scorecardresearch
 

মতুয়া মহাতীর্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ- বাঘা যতীনের বাড়ি দর্শন! মোদীর ঢাকা সফরেও কি থাকছে বঙ্গ ভোটের আঁচ?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। চলতি বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। আর স্বাধীনতার এই অর্ধশতাব্দী উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা যাচ্ছেন।

Advertisement
PM Narendra Modi PM Narendra Modi
হাইলাইটস
  • হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলাদেশ যাচ্ছেন মোদী
  • করোনা পরবর্তী সময়ে এটাই প্রথম বিদেশ সফর প্রধানমন্ত্রীর
  • বঙ্গভোটের ময়দানে মোদীর এই ঢাকা সফর কি তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে?

বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এরাজ্যে এসে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাংলার বিভিন্ন মনীষীদের বাড়ি ঢু মারতে দেখা যাচ্ছে। অমিত শাহ থেকে জেপি নাড্ডা সকলেই বাঙালি আবেগকে উস্কে দিতে এই গেমপ্ল্যান নিয়েছেন। নেতাজি জয়ন্তীতে কয়েক ঘণ্টার জন্য কলকাতায় এসে প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও দেখা গিয়েছিল ভিক্টোরিয়ায় সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এনগিন রোডে সুভাষচন্দ্র বসুর বাসভবনে যেতে। এদিকে সামনেই প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর। শোনা যাচ্ছে এবার বাংলাদেশে সফরে গিয়ে মতুয়া মহাসংঘের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়ি যেতে পারেন মোদী, যা মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে মহাতীর্থে হিসাবেই পরিচিত। যদি তা হয় তবে বঙ্গভোটের আগে এটা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম মাস্টারস্ট্রোক হবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। যা নিয়ে ইতিমধ্যে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের হাফসেঞ্চুরিতে ঢাকায় মোদী
বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। চলতি বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। আর স্বাধীনতার এই অর্ধশতাব্দী উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা যাচ্ছেন। ওই দিনই ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে নতুন একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু হওয়ার কথা। উত্তরবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত এই নতুন ট্রেন চালু হচ্ছে। ঢাকা থেকে সেই ট্রেনের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করতে পারেন মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

হাসিনার আমন্ত্রণেই ঢাকা যাচ্ছেন মোদী
হাসিনার আমন্ত্রণেই ঢাকা যাচ্ছেন মোদী

বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ি দর্শনের পাশাপাশি যাবেন মতুয়া তীর্থে?
বাংলায় ৮ দফার বিধানসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামী ২৭ মার্চ। সূত্রের খবর, ওই দিনই  গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি দেখতে যাবেন মোদী। সেই সফরেই গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি ঘুরে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। ওড়াকান্দিতেই  জন্ম মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের। তাঁর বাণী ও নির্দেশাবলি পরবর্তীকালে প্রচার করেন পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের।   ওড়াকান্দিতে  প্রত্যন্ত  গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থানে একটি মন্দির রয়েছে, যা মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে মহা তীর্থস্থান হিসেবে গণ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়ে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরকে প্রণাম করে এলে বঙ্গ ভোটের আবহে মতুয়া-ভোটকে নিজেদের দিকে টানা গেরুয়া শিবিরের  পক্ষে আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের অনেকেই। যদিও পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধা থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেষপর্যন্ত সেখানে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এদেশের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী এখনও মহুয়া মহাতীর্থে যাননি। সেখানে নরেন্দ্র মোদী গেলে তা যে মতুয়া সম্প্রদায়ের ওপর আলাদা প্রভাব ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। শোনা যাচ্ছে মোদীর এই সফরের সঙ্গী হতে পারেন বনগাঁর সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির ছেলে শান্তনুও। 

Advertisement

 

মোদীর ঢাকা সফরের সঙ্গী হচ্ছেন শান্তনু ঠাকুর?
মোদীর ঢাকা সফরের সঙ্গী হচ্ছেন শান্তনু ঠাকুর?

 

মতুয়া ভোট টার্গেট বিজেপির
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। যার ফল হিসাবে গত লোকসভা ভোটে মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ ও রানাঘাট থেকে জিতেছে বিজেপি। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র নির্বাচিত হন হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি শান্তনু ঠাকুর। কিন্তু সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ার বিষয়ে আপাতত ভাটা পড়েছে। যার ফলে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে মতুয়াদের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে বেসুরো বাজছেন শান্তনু ঠাকুরও। সেই ক্ষোভ প্রশমন করতে স্বয়ং ঠাকুরনগরে আসতে হয়েছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তবে সেখানেও কোনও সদুত্তর দিয়ে যাননি শাহ। এই আবহে মতুয়া ভোট নিজের দিকে ফিরিয়ে আনতে ময়দানে নেমেছেন তৃণমূলনেত্রী স্বয়ং। তাই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের হাওয়ায় এবার মতুয়া ভোট ধরে রাখতে বাংলাদেশে মতুয়া-তীর্থ দর্শনে  যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সফরে থাকছেন রবীন্দ্রনাথ-বাঘা যতীনও?
বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়া যাবেন মোদী। পাশাপাশি ওড়াকান্দি মতুয়া মন্দির, বরিশালের শিকারপুরে সতীপীঠ হিসেবে পরিচিত সুগন্ধা শক্তিপীঠ, কুষ্ঠিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি এবং বিপ্লবী বাঘা যতীনের বসতবাড়ি দেখার ইচ্ছা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। বাকি জায়গাগুলোয় যাওয়া নিয়ে সমস্যা না থাকলেও, মুশকিল বেঁধেছে ওড়াকান্দিকে নিয়ে। বাংলাদেশ প্রশাসনের বক্তব্য, মোদীর মতো ভিভিআইপি-র সফরের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো সেখানে নেই। ঘিঞ্জি রাস্তায় গাড়ির কনভয় ঢুকবে না, কাছেপিঠে হেলিপ্যাড বানানোর জায়গাও অপ্রতুল। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরিকল্পনার ব্যাপারে বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।  উল্লেখ্য, এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে ভারতের হাই কমিশনার বীণা সিক্রি ওড়াকান্দিতে এলে মাত্রাছাড়া ভিড়ে বেশ কয়েক জন পদপিষ্ট হয়েছিলেন। সেই কারণেই মোদীর সফর নিয়ে আরও চিন্তিত হাসিনা সরকার। বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৫ কোটি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। মোদী যদি ঢাকা সফরে গিয়ে সত্যিই  মতুয়া মহাসংঘের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়ি যন তবে তা বঙ্গভোটের ময়দানে প্রভাব ফেলবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। 

২৭ মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন শুরু হচ্ছে। আট দফার ভোট শেষ হবে ২৯ এপ্রিল। এই সময়ে মোদীর ঢাকা সফর এবং হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়িতে যেতে চাওয়া বা রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি দেখতে চাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি কোথায় কোথায় যাচ্ছেন তা পুরোটাই করা হচ্ছে বেশ রাখঢাক করে।


 

Advertisement