এমন কোনও গাছ রয়েছে, যা মঙ্গল গ্রহের চরম প্রতিকূল পরিবেশেও জীবিত থাকতে পারে? এখানে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল নেই। না জল রয়েছে, না বাতাস। মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এখন তাহলে সেখানে কী খাবেন তাঁরা? এই গল্প কিছুটা হলিউড ফিল্ম দ্য মার্শিয়ানের মত বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে অভিনেতা ডেমন নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাছ লাগানোর চেষ্টা করছিলেন।
বলতে গেলে মঙ্গল গ্রহে কোনও মাটি, বায়ুমণ্ডল, পরিবেশের উপর ভিত্তি করে এটি সুনিশ্চিত করা যেতে পারে যে, সেখানে কোনও রকম গাছ লাগানো বা বড় করা একেবারেই অসম্ভব। সম্প্রতি হওয়া একটি স্টাডিতে একটা গাছ পাওয়া গিয়েছে। যা সেখানে লাগানো যেতে পারে এবং বড় করা যেতে পারে। এর নাম আলফালফা প্ল্যান্ট। এই রকমের গাছ সাধারণত চারা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আলফালফা আসলে মটর জাতীয় গাছ। এটি পৃথিবীতে চাষ করা হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ গাছ হিসেবে। ইউনাইটেড কিংডম, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে এটি লুসার্ন নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিকেরা মনে করেন যে এটি মঙ্গল গ্রহের উপর ফার্টিলাইজারের হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরে সেখানে শালগম, মূলো এবং লেটুস এর মত গাছ ফলানো যেতে পারে।
এটা নিয়ে সম্প্রতি PLOS ONE এ একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। যার মধ্যে লেখা হয়েছে, যে আলফালফা প্লান্ট মঙ্গল গ্রহের আগ্নেয়গিরির মাটির উপরও বাঁচতে পারে। এই গাছ সেখানে ফলানো যেতে পারে। কারণ এর পুষ্টি এবং জলের প্রয়োজন কম হয়। এই গাছ এর সাহায্যে বৈজ্ঞানিকেরা মঙ্গল গ্রহে গাছ লাগানোর আশা পূরণ করতে পারেন।
এর মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের মাটির পুষ্টিগুণ বাড়ানো যেতে পারে। যার পরে সেখানে অন্য আরও কয়েক প্রকারের গাছও ফলানোর মতো উপযোগী পরিবেশ তৈরি হতে পারে। সঙ্গে সেখানকার মাটিতে জলের মাত্রাতেও ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে এটি। আগে বলা হয়েছিল যে মঙ্গল গ্রহে কোনও রকম ফসল বা গাছ ফলানো মুশকিল। কিন্তু এখন অন্য রকম ভাবনা চলছে।
মঙ্গল গ্রহের পোষক তত্ত্বের ঘাটতি পূরণ করার জন্য আলফালফা প্লান্ট সাহায্য করবে। বৈজ্ঞানিকেরা মঙ্গল গ্রহে এমন পরিবেশ তৈরি করেই গাছটিকে সেখানে ফার্টিলাইজার হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন। তারপরে এখানে অন্য গাছগুলি লাগানো হবে। আশা করা যাচ্ছে এবার খুব দ্রুত আলফালফা এবং তিনটি গাছ তৈরি করা যেতে পারে।
মঙ্গল গ্রহের উপর পৃথিবীর মতো জল নেই। কিন্তু জলের কণা মজুত রয়েছে। যার উপর নির্ভর করে গাছ তার নিজস্ব পোষণ এবং পুষ্টি সংগ্রহ করে নিতে পারবে। এই প্রথমবার এমন হয়েছে যে আলফালফা প্লান্টকে বায়োফার্টিলাইজারে বদলে দেওয়া হচ্ছে। এর সাহায্যে মঙ্গলকে উর্বর করে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে রিসার্চ আরও জরুরি রয়েছে। তবু রিসার্চ চলছে।
ল্যাবে তৈরি করা মাটিতে কিছু বিষাক্ত লবণের ঘাটতি ছিল। বাকি মঙ্গল গ্রহের মতই মাটি প্রস্তুত করা ছিল। মঙ্গল গ্রহের মাটিতে ফসল উৎপন্ন করার জন্য সবচেয়ে আগে এই লবণের ডাইসলিনেটেড জল পরিষ্কার করতে হবে। যাতে তারপরে ফসল ফলানো যায়।