মদন মিত্র বঙ্গ রাজনীতির এক আলোচিত নাম। গতবার জেল থেকে কামারহাটি কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়িয়েও হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবারও সেই কেন্দ্রেই মদনকে ফের একবার প্রার্থী করেছেন তৃণমূলনেত্রী। গতবার সারদা মামলায় জেলে থাকা কারণে প্রচারের ময়দানে নামতে পারেননি। এমনকি মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী। তবে এবার সুদে-আসলে সেই অভাব পুশিয়ে দিচ্ছেন 'বাংলার ক্রাশ'। হ্যাঁ ঠিক এই নামেই ভোট পর্ব শুরুর আগে মদনকে সম্বোধন করেছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তখনও অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেননি সায়নী। আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীও হননি। তবে মহিলা মহলে মদনের জনপ্রিয়তা সুবিদিত। এবারের নির্বাচনে কখনও বলিউড থেকে তারকা এনে প্রচারে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন মদনবাবু। আবার কখনও তাঁর প্রচারে হাত নাড়তে হাজির হচ্ছেন নুসরতরা। তিনিই পারেন গেরুয়া ও সবুজ দুই বিরোধী পক্ষকে এক করে দিতে। দোলের দিনই তার প্রমাণ পেয়েছে বাংলা। মূলের কামারহাটির প্রার্থী মদন মিত্রের সঙ্গে জেপির তিন তারকা প্রার্থী- শ্রাবন্তী, তনুশ্রী ও পায়েল দোল খেলতে হাজির হয়েছিলেন গঙ্গাবক্ষে। যা নিয়ে ভোট বাংলায় কম বিতর্কও হয়নি। এহেন মদন মিত্রের সম্পত্তির পরিমান কত তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সবারই। চলুন দেখে নেওয়া যাক মমতা মন্ত্রিসভার প্রাক্তন মন্ত্রী মদনবাবু ঠিক কতটা ধনী।
কমিশনের কাছে হলফনামায় যা জানালেন মদন
গত ২৪ মার্ত কামারহাটি থেকে তৃণমূলপ্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন মদন মিত্র। সেই হলফানামায় রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী জানিয়েছেন-
তাঁর হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ ২৮ হাজার ৩৫৫ টাকা।
স্ত্রী অর্চনা দেবীর কাছে নগদ অর্থ রয়েছে ৭ হাজার ৫৫০ টাকা।
মদন মিত্রের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৪৯ লক্ষ টাকার বেশি। ২টি বাড়ি রয়েছে তাঁর নামে।
স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৫১ লক্ষ ১৯ হাজার ৬৬০ টাকা।
মদন মিত্রর কাছে রয়েছে ৭৫ গ্রাম সোনা। বাজার মূল্য ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা।
স্ত্রী অর্চনা মিত্রের কাছে রয়েছে ২৪৪ গ্রাম সোনা। যার মূল্য ৯ লক্ষ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা।
মদন মিত্রের কাছে রয়েছে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি
অর্চনা মিত্রের কাছে রয়েছে ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩২০ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি।
নির্বাচনী হলফনামায় মদন মিত্র জানিয়েছেন তাঁর ১ কেটি ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৯১ টাকা ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে।
স্ত্রীয়ের ব্যাঙ্কে রয়েছে ১৬ লক্ষ ৭২ হাজার ২৪৫ টাকা।
মদন মিত্রের জীবনবীমা পলিসি রয়েছে সাড়ে ৭ লাখ টাকার।
মদন মিত্রের স্ত্রীয়ের নামে বীমা করা রয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৭ টাকা।
হলফনামায় মদন মিত্র জানিয়েছেন তাঁর নিজের নামে কোনও গাড়ি নেই।
স্ত্রী অর্চনা মিত্রের নামে ২ টি গাড়ি রয়েছে। যার দাম ১২ লক্ষ ৮ হাজার টাকা।
২০১৯-২০ আর্থিক বছরে মদন মিত্রের মোট আয় ছিল ৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৭২ টাকা।
স্ত্রী অর্চনা মিত্রের আয় ছিল ৯০ হাজার ৩৩৬ টাকা।
গতবার জেলে থাকাকালীনও বেড়েছিল মদনের সম্পত্তি
প্রায় ২২ মাস জেলবন্দি ছিলেন মদন মিত্র। ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর সারদাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্রকে। জেল থেকেই নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি। তবে হলফনামা জমা দেওয়ার সময় দেখা গিয়েছিল জেলে থাকা অবস্থাতেও ১৮ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বেড়েছিল মদনের। যদিও ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মদন মিত্রের স্থাবর সম্পত্তির বাজারদর প্রায় ১০ লক্ষ টাকা কমে গিয়েছিল। তবে, স্থাবর সম্পত্তির বাজার দর কমলেও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছিল। ২০১১ সালের হলফনামায় স্ত্রীর নামে কোনও স্থাবর সম্পত্তি ছিল না বলে উল্লেখ করা করেছিলেন মদন। তবে ২০১৬ সালে প্রথমবার একটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেন তিনি। যদিও সেটা ২০০৪ সালের উপহার পাওয়া হিসাবে দেখানো হয়েছিল। হলফনামা অনুযায়ী, পোস্ট অফিস, একাধিক ব্যাঙ্কে জমা টাকা ও সোনাসহ তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৫২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯০৬ টাকা। আর স্ত্রীর ২৪ লক্ষ ২৮ হাজার ২৪৯ টাকা।
২০১১ সালে কতছিল মদনের সম্পত্তি?
২০১১ সালে মদন মিত্রের দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, একাধিক ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট, এনএসএস, সোনার গয়না মিলিয়ে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৬ টাকা। তাঁর স্ত্রী’র নামে ওই হলফনামায় ২২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার কথা উল্লেখ ছিল। অর্থাৎ গত দশ বছরে কামারহাটি তৃণমূল প্রার্থীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।