একুশের নির্বাচন শেষ। সবাই এখন অপেক্ষা করছে ২ মের জন্য। সেদিনই জানা যাবে বাংলার মসনদে আগামী ৫ বছর কাদের রাজত্ব চলবে। একুশের নির্বাচন এবার সব দিক থেকেই আলাদা। কেননা এত টাফ ফাইট গত কয়েক বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায়নি। বাংলা দখলে এবার মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বিজেপির ছোট-বড় নেতাকে। তবে এবারের নির্বাচন যতই হাইভোল্টেজ হোক না কেন সবার নজর ছিল একটা কেন্দ্রের দিকেই। আর তা হল নন্দীগ্রাম। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এই কেন্দ্র থেকে। আর তার বিরপীতে স্বয়ং প্রায় দুই দশকের সহযোগী শুভেন্দু অধিকারী। এই প্রস্টিজের লড়াইয়ে লড়াইয়ে কে জিতবেন তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। Exit Poll-এর হিসাবে নন্দীগ্রাম কার দখলে থাকবে তা আজতক বাংলার পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হল।
২০১৬ সালের পরিস্থিতি
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জিতেছিলেন নন্দীগ্রাম আসন থেকে। জয়ের ব্যবধান ছিল ৮১, ২৩০ ভোট। হারিয়েছিলেন সিপিআইএম প্রার্থী আব্দুল কবীর শেখকে। অন্যদিকে গতবার ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেছিলেন। তিনি হারিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সীকে। জিতেছিলেন ২৫, ৩০১ ভোটে। এবারের ভোটে কিন্তু নন্দীগ্রামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
এবার কোন দিকে হাওয়া?
গত ডিসেম্বরে দল ছেড়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তারপরেই জানুয়ারিতে নন্দীগ্রামে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ বছর পর নন্দীগ্রামে গিয়ে হঠাৎ করেই জনসভায় মমতা ঘোষণা করেন তিনি একুশের ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে থেকে লড়তে চান। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। কারণ নন্দীগ্রাম শুভেন্দু অধিকারীর গড় হিসাবেই পরিচিত। কোন সন্দেহ নেই বাংলার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানে সিঙ্গুরের মতই অবদান ছিল নন্দীগ্রামের। আর এই লড়াইয়ে মমতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন শুভেন্দু। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকেই জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর খাসতালুক বলা হয় নন্দীগ্রামকে। আর সেখানে দাঁড়িয়েই ভোট লড়ার ঘোষণা করেছিলেন মমতা। 'প্রেস্টিজ ফাইট'-এ পিছিয়ে আসনেনি শুভেন্দুও। তিনিও নন্দীগ্রাম থেকেই বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েছেন। চ্যালেঞ্জ করেছেন তৃণমূলনেত্রীকে ৫০ হাজার ভোটে হারাবেন। তারপর গড়িয়েছে অনেক জল। নন্দীগ্রামে মনোনয়ন জমা দিতে এসে আহত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর হুইল চেয়ারে করেই গোটা প্রচারপর্বে দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে মমতার চণ্ডীপাঠ, মন্দিরে-মন্দিরে মমতা-শুভেন্দুর পুজো। ভোটের দিন নন্দীগ্রামের বয়ালে অশান্তি। বুথের ভেতর তৃণমূলনেত্রীর বসে থাকা। রাজ্য পালকে ফোন। এবারের ভোটে নন্দীগ্রাম নিয়ে অনেক কিছু দেখেছে রাজ্য রাজনীতি। 'কাঁটে কি টক্করে' জিতবেন কে তা জানতে আপাতত ২ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে তার আগে তবে বিভিন্নি Exit Poll বলছে, কিছুটা হলেও পুরনো সঙ্গীর থেকে এগিয়ে রেয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ২৯২ টি আসনের ফল বেরলেও কলকাতা থেকে ১২৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে নন্দীগ্রামই যেন এবারের নির্বাচনের মূল ভরকেন্দ্র হতে চলেছে।