বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মানে পরপর চার বছর জেলায় সেরা পুজোর পুরস্কার পাওয়ার পর এবার জেলার সেরা প্রতিমারও পুরস্কার পেল নিউটাউন দুর্গা বাড়ি পুজা কমিটি।
কিন্তু থিম পুজোয় বিশ্বাসী না হয়েও স্রেফ সাবেকিয়ানা, নিষ্ঠা ও কঠোর শাস্ত্রীয় অনুশাসনের শৃঙ্খলে আজও অমলিন আলিপুরদুয়ার পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ টাউন দুর্গাবাড়ির দুর্গাপুজো।
ইংরেজ সাহেব ও তৎকালীণ বনেদি বাঙালিদের হাত ধরে শুরু হওয়া নিউ টাউন দুর্গাবাড়ির পুজো এ বছর ৮৪ বছরে পদার্পণ করল। ইংরেজ আমলে এই পুজো শুরুর প্রধান কারিগর ছিলেন আলিপুরদুয়ার মহকুমার তৎকালীণ মহকুমা শাসক এস গুপ্ত।
ওই মহকুমা শাসকের বাড়ি ছিল কলকাতায়। মহকুমা প্রশাসনের নথিতে পাওয়া যায় দুর্গাপুজায় বাড়ি যাওয়ার জন্য ইংরেজ সাহেবদের কাছে ছুটি চেয়েছিলেন মহকুমাশাসক এস গুপ্ত। কিন্তু ইংরেজ সাহবেরা ছুটি মঞ্জুর করেননি।
ছুটির অনুমতি না মেলায় জেদ চেপে যায় তৎকালীন ওই মহকুমা শাসকের। এটা ১৯৩৭ সালের দুর্গাপুজার ঘটনা। বাড়ি যাওয়ার অনুমতি না মেলায় ওই বছর স্থানীয় বনেদি বাঙালিদের নিয়ে আলিপুরদুয়ার কোর্ট চত্বরে তিনি দুর্গাপুজা করার উদ্যোগ নেন।
ইংরেজ আমলে তৈরি মহকুমা শাসকের পুরনো লাল বিল্ডিংয়ের পিছনে ও বর্তমানে ট্রেজারি বিল্ডিংয়ের সামনে ১৯৩৭ সালে এই পুজার প্রথম সূচনা হয়। পরে অবশ্য এই পুজোয় মহকুমা প্রশাসনে থাকা ইংরেজ কর্মচারীরাও সদলবলে যোগ দেন।
এরপর ১৯৪৫ সালে স্থায়ীভাবে পুজোটি নিয়ে আসা হয় পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ টাউনে। সেখানেই ধীরে ধীরে দুর্গাবাড়ি মন্দির গড়ে উঠে। তখন তো আজকের মতো এত যানবাহন ছিল না। তখন আলিপুরদুয়ারেও কুমোরটুলি গড়ে উঠেনি। তাই হ্যাজাকের আলো ও গ্যাস লাইটের আলোয় মায়ের প্রতিমা আসত কোচবিহার থেকে ঘোড়ার গাড়িতে।
নিউটাউন দুর্গাবাড়িতে মায়ের প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয় রথের দিন থেকে পুরনো কাঠামোতে। এবার প্রতিমা তৈরি করেছেন শোভাগঞ্জের মৃৎশিল্পী গোপাল পাল। নিউ টাউন দুর্গাবাড়ির মায়ের প্রতিমা হয় তিনটি চালায়। একটি চালায় থাকে কার্তিক সরস্বতী ও অন্য একটি চালায় থাকে লক্ষী গণেশ। আর স্বমহিমায় দুর্গা থাকেন তাঁর নিজের চালায়।
আলোর রোশনাই বা থিম পুজোয় বিশ্বাসী নন। নিউ টাউন দুর্গাবাড়ি পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। আজও নিউ টাউন দুর্গাবাড়িতে সাবেকিয়ানা, নিষ্ঠা ও কঠোর শাস্ত্রীয় অনুশাসনের শৃঙ্খলে মায়ের পুজো হয়। স্বাধীনতার পর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায় ও তাঁর স্ত্রী মায়াদেবী নিউ টাউন দুর্গাবাড়ির পুজোয় অংশ নিয়েছিলেন। এখানে মায়াদেবী ভোগ পরিবেশন করেছিলেন নিজের হাতে। এসেছিলেন প্রয়াত গনি খান চৌধুরীও। এই ইতিহাস আজও অমলিন।
নিউটাউন দুর্গাবাড়ির পুজোয় বহু বছর ধরে দাপট ছিল আলিপুরদুয়ার পুরসভার বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি’তে যাওয়া আশিস দত্ত। বিজেপি’তে যাওয়ার পর আশিসবাবু রাজনীতিতে জৌলুস হারিয়েছেন। যদিও এবার তিনি এই পুজো কমিটির সভাপতি। পুজো কমিটির সম্পাদক আবার তৃণমূল নেতা সঞ্জীব ধর। নিউ টাউন দুর্গাবাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে রাজনীতির উর্ধ্বে মায়ের পুজো।