মালদা জেলার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জমিদারি এখন আর নেই। নেই জমিদারি জৌলুসও। তবে বংশপরস্পরায় এখনো নিষ্ঠার সাথে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে রায় বাড়িতে।
মালদার হবিবপুর ব্লকের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা তিলাসন। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের জমিদার রায় বাড়ির দুর্গাপুজো ২২১ বছরে পদার্পণ করলো।
সালটা ১৮০০। অবোধ নারায়ণ রায়ের পুত্র শিবপ্রসাদ রায় মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান মাকে পুজো দেওয়ার জন্য। সেই সময় থেকে কুল দেবতা সোনার তৈরী মা দুর্গার পুজো শুরু হয়।
এখনও সমস্ত প্রথা মেনে হয়ে আসছে রায় বাড়ির পুজো। বংশপরস্পরায় যেমন এই পুজো হয়ে আসছে তেমনি পুজোর পুরোহিতও বংশপরস্পরায় এই পুজো করে আসছেন। কুল দেবতা থাকার জন্য এই পুজোয় নেই বলি দেওয়ার প্রথা।
জমিদারি এখন আর নেই। জমিদার বাড়িটিও আজ জরাজীর্ণ। খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ইঁটের ফাঁক দিয়ে গজিয়ে উঠেছে গাছ। ভেঙে পড়ছে জানলা দরজা। তবে রায় বাড়ির পুজতে নিষ্ঠার নেই কোন খামতি ।
রাকেশ কুমার রায় (নবম পুরুষ) জানান, এখনও এই বাড়িতে দুটো দুর্গা পুজো হয়। প্রথমে কুলদেবতা মা দুর্গা তারপর মাটির তৈরি মা দুর্গা।
সপ্তমীতে কলা বৌ নিয়ে ঘট ভরতে যাওয়ার রেওয়াজ আছে পুনরভবা নদীতে। দেশ ভাগের পরে পুনর্ভবা নদী পরে যায় কাঁটাতারের ওপারে।
বিএসএফ এর অনুমতি নিয়ে প্রথা অনুযায়ী রায় বাড়ির সদস্যরা ঘট ভরতে যান পুনর্ভবা নদীতে। ঘট ভরার সময় পাঁচ রাউন্ড গুলি ফায়ার করা হয়।
সপ্তমীর দিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সদস্যরাও চলে আসেন এই বাড়িতে। অষ্টমী ও নবমীতে নিমন্ত্রন করে গ্রামের প্রত্যেককে পাত পেরে খাওয়ানো হয়।
আর দশমীতে দুপুরে আদিবাসীদের খাওয়ানোর পাশাপাশি আদিবাসী নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। পুজো উপলক্ষে মেলাও বসে দশমীতে।
পূর্বে মা দুর্গার বিসর্জন হতো পুনর্ভবা নদীতে। কিন্তু এতোজন নিয়ে কাঁটা তারের ওপারে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যাবেনা বলে বাড়ির পাশের রায় বাড়ির পুকুরেই মাকে বিষর্জন দেওয়া হয়।
জমিদার বাড়ির এই পুজোকে নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে থাকে উন্মাদনা এখনও অব্যাহত। নাই বা থাকলো জমিদারি, গৌরব ও ঐতিহ্য তো আছে !
বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে জল ভরে এনে পুজো করার বিষয়টি সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে প্রচার হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে পর্যটনের সঙ্গে এই জমিদারবাড়ির পুজোকে জুড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। করোনার কারণে তা থমকে রয়েছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মালদার ঐতিহাসিক স্থানগুলির পাশাপাশি এই ধরণের ঐতিহ্যশালী পুজোগুলিকে একসঙ্গে করে পুজোর সময় তো বটেই সারা বছর কোনও পর্যটন পরিকল্পনা করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
রাজ্য পর্যটন দফতরের সহায়তায় জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হবে উদ্যোগ নিতে বলে পর্যটন দফতর সূত্রের খবর।