scorecardresearch
 

পিঠার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে পুরুলিয়া! কেন আজও জনপ্রিয়?

পিঠের প্রচলন বাঙালি সমাজে অনেক প্রাচীন। যদিও এই পিঠা নানা দেশে নানা প্রান্তে বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়ে থাকে, কিন্তু পুরুলিয়ার পিঠার স্বাদ ও গন্ধে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই অক্ষুণ্ণ সেই প্রাচীনত্ব। পুরুলিয়াতে এই পিঠা বানানো হয় পৌষ মাসের শেষের চার দিন। চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত সেই দিনগুলি।

Advertisement
বাংলার খাদ্যসংস্কৃতিতে ঠিক কোন সময়ে এর উৎপত্তি তা জানা যায় না ইতিহাস থেকে। বাংলার খাদ্যসংস্কৃতিতে ঠিক কোন সময়ে এর উৎপত্তি তা জানা যায় না ইতিহাস থেকে।
হাইলাইটস
  • পিঠা ইতিহাসের সঙ্গে লালমাটির ইতিহাসের মেলবন্ধনটি ভারি চমৎকার
  • সকলে 'পিঠে-পুলি' বলি ঠিক, তবে খাঁটি কথাটি কিন্তু 'পিঠা'
  • পুরুলিয়াতে এই পিঠা বানানো হয় পৌষ মাসের শেষের চার দিন

পৌষের অঙ্গ হিসেবে 'পিঠেপুলি'কে না রাখলে রসনার আশ মেটে না কোনও বাঙালির। তবে পিঠার সঙ্গে পুরুলিয়াযোগ অনেকে ফুডিসদের কাছেই কিন্তু এখনও অজানা। পিঠা ইতিহাসের সঙ্গে লালমাটির ইতিহাসের মেলবন্ধনটিও ভারি চমৎকার। ভোটপর্বের ময়দানে সেই রসনায় খানিক জ্ঞানের গুড় মেশালে মন্দ কী! 

কথায় কথায় সকলে 'পিঠে-পুলি' বলি ঠিক, তবে খাঁটি কথাটি কিন্তু 'পিঠা'। এই শব্দটি এসেছে আসলে সংস্কৃত ‘পিষ্টক' শব্দ থেকে৷ যার আক্ষরিক অর্থ 'পিষ্ট'। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ থেকে জানা যায় যে চালের গুঁড়ো, ডাল বাটা, গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি জঠর তৃপ্তিকারী এই মিষ্টিকেই 'পিঠা' নাম দেওয়া হয়েছিল। পিঠার মূল উপাদানই হল ধান। বাংলার খাদ্যসংস্কৃতিতে ঠিক কোন সময়ে এর উৎপত্তি তা জানা যায় না ইতিহাস থেকে। যদিও কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থগুলিতে 'পিষ্টক' শব্দের উল্লেখ রয়েছে।     

তাই এক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতে পারে পিঠার প্রচলন বাঙালি সমাজে অনেক প্রাচীন। যদিও এই পিঠা নানা দেশে নানা প্রান্তে বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়ে থাকে, কিন্তু পুরুলিয়ার পিঠার স্বাদ ও গন্ধে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই অক্ষুণ্ণ সেই প্রাচীনত্ব। পুরুলিয়াতে এই পিঠা বানানো হয় পৌষ মাসের শেষের চার দিন। চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত সেই দিনগুলি।

টুসু পরবে এই পিঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কুরমি জাতিদের কাছে। কুরমালি ভাষার বেশ কিছু গানে এই পিঠার উল্লেখ পাওয়া যায়। চাঁউড়ির দিনে বাড়ির মহিলারা গোবরমাটি দিয়ে ঘর পরিষ্কার করে চালের গুঁড়ো তৈরি করেন। পরম্পরা মেনে এখনও ঢেঁকিতেই ছাঁটা হয় চাল। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরী করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়রা এই পিঠেকে 'গড়গইড়্যা পিঠা' বা 'বাঁকা পিঠা', অনেকে 'উধি পিঠা' ও 'পুর পিঠা'ও বলে থাকেন। 

Advertisement

এর প্রাচীনত্বর কিছুটা পাওয়া যায় চৈতন্যচরিতামৃতেও। আর এই 'পুর পিঠা' থেকেই পুলি-পিঠে কথাটি আসে। পুলি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পোলিকা' থেকে। নারকেলের পুর দেওয়া পিঠাকেই পুলি পিঠে বলা হয়েছে হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় বঙ্গীয় শব্দকোষ বইয়ে। এমনকী হাল আমলের যে 'চিকেন পাটিসাপ্টা' কনসেপ্ট সেও কিন্তু পুরুলিয়ার কুড়মিদের থেকে পাওয়া। টুসু বিদায়ের দিন 'মাস পিঠা' বা 'মাংস পিঠা' বানিয়ে থাকেন এই জাতির লোকেরা। নির্বাচনী বাংলায় পুরুলিয়ার গুরুত্ব তাই কেবল ভোটে নয়, রসনার ইতিহাসেও।

Advertisement