আনিস কোন দলের সদস্য? আমতার ছাত্রনেতার মৃত্যুর পর বিজেপি ব্যতিরেকে প্রায় সব সংগঠনই তাঁকে 'আপন' বলে দাবি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়ে দিয়েছেন, গত বিধানসভা ভোটে শাসক দলকে সাহায্য করেছিলেন আমতার ছাত্রনেতা। সেই দাবি আবার নস্যাৎ করে 'কমরেড' আনিসের একাধিক ছবি প্রকাশ বামেরাও। ঘটনার পর থেকে রাস্তায় নেমে পড়েছে তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন। 'কমরেড' আনিস বামপন্থী ছিলেন বলে দাবি করেছেন বাম নেতারা। আইএসএফের দাবি, আনিস তাদের লোক। একটি ভিডিও প্রচার করে আনিসকে নিজেদের সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেছে এআইএমআইএম। বাকি রইল কংগ্রেস! তারাও আনিসকে ছাত্র পরিষদের সদস্য বলে উল্লেখ করছে। অর্থাৎ ছাত্রনেতার মৃত্যু রহস্যের সঙ্গে তিনি কোন দলের সদস্য ছিলেন সেটাও একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে?
বিতর্কের সূত্রপাত, সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে আনিসকে 'ফেভারিট ছেলে' বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন,'অনেকেই জানেন না আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ভাল ছিল। নির্বাচনেও সাহায্য করেছে।' মুখ্যমন্ত্রীর দাবি উড়িয়ে দিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য জানান,'মুখ্যমন্ত্রী অসত্য বলছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেড সমাবেশে এসেছিলেন আনিস। ওঁ আমাদের দলের সদস্য ছিল।' বামেদের বিভিন্ন সোশ্যাল পেজ থেকে লাল পতাকা হাতে আনিসের ছবিও শেয়ার করা হয়েছে। আনিসের দাদাও আজতক বাংলাকে বলেছিলেন,'ভাই কখনও তৃণমূল করেনি।' শুধু তাই নয় আনিসের ফেসবুক পেজজুড়েও রয়েছে শাসক বিরোধী অজস্র পোস্ট। চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন থেকে হিজাব বিতর্কে মমতা কেন নীরব, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন মৃত ছাত্র নেতা।
ওদিকে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও আনিসকে নিজেদের দলের সদস্য বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়,'বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের হয়ে কাজ করেছিল।' ঘটনা হল আনিসের ফেসবুক পেজে আইএসএফ-কে ট্যাগ করে পোস্ট জ্বলজ্বল করছে। ফলে নওশাদের দাবিও ফেলে দেওয়ার নয়!
এর মধ্যে আবার এআইএমআইএম একটি ভিডিও শেয়ার করেছে। ওই ভিডিও দেখা যাচ্ছে, তাদের একটি সভায় বক্তব্য রাখছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত ছাত্রনেতা। আসাউদ্দিন ওয়াইসির দলের দাবি, মিম করতেন আনিস। ভিডিও সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আজতক বাংলা।
আনিসের কংগ্রেস ছাত্র পরিষদে যোগদানের দিনক্ষণ আবার জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ। তাঁর কথায়,'২০১৮ সালের ২৮ অগাস্ট ছাত্র পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন আনিস।'
মৃত ছাত্রনেতার ফেসবুক থেকে এটা স্পষ্ট, সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সমাবেশেও দেখা গিয়েছে। এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা জোরদার। সহপাঠীরাও জানাচ্ছেন, চিরকালই বিদ্রোহী প্রকৃতির আনিস। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দাবি নিয়েও সোচ্চার হয়েছেন।
আরও পড়ুন- সেই হাওড়ায় এবার উদ্ধার CPM নেতার রক্তাক্ত দেহ, তদন্তে পুলিশ
অনেকেই বলছেন, আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে পুলিশ তথা শাসক দলের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। পরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু ভোট প্রায় পুরোটাই তৃণমূলের কুক্ষিগত। গত বিধানসভা ভোটের পরিসংখ্যানও তাই বলছে। মুর্শিদাবাদ, মালদার মতো সংখ্যালঘু এলাকাতেও 'শূন্য' বাম-কংগ্রেস। ফলে আনিসকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু মননে শাসক দল বিরোধী হাওয়া জোরাল করতে চাইছে বামেরা। আর অন্যদিকে, তাঁকে 'ফেভারিট ছেলে' বলে পালের হাওয়া কেড়ে নিতে চাইলেন মমতাও, মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
আরও পড়ুন- সাধুর কথায় নিয়োগ-পদোন্নতি! NSE দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুললেন নির্মলা