বর্তমানে হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা অনেকেরই দেখা যায়। এমনকি তরুণরাও হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হার্ট ফেলিওর ইত্যাদির মতো হৃদরোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে একটি শিশুর জন্ম হয়, যার নাম ছিল ম্যাক্স উইগেল। জন্মের পর থেকেই শিশুটির হার্ট সংক্রান্ত দুটি সমস্যা ছিল। শিশুটি অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (Atrial septal defect, ASD) নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছিল। এএসডি-তে হৃদপিণ্ডের উপরের কক্ষে একটি ছিদ্র থাকে। একই সঙ্গে তার হার্টের বাম নিলয়ও কাজ করছিল না। সেটিকে বলা হয় লেফট ভেন্ট্রিকুলার নন-কম্প্যাকশন কার্ডিওমায়োপ্যাথি।
২০১৯ সালে যখন ম্যাক্সের হার্ট সার্জারি হয়, তখন তার বয়স ছিল ৪ বছর। অস্ত্রোপচারের পর যখন তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তাকে ফের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, তার স্ট্রোক হয়েছে। স্ট্রোকের জেরে তার শরীরের অর্ধেক কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সে এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন এবং বর্তমানে তার বয়স ৭ বছর।
এই সমস্ত অবস্থা অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্টসের (ASD) কারণে তৈরি হয়েছিল। এটি শিশুদের জন্মগত দেখা দেয়। অনেক শিশুর হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা থাকে, যা সময়মতো ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা হতে পারে।
এএসডি কী? (What is atrial septal defects)
এএসডি কী, এর লক্ষণগুলি কী কী এবং শিশুদের মধ্যে কোনও লক্ষণ দেখা গেলে কখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত, সেই বিষয়ে জেনে নিন।
মায়োক্লিনিকের মতে, হৃৎপিণ্ডে চারটি চেম্বার এবং চারটি ভালভ রয়েছে, যা পরস্পর সংযুক্ত। অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (ASD) হল হৃদপিন্ডের উপরের চেম্বারের (ডান এবং বাম অ্যাট্রিয়া) দেওয়ালে তৈরি হওয়া ছিদ্র। সহজ কথায় বলতে গেলে ASD একটি হার্ট সংক্রান্ত জন্মগত সমস্যা। এএসডিতে, হার্ট চেম্বারের দেওয়ালে একটি ছিদ্র থাকে। এই দেওয়ালে ছিদ্র থাকায় উভয় প্রকোষ্ঠে উপস্থিত রক্ত একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে থাকে। এই সমস্যা জন্ম থেকেই দেখা দেয়। ছোট ASD ঝুঁকি তৈরি করে না। এই ছিত্রগুলি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বড় ছিদ্র থাকলে হার্ট ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। তখন ASD সারাতে সার্জারির প্রয়োজন।
এএসডি-র প্রকারভেদ (Types of atrial septal defects)
সেকেন্ডাম (Secundum) : এটি ASD-র সবচেয়ে সাধারণ প্রকার। এটি হৃদপিন্ডের উপরের কক্ষের (Atrial septum) মধ্যে প্রাচীরের মাঝখানে অবস্থিত।
প্রাইমাম (Primum) : এই ধরণের ASD অ্যাট্রিয়াল সেপ্টামের নীচের অংশকে প্রভাবিত করে এবং এটি জন্মগত হতে পারে।
সাইনাস ভেনোসাস (Sinus venosus) : এটি একটি বিরল ধরণের ASD যা সাধারণত হার্ট চেম্বারগুলিকে পৃথক করা দেওয়ালের উপরের অংশে থাকে।
করোনারি সাইনাস (Coronary sinus) : এই বিরল ধরনের এএসডি করোনারি সাইনাসের মধ্যবর্তী প্রাচীরে থাকে।
এএসডি আক্রান্ত অনেক শিশুরই প্রথমদিকে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি বোঝা যায়। মায়োক্লিনিকের মতে, যদি শিশুর মধ্যে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায় তবে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
১. নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
২. খেলার সময় শ্বাসকষ্ট
৩. ক্লান্তি
৪. পা বা পেট ফুলে যাওয়া
৫. হার্টের ধীর বা দ্রুত ছন্দ
৬. হৃদস্পন্দন দ্রুত গতি
৭. হৃদস্পন্দনের আওয়াজ পাওয়া
এএসডি-র কারণ (Atrial septal defects Causes)
অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্টের কারণ বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। মনে করা হয়, যখন শিশু গর্ভে থাকে এবং তার হৃদপিন্ডের বিকাশ ঘটে, তখনই ASD বা হার্টের গঠনগত সমস্যা তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি জেনেটিক সমস্যাও হতে পারে। এ ছাড়া কিছু চিকিৎসা, ওষুধের ব্যবহার, জীবনযাত্রা, ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনও এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
যে সমস্যাগুলি দেখা দেয় (Problems caused by atrial septal defects)
কারও হার্টে বড় ছিদ্র থাকলে তা বিপজ্জনক হতে পারে এবং পরবর্তীতে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি হতে পারে।
১. ডান হার্ট ফেইলিওর
২. হার্টের ছন্দ সঠিক না থাকা
৩. স্ট্রোক
৪. অকাল মৃত্যু
৫. উচ্চ রক্তচাপ
৬. ফুসফুসের ক্ষতি ইত্যাদি
আরও পড়ুন - অফিসে ঢুকতে ১ মিনিট লেট হলেই সর্বনাশ, কর্মীদের আজব সাজা দেয় কর্তৃপক্ষ