২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় রোজই কোথাও না কোথাও সভা-রোড শো করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। একাধিক সভায় অমিত শাহ-কে বলতে শোনা গিয়েছে, বিজেপি ২০০-র বেশি আসন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করবে। ভোট শেষ হওয়ার পর বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল, ত্রিশঙ্কু হতে পারে বিধানসভার ফল। তবে প্রায় ৫ মাস আগে আসে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তিন অংকের ঘরে পৌঁছবে না বিজেপি।
অনেকেই তাঁর প্রেডিকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কটাক্ষ করেছেন অনেকে। কিন্তু নিজের বক্তব্যে অনড় থেকেছেন পিকে। নির্বাচনের ফল প্রায় যখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সে সময় প্রশান্ত কিশোরই যে ঠিক কথা বলেছিলেন তা স্বীকার না করে কারও কাছে উপায় নেই। অমিত শাহ কোন ভিত্তিতে ২০০ আসনে জয়লাভ করার কথা বলেছিলেন তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন করার দাবি জানালেন প্রশান্ত কিশোর। ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত বলেন, 'অমিত শাহকে এ বার প্রশ্ন করা হোক, তিনি কোন ভিত্তিতে বলেছিলেন বিজেপি ২০০-র বেশি আসন পাবে?' সাক্ষাৎকারে রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দেন পিকে।
For all the hype AMPLIFIED by a section of supportive media, in reality BJP will struggle to CROSS DOUBLE DIGITS in #WestBengal
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) December 21, 2020
PS: Please save this tweet and if BJP does any better I must quit this space!
প্রশান্ত কিশোর নির্বাচনী কৌশলবিদ হিসাবে ২০১৪ সাল থেকে আলোচনায় রয়েছেন। বিহারে নীতীশ কুমারের সাথে কাজ করার সময় পিকে ব্র্যান্ড সকলের নজর কাজে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পিকে ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য নির্বাচনের কৌশল তৈরি করেছিল। যদিও পরে বিজেপির সাথে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে প্রশান্ত কিশোরকে ভোট কৌশলী হিসাবে নিয়ে আসে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । ইতিমধ্যে, তৃণমূলের অনেক নেতা পিকে কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, পিকে-র দাবি ছিল, বিজেপির আসন সংখ্যা এবার তিন অঙ্কে পৌঁছবে না। নিজের ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিলেন পিকে। সেই সঙ্গে এটাও বলতে হবে তৃতীয় বার রাজ্যে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পেছনে পিকের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বাংলায় তৃণমূলের দায়িত্ব নিয়ে আসার পরই জনমানসে জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি যাচাই করতে 'দিদি-কে বলো' নামক প্রচার কর্মসূচি নিয়েছিলেন পিকে।
এই এক কর্মসূচি দিয়ে তিনি বাংলায় দিদি অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা, তাঁর দলের বিধায়কদের জনমানসে ভাবমূর্তি এবং জনসংযোগ করতে সফল হয়েছিলেন। প্রশান্ত কিশোর একাধিক কর্মসূচি এনছিলেন, যেমন ‘বাংলার গর্ব মমতা' এবং ‘বাংলার যুবশক্তি'। এরপর পশ্চাৎপদ শ্রেণির প্রবীণদের মাসিক ভাতা শুরু, পরে সাধারণ জাতির মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশের লোকদের জন্যও তা চালু করা, সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প নেওয়া এবং কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী কিষাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেওয়া-সহ প্রভূতি প্রকল্প নেওয়া হয়। মমতা সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প ইতিমধ্যে দারুণ হিট। সেই সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের স্লোগান 'বাংলা নিজের মেয়েকেই চাইছে' এবারের ভোটে দারুণ সফল সেটা ফলাফলই বলে দিচ্ছে।