একুশের নির্বাচনে নন্দীগ্রাম এখন সকলের নজরে। কারণ একটাই, এখানের লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু নন্দীগ্রামে এই দুই হেভিওয়েটের মধ্যে এবার নজরকারা নাম বাম যুব সংগঠন ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া ওরফে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তারুণ্য ভরসা রেখে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আর নজর কেড়েছেন সেখানেই। জনপ্রিয়তায় তিনিও কিছু কম নন সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। মাঠে ময়দানেও বামেদের সব কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে। তাঁর লড়াকু নেত্রীসুলভ আচরণ তাকে অনেকটাই স্বাতন্ত্র্যতা দেয়।
রাজনৈতিক ইতিহাস বলে নন্দীগ্রাম বাংলার মেয়েকেই ভোট-আশীর্বাদ করে এসেছে। পরিবর্তনের রাজনীতিতে নয়া মোড়ও এনেছে। তবে কি এক 'বাংলার মেয়ে'র বিপক্ষে আরেক বাংলার মেয়েকে দিয়েই লড়াই জারি রাখতে চাইছে বামেরা? যদিও লড়াই যে সহজ নয়, একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু একদা 'লালদুর্গ' হিসেবে খ্যাত নন্দীগ্রামে মীনাক্ষী যে বামেদের ভরসার নাম তা বলাই বাহুল্য। নন্দীগ্রাম আসনের জন্য আইএসএফ এর কোন একজন প্রার্থীকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংযুক্ত মোর্চা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের নাম সেখানে প্রার্থীপদে দিতেই সিদ্ধান্ত বদল করে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট।
আরও পড়ুন, হুইলচেয়ারে বসেই প্রচার মমতার, ভোটারদের সহানুভূতি জিততে কি পারবেন?
তবে নন্দীগ্রামের মতো হাই প্রোফাইল কেন্দ্রে মীনাক্ষীকেই কেন বেছে নেওয়া হল, সে প্রশ্নের জবাবে বাম চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছিলেন যে জনপ্রিয় কেন্দ্র বলেই জনপ্রিয় নাম ও নিজেদের প্রার্থী সেখানে দিতে চেয়েছেন তাঁরা। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নতুন দল। ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা সেখানে করা গেলেও জনপ্রিয়তায় অনেকটাই পিছিয়ে। আর লড়াই যেখানে পপুলারিটির সেখানে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এই মুহুর্তে শীর্ষে।
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন যুব নেতা-নেত্রীদের লড়াইয়ের ময়দানে এগিয়ে আনতে কেন ১০ বছর সময় লেগে গেল বামেদের? আজতক বাংলাকে মীনাক্ষী বলেন, "কথা এটা নয়। ১০ বছর আগে মহমুদ সেলিম, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা যে কথা বলতেন আজকেও সেই কথাই বলা হচ্ছে। সেই নীতির কথা কোনও বদল আসেনি। তখনও বলেছিলাম কৃষকদের জমির অধিকার দিতে হবে, আজও বলছি। সংসদীয় রাজনীতিতে যারা জমি নিয়েছে তাদের সে জমি ফেরত দিতে হবে সে দাবি আজও করছি।"
আরও পড়ুন, মমতার পায়ে 'প্লাস্টার', বাংলার রাজনীতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী?
দাদা ও দিদির লড়াইয়ের মধ্যে তিনিও 'বোন' হিসেবে লড়াই ও প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। যদিও কোনও মন্দিরে পুজো দিয়ে নয়, বরং 'গণদেবতা'র আশীর্বাদ নিয়েই প্রচার শুরু করেছেন বাম নেত্রী। আসলে তিনিও কোথাও 'বাংলার মেয়ে' হয়ে উঠতে চাইছেন। একদিকে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র আরেকদিকে মমতা, এই দুইয়ের মাঝে মীনাক্ষি-ম্যাজিক হবে কি না তা সময় বলবে কিন্তু নির্বাচনী ইতিহাসে পট পরিবর্তনের বড় ময়দান এই নন্দীগ্রাম। অগ্নিদৃপ্ত কণ্ঠের যে ঝাঁঝ তাঁকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে, ভোট বাক্সে কি সেই রেশ পাবে বামেরা?