২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নয়, পিছিয়ে যেতে হবে ঠিক ৬ বছর। সেবারি প্রথম বাবুল সুপ্রিয়র নামে উঠেছিল দলবদলের জল্পনা। ২০১৫ সালে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে গাড়ি থামিয়ে বাবুলকে ঝালমুড়ি খাইয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল তৎকালীন মোদী সরকারের প্রতিমন্ত্রীটিকে। এর ঠিক ছয় বছর পর আর মোদী সরকারের মন্ত্রী নন বাবুল। এবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। কিন্তু ঠিক ৬ বছর আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঠিক কী কথা হয়েছিল? তখনি কি শিবির বদলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তা নিয়ে উৎসাহ কম নেই মানুষের মধ্যে। তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রথম সাংবাদিক সম্মলনে ৬ বছর আগের সেই ঘটনার সিক্রেট ফাঁস করলেন আসানসোলের সাংসদ।
ঝালমুড়ি নিয়ে কী বললেন বাবুল?
বাবুলের দলবদল করা নিয়ে তোপ দেগেছিলেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। তিনি বলেন, "আমার মনে হয় উনি একজন লোভী রাজনীতিক। রাজনীতিকে উনি সরকারি চাকরি ভাবেন হয়তো। কিছুদিন আগেই অর্পিতা ঘোষ রাজ্যসভার সাংসদ পদ ত্যাগ করেছেন। কেন তাঁকে হঠাৎ থিয়েটারে মনোযোগ দেওয়ার কথা ভাবতে হল। বাবুলের যোগদানের পরই যেন সবটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাবুল সুপ্রিয় বোধহয় এই সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যে তাঁর কীভাবে রাজ্যসভায় স্থান হয়। তার মানে ঝালমুড়ির রফা আগেই হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র অপেক্ষা করা হচ্ছিল রাজ্যসভায় কীভাবে পাঠানো যায়। তাই হয়তো বেচারি অর্পিতা দেবীকে এত তড়িঘড়ি রাজ্যসভা ছেড়ে থিয়েটারে মন দিতে হল।" এই নিয়ে বাবুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাফ বলেন, অনুপম হাজরার প্রশ্নের জবাব দেব কেন? কটূ কথা বলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন অনুপম হাজরা। দয়া করে বুঝুন, দিদি আমাকে ঝালমুড়ি অফার করেছিলেন। কেন করেছিলেন? বলছি। প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন কলকাতায়। তখন প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি এসেছিল। রাজভবনে যাওয়ার পথে উনি আমাকে গাড়িতে বসতে বলেন। উনি যাওয়ার পথে ভিক্টোরিয়ার সামনে আমাকে ঝালমুড়ি খাওয়ার কথা বলেছিলেন, আমি কেন খাব না? যদি কাজ করার জন্য বিজেপি-র মন্ত্রীর সঙ্গে ঝালমুড়ি খেতে হয়, তাহলেও খাব।
ঝালমুড়ির পর বাবুলের 'চা-কুকিজ' পর্ব
২০১৫ সালে ঝালমুড়ি পর্বের ঠিক ২ বছর পর 'চা-কুকিজ' পর্ব সামেন এসেছিল বাবুল ও মমতার। ২০১৭ সালের জুনে নেদারল্যান্ডস সফরে যাওয়ার পথে দমদম বিমানবন্দরে ফের দেখা হয় মমতা-বাবুলের। বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে ভিআইপি লাউঞ্জে দু’জনে মুখোমুখি হন৷ মমতাকে দেখে বাবুলই প্রথম এগিয়ে যান৷ মুম্বইয়ের বিমান ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে পেয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একগাল হেসে বলেন, কী দিদি, আমাকে না-খাইয়েই চলে যাবেন? বাবুলের আবদার শুনে দিদিও হেসে ফেলেন৷ এর পর বাবুলকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরের একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়েন৷ সেখানেই চা-কুকিজ খাওয়ান বাবুলকে৷
এবার গান গাইবেন ও কাজ করবেন
শিবির বদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে বাবুল সুপ্রিয়র। সোমবার আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হবে দু'জনের। তবে ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলে দিয়েছেন চাপমুক্ত হয়ে কাজ করতে আর গান গেয়ে যেতে। রবিবার ক্যামাক স্ট্রিটের তৃণমূল অফিস থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন বাবুল সুপ্রিয়। সাংবাদিক বৈঠকে বাবুলের পাশে ছিলেন সাংসদ ডেরেক ‘ও ব্রায়েন, ও সাংসদ সৌগত রায়। বৈঠকের শুরুতেই বাবুল ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বলেন, ‘‘আমাকে প্রথম একাদশে সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ’’বাবুলের কথায়, ‘‘খেলার সুযোগ না পেয়ে আমি বিজেপি ছেড়েছি। আমি সবসময় প্রথম একাদশেই থাকতে চাই। সেই কারণে আমি বলব, আমায় প্রথম একাদশে রাখার জন্য দিদি ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই।’’
এবার কাকে প্রধানমন্ত্রী চাইছেন বাবুল?
বিজেপি শিবিরে থাকাকালীন তিনি মোদী ভক্ত হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। এবার শিবির বদলের পর বাবুলের সুরও পাল্টে গিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, "সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই তালিকার শীর্ষে থাকবেন, সেটা আলাদা করে বলে দিতে হবে না। তাই তাঁকেই আমি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাই। ২০১৪ সালে মোদী ছিলেন আশা, ২০২৪ সালে এগিয়ে রয়েছেন দিদি।"