পুরোহিত ভাতা আদায় করতে প্রয়োজনে আন্দোলনে নেমে কলকাতাকে অবরুদ্ধ করে দেব। না কোনও বিরোধী দলের নেতা নন, শুক্রবার কামারপুকুরে ব্রাহ্মণদের এক অনুষ্ঠান থেকে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। যাকে নিয়ে এখন বেজায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। গতকালের গরম বার্তার পর শনিবার হাওড়ায় দলীয় কর্মসূচিও এড়িয়ে গেলেন রাজীব। হাওড়ায় তৃণমূল আয়োজিত বঙ্গ জননী অনুষ্ঠানে কথা দিয়েও আসেননি রাজীব। যা নিয়ে ডোমজুড়ের বিধায়কের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে এমনিতে তৃণমূল বিব্রত রয়েছে। নন্দীগ্রামের বিধায়কের দলত্যাগ এখন সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। শুভেন্দু পর্ব মিটতে না মিটতে লাইমলাইটে এসেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুভেন্দুর মতই গত কয়েকদিন হল শহরের গণ্ডি পেরিয়ে রাজ্যজুড়ে পড়ছে নানা পোস্টার। ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে তাহলে কি শুভেন্দুর সঙ্গে অস্তাচলে রাজীব সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে তৃণমূল শিবিরের অন্দরে। এরমধ্যেই শনিবার সকালে নবান্নের অদূরে রামরাজাতলায় রাজীব ও শুভেন্দুর একসঙ্গে পোস্টার নতুন করে হৃদকম্প বাড়িয়ে দিয়েছে ঘাসফুল শিবিরে। দলের প্রতি যে তাঁর অভিমান রয়েছে তা গত সপ্তাহেই প্রকাশ করেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, গতকাল পুরোহিতদের সভায় বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের পরে এবার তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়ে ফোন করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে যাবেন বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বস্তুত কামারপুকুরের অনুষ্ঠানে গতকাল রাজীবের মুখে ছিল 'যত মত, তত পথ' বুলি। যদিও রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের এই বাণীকে তিনি রাজনৈতিক ভাবে বলেননি বলেই দাবি করেছিলেন ডোমজুড়ের বিধায়ক। তবে তাঁর মুখে এই কথা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়ে গিয়েছিল জোর চর্চা। গত শনিবার হরিদেবপুরে একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন মমতা মন্ত্রীসভার অন্যতম অ্যাকটিভ এই সদস্য। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তারা স্তাবক বলে সামনের সারিতে। যখন মানুষ ভাল কাজ করতে আসে, তখন পিছন থেকে টেনে ধরে।’’ জনগণ পছন্দ করে না এমন কিছু মুখ দলের নেতৃত্বে রয়েছে বলেও সেদিন অভিযোগ করেন রাজীব। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যারা ঠান্ডা ঘরে বসে থাকে তারাই এখন নেতৃত্বের সামনের সারিতে।’’তবে এই প্রথম নয়। আমফান পরবর্তী দুর্নীতি নিয়েও এর আগে সরব হয়েছিলেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বলেছিলেন, ‘দলকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে শুধু চুনোপুঁটিকে ধরলেই হবে না, রাঘব বোয়ালদের ধরতে হবে। তা না হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।’ তবে শনিবারের 'বেসুরো' বক্তব্য নিয়ে রবিবার বনমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলেও এদিন উত্তর না দিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়েই গিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ডোমজুড়ের বিধায়ক চুপ থাকলেও তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে জোর জল্পনা-কল্পনা চলছে।