Kidney Disease & Health: স্থূলত্ব বা ওজন বেড়ে যাওয়া এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তির শরীরে অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর পরিমাণে চর্বি জমে যায়। যা স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। স্থূলতা সাধারণত ক্যালোরি বার্ন হওয়া এবং খাবার থেকে পাওয়া ক্যালোরির মধ্যে ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার ফলে হয়।
শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়াই স্থূলতার প্রধান কারণ। ওজন বেড়ে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের মতো অনেক সমস্যা রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁদের BMI 25-29.9 এর মধ্যে তাঁরা ওভারওয়েট এবং যাঁদের BMI 30 বা তার বেশি তাঁদের স্থূল হিসাবে ধরা হয়। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্থূলত্ব কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর ফলে কিডনি ফেলও হতে পারে।
কিডনির রোগ দুনিয়ার ১০ শতাংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য দেখা যায়। বলা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি সারা দুনিয়ার জন্য এটি একটি বড়সড় সমস্যা হবে। এ নিয়ে এক গবেষণা করেছে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, স্থূলতা কিডনির স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্থূলত্ব এবং কিডনির মধ্যে লিঙ্ক
ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, এই গবেষণায় ৪৬৭টি কিডনি কোষের নমুনা নেওয়া হয়েছে। এই নমুনাগুলির ফলাফলগুলি জানাচ্ছে যে স্থূল ব্যক্তিদের কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক অধ্যক্ষ প্রফেসর ম্যাকিয়েজ টমাসজেউস্কি বলেন, "আমরা মানুষের কিডনি কোষের নমুনা বিশ্লেষণ করেছি এবং শরীরের ভর সূচক/কোমরের পরিধির মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছি।" তিনি আরও বলেন, "আমরা দেখতে পেয়েছি যে স্থূলতা এবং কিডনির স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি জৈবিক সংযোগ রয়েছে।"
কিডনি রিসার্চ ইউকে-এর এক্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ডাঃ আইলিং ম্যাকমোহন বলেন, "ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণাটি দেখায় যে শরীরের ভর বা স্থূলতা বৃদ্ধি কিডনি সমস্যার প্রধান কারণ।"
ওজন কমালে সমস্যা এড়ানো যায়
ওই দলটি প্রায় ৩ লক্ষ লোকের তথ্য ব্যবহার করে এবং স্থূলতা পরিমাপের দু'টি সাধারণ পদ্ধতি যেমন BMI এবং কোমরের আকারের ওপর ভিত্তি করে এই উপসংহারে এসেছে। এরপর আরও তথ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "আগের গবেষণাগুলো স্থূলতা ও কিডনির সমস্যার মধ্যে সম্পর্ক সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। কিন্তু এই গবেষণায় মেন্ডেলিয়ান র্যান্ডমাইজেশন নামের একটি কৌশলের মাধ্যমে কিডনি ও স্থূলতার সম্পর্ক ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।" তারা দেখেছেন যে জেনেটিক্যালি বেড়ে যাওয়া BMI এবং কোমরের আকার কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত।
ডাঃ জিয়াওগুয়াং জু বলেন, "স্থূলতা এবং কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে সাধারণ ব্যাধি। আমাদের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, কিডনির স্বাস্থ্যের অবনতি রোধ করতে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে ওজন কমানোর প্রয়োজন হবে। আমরা আশা করি যে আমাদের গবেষণা কিডনির স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য লোকেদের ওজন কমাতে উৎসাহিত করতে আরও স্বাস্থ্য নীতির বিকাশে সহায়তা করবে।"
ওজন কমানোর উপায়
ওজন কমানোর জন্য যে কোনও শারীরিক কার্যকলাপ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিনে অন্তত ৫ থেকে ৬ হাজার কদম হাঁটার চেষ্টা করুন। আপনি ব্যায়াম করতে জিমে যেতে পারেন। বা আপনি বাড়িতেও ব্যায়াম করতে পারেন।
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে আপনার দরকারি ক্যালোরির চেয়ে কম খেতে হবে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি জাঙ্ক ফুড, তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড খাওয়া বন্ধ করুন।
খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, শস্য, শুকনো ফল, ফলমূল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন। এ ছাড়া অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুম পান এবং হাসিখুশি থাকুন, স্ট্রেস নেবেন না।
স্ট্রেস নিলে শরীরে কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়। যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং আপনাকে বেশি খেতে বাধ্য করে। যার কারণে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এটা করা থেকে বিরত থাকুন।