'ভুটান পাহাড় থেকে দল বেঁধে মেঘ উড়ে এসে স্বর্গছেঁড়া চা বাগানের উপরে বৃষ্টি ঝরাতো।' ডুয়ার্সে বৃষ্টির এমন বর্ণনা সমরেশ মজুমদার ছাড়া ভাবা যায় না। চতুর্থ দফায় উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করছে ভোট। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের (West Bengal Election 2021) তপ্ত, রক্তাক্ত আবহে ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক নমনীয়তা বড়ই বেমানান। তবু গণতন্ত্রের উত্সব!
দুয়ারে ভুটান
চতুর্থ দফায় ভোট রয়েছে নতুন জেলা আলিপুরদুয়ারে (Alipurduar)। উত্তরবঙ্গে দুয়ার মানেই ওপারে ভুটান। নতুন দেশ। রাজনীতির কচকচানি, দলবদল, মহিলা ভোটার, পুরুষ ভোটার, সংখ্যালঘু-- এসবের মধ্যেও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির একটি নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। যা অত্যন্ত আকর্ষণীয় তো বটেই, একই সঙ্গে মন ভাল করাও। তাই ভোটের আলিপুরদুয়ারে একটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক। সেটি হল, আলিপুরদুয়ার নামটিই কেন? কলকাতাতেও একটি আলিপুর রয়েছে।
আলিপুরদুয়ার জেলা
২০১৪ সালের ২৫ জুন জলপাইগুড়ি জেলা থেকে আলিপুরদুয়ারকে আলাদা করে আলিপুরদুয়ার পৃথক জেলা তৈরি করা হয়। ছটি ব্লক, আলিপুরদুয়ার পুরসভা, মাদারিহাট-বীরপাড়া, আলিপুরদুয়ার-১, আলিপুরদুয়ার-২, ফালাকাটা ও কুমারগ্রাম। পূর্ব দিকে অসম, দক্ষিণে কোচবিহার ও উত্তর দিকে ভুটান।
দ্বিতীয় অ্যাংলো-ভুটান যুদ্ধ ও আলিপুরদুয়ারের সৃষ্টি
সালটা ১৮৬৫। দ্বিতীয় অ্যাংলো-ভুটান যুদ্ধের সময়। এই যুদ্ধের পরে সিঞ্চুলা চুক্তি অনুযায়ী, ১১টি বেঙ্গল ডুয়ার্স ব্রিটিশদের দখলে যায়। ওই সময় কর্নেল হেদায়েত আলি খান কালজানি নদীর তীরে সেনাঘাঁটিতে কম্যান্ডর ছিলেন। অবসরের পরে বক্সা দুয়ার অঞ্চলটি লিজ হিসেবে হেদায়েত আলি খান পেয়েছিলেন।
সেই কর্নেল হেদায়েত আলি খানের নাম অনুসারেই, জায়গাটির নাম হয় আলিপুরদুয়ার। প্রথমে ছিল আলিপুর। অর্থাত্ আলির পুর বা শহর। তারপর দেখা যায়, কলকাতাতেও তো আলিপুর আছে। ওদিকে ভুটানের দুয়ার। তাই আলিপুরের সঙ্গে দুয়ার নামটিও জুড়ে দেওয়া হয়। ডুয়ার্স থেকেই মূলত দুয়ার শব্দটি নেওয়া হয়। ভুটানের মানুষ সেই সময় কিছু গিরিপথ ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করতেন। তাঁরা সেগুলিকে Door বলতেন। অর্থাত্ দরজা। পরে তা-ই হয়ে যায় লোকমুখে দুয়ার। ভুটান থেকে ভারতে প্রবেশের যে ১৮টি পথ আছে, তার মধ্যে ৬টি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বাকিগুলি অসমে।
আলিপুরদুয়ারে একাধিক আদিবাসী জনজাতির বসবাস। রয়েছেন রাজবংশী, রাভা, মেচ, সাঁওতাল, মদেসিয়া, বোড়ো, টোটো ও ওরাঁও।