পুরুলিয়া (Purulia) জেলার অন্যতম পরিচয় তার ছৌ নাচ। আরও সেই ছৌ নাচের প্রধান আকর্ষণই হল তার মুখোশ। ছোট বড় রং বেরঙের নানারকম মুখোশ দর্শদের কার্যত চোখ ফেরাতে দেয় না। অনেকে আবার শখ করে সেই মুখোশ বাড়িতেও সাজিয়ে রাখেন। আর পুরুলিয়ার সেই মুখোর তৈরির প্রধান কেন্দ্রই হল চড়িদা গ্রাম (Charida Village)। বাঘমুন্ডি বিধানসভার অন্তর্গত এই গ্রামের বহু মানুষ জড়িত মুখোশ শিল্পের সঙ্গে। মুখোশ তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। চলুন খোঁজ নেওয়া যাক কেমন আছেন সেই সব মুখোশ শিল্পীরা।
চড়িদা গ্রামের শিল্পীদের তৈরি মুখোশ পরেই দেশ বিদেশে দর্শকদের মন জয় করেন ছৌ নাচের শিল্পীরা। রোজগারও হয়। তাছাড়া লোকশিল্পীদের জন্য সরকারের যে ভাতা রয়েছে তারও সুবিধা পান তাঁরা। কিন্তু মুখোশ শিল্পীরা? না, তাঁরা কোনওরকম সরকারি ভাতা পান না। এই বিষয়ে চড়িদা গ্রামের এক মুখোশ শিল্পী অজয় সূত্রধর জানাচ্ছেন, এই নিয়ে এলাকার বিধায়ক, এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরেও কথা বলেছেন তাঁরা। কিন্তু আজও কোনওরকম ভাতা চালু হয়নি তাঁদের জন্য। একইসঙ্গে বিভিন্ন সরকারি মেলায় তাঁদের যে দৈনিক খোরাকি তার পরিমানও দীর্ঘদিন ধরে ৭৫ টাকাতেই আটকে রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে ভাতা এখনও চালু না হলেও ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর পুরুলিয়ার পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে বলেই জানালেন এই শিল্পী। যার সুবিধা পেয়েছেন তাঁরাও। এক্ষেত্রে ২০১১ সালের পর মুখোশ বিক্রির পরিমান বেড়েছে বলে জানান অজয়বাবু। শিল্পী জানাচ্ছেন মুখোশের দাম নির্ভর করে তার সাজসজ্জার ওপরে। এক্ষেত্রে মোটামুটি ৮০০ থেকে শুরু হয়ে ৪ - ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে মুখোশের দাম। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, একটা মুখোশ তৈরিতে অবদান থাকে গোটা পরিবারের। অর্থাৎ পরিবারের ছোট থেকে বড় সমস্ত সদস্য হাত লাগান মুখোশ তৈরির কাজে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের পরে যে সরকার গঠন হবে তাদের কাছে অজয় সূত্রধরের মতো মুখোশ শিল্পীদের আবেদন, চড়িদায় আরও বেশি করে পা পড়ুক পর্যটকদের, বিক্রি বাড়ুক মুখোশের। একইসঙ্গে নতুন সরকার তাঁদের ভাতার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করুক, এই আবেদনও রাখছেন চড়িদার মুখোশ শিল্পীরা।