গত মে মাসে রাজ্যে নতুন সরকার গঠন হয়েছে। আর তারপর থেকেই ঘুরে গিয়েছে খেলা। বলতে গেলে মুকুল রায়ের দলবদলের পর থেকেই বিজেপি শিবিরে ভাঙন শুরু হয়েছে। মুকুলের পর আরও তিন বিধায়ক বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস ও কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায় নাম লেখান তৃণমূলে। তবে এই চারজনের ক্ষেত্রেই তৃণমূলে ফেরা ছিল ঘর ওয়াপসি। সেক্ষেত্রে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে এই প্রথম তৃণমূলে গেলেন। ইতিমধ্যে গেরুয়া শিবিরের বহু নেতা-বিধায়ক তৃণমূলে ফিরতে মুখিয়ে আছেন বলেই শোনা যাচ্ছে। । বাবুলের তৃণমূলে যোগদানের ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই দলবদলের ইঙ্গিত দিয়ে সুর চড়িয়েছেন রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক। কৃষ্ণ কল্যাণী। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির সোশ্যাল মিডিয়ার বার্তা নিয়েও জল্পনা চলছে। পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডলও দাবি করছেন, তিনি সবসময় তৃণমূলেই ছিলেন। এই আবহে ক্রমেই ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করে চলেছে জোড়াফুল শিবির। তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করছে এক বছরের মধ্যেই প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা হারাবে বিজেপি। এখানেই থেমে থাকছেন না তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। অনেকেতো একধাপ এগিয়ে দাবি করে বসছেন, সেই দলে নাকি থাকবেন দিলীপ ঘোষ, শমীর ভট্টাচার্যের মত পোড়খাওয়া গেরুয়া শিবিরের নেতারও।
কী বলছেন ফিরহাদ?
বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলে যোগদানের প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁকে, 'পলিটিক্যাল ট্যুরিস্ট' বলে কটাক্ষ করেন। তারপরেই বাবুলের হয়ে মাঠে নামেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদ এই প্রসঙ্গে দিলীপকে পাল্টা বলেন, "ট্য়ুরিস্ট পলিটিশিয়ানকে নিয়ে আসানসোলে দুবার জিতেছিল, ট্য়ুরিস্ট পলিটিশিয়ানকে দিয়ে টালিগঞ্জে জেতার চেষ্টা করেছিল, ট্যুরিস্ট পলিটিশানকে দিয়েই বাংলায় নির্বাচনী প্রচার। শুধু বাবুল সুপ্রিয় নয়, বেশ কিছু বড় নাম বিজেপি ছেড়ে আগামী দিনে চলে আসবেন তৃণমূলে। যিনি হই হই করছেন, তিনিও মন্ত্রিত্ব পাননি, পা বাড়িয়ে রয়েছেন। আমরা নিচ্ছি না। দ্বন্দের এখানে স্থান নেই।" ফিরহাদ কাকে ইঙ্গিত করতে চাইছেন সহজেই বোঝা যাচ্ছে।
ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য জ্যোতিপ্রিয়রও
উত্তর চব্বিশ পরগনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করেছেন। রাজ্যের মন্ত্রী তথা হাবড়ার তৃণমূল বিধায়ক দাবি করেছেন আগামী এক বছরর মধ্যে বিধানসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা হারাবে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের নেতারা একে একে নাম লেখাবেন তৃণমূলে। বাবুল সুপ্রিয়র দলবদল প্রসঙ্গে রাজ্যের বনমন্ত্রী বলেছেন "বাবুল সুপ্রিয় কে স্বাগত। অত্যন্ত দক্ষ ছেলে। আমাদের দলে কাজ করার স্বাধীনতা আছে, তাই তৃণমূলে যোগদান করলো।" পাশাপাশি জ্যোতিপ্রিয়র মন্তব্য, "বিজেপির সব লিডার ঢুকে যাবে তৃণমূলে। দিলীপ ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্য এর মতো নেতারাও বিজেপি তে থাকবেন না। গুটি গুটি পায়ে নাম লেখাবেন।"
অভিষেক যা বলেছিলেন
তৃণমূলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েই অভিষেক বলেছিলেন, 'যাঁরা হেরেছেন তাঁরাই শুধু নন, বিজেপির হয়ে জিতে বিধায়ক হয়েছেন, এমন অনেকে দলে আসতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্ত ওয়ার্কিং কমিটির হাতে ছেড়েছেন। পরবর্তী মিটিংয়ে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।'
বাম আমলে একসময় বিরোধীদের অস্তিত্ব তেমন জোড়ালো ছিল না। বাংলার ইতিহাস বদলাতে দীর্ঘ লড়াই লড়তে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ২০১১ সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দল থেকে তৃণমূলে যোগদানের পর্ব চলছে গত ১০ বছর ধরে। রাজ্যে কার্যত বাম ও কংগ্রেসের অস্তিত্ব আর তেমন ভাবে নেই। আশা জাগিয়েও ব্যর্থ বিজেপি। ২০২৪ সালে যে তেমন কোনও যুগান্তকারী ফল এই রাজ্যে গেরুয়া শিবির করতে পারবে তেমন আশাও দেখছে না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল। এই আবহে বিজেপি ছেড়ে তৃমমূলে যাওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের সবস্তরেই। তাই আগামী একবছরের মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দলের অস্তিত্ব কতটা থাকবে? তাই নিয়েই প্রশ্ন তোলা শুরু করেছে তৃণমূল শিবির।