুলেছিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালও। আর সেই কারণেই বাধ্য হয়ে ফের পুরনো দলেই জিতেন্দ্র ফিরলেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।