scorecardresearch
 

Khicuri History: বাইরে বৃষ্টি-থালায় ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি, বাঙালির বর্ষা-বিলাসের পূর্ব শরিক মেগাস্থিনিস-আকবররাও

Khichuri or Khichdi History: বর্ষায় জমাটি বৃষ্টি, দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দুপুরের ভোগ হোক বা হাতে সময় কম থাকলে চালে-ডালে এক করে দেওয়া- খিচুড়ির জুড়ি মেলা ভার। এই খিচুড়ি যে বাঙালিরই খুব প্রিয় এমন না, গোটা দেশেই চাল-ডালের সংমিশ্রণে যে ঘ্যাঁট প্রস্তুত করা হয়, তাকেই 'খিচরি' বলে চেনে অবাঙালিগণ। তবে স্বাদের প্রতিযোগিতায় সর্বকালের সেরা বাঙালির সাধের খিচুড়ি।

Advertisement
প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি
হাইলাইটস
  • চাণক্যের লেখায় মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে চাল ও ডালের মিশ্রণে তৈরি খিচুড়ির উল্লেখ মেলে
  • এমনকি মুঘল সাম্রাজ্যেও কাজু, কিশমিশ, পেস্তা সহযোগে তৈরি হত খিচুড়ি
  • বাংলায় 'মনসামঙ্গল' কাব্যে খিচুড়ির উল্লেখ রয়েছে

Khichuri or Khichdi History: বর্ষায় জমাটি বৃষ্টি, দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দুপুরের ভোগ হোক বা হাতে সময় কম থাকলে চালে-ডালে এক করে দেওয়া- খিচুড়ির জুড়ি মেলা ভার। এই খিচুড়ি যে বাঙালিরই খুব প্রিয় এমন না, গোটা দেশেই চাল-ডালের সংমিশ্রণে যে ঘ্যাঁট প্রস্তুত করা হয়, তাকেই 'খিচরি' বলে চেনে অবাঙালিগণ। তবে স্বাদের প্রতিযোগিতায় সর্বকালের সেরা বাঙালির সাধের খিচুড়ি। আতপ বা গোবিন্দ ভোগ চাল, মুগের ডাল আর ঘি- এই তিন সুগন্ধের মাখামাখি না থাকলে খিচুড়িকে বাঙালি খিচুড়ি বলে মনে করে না। সঙ্গে যদি হয় লাবড়া বা ডিম ভাজা, পাঁপড় বা ইলিশ- বাঙালিকে আর কে পায়! তবে খিচুড়ি আসলে কি বাঙালির খাবার?

খিচুড়ির সৃষ্টি কীভাবে?

ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় মেগাস্থিনিস থেকে আকবর, জাহাঙ্গীর থেকে জগন্নাথ সবাই-ই খিচুড়ির স্বাদ আস্বাদন করেছেন। বাংলার এনসাইক্লোপিডিয়া অর্থাৎ বিশ্বকোষের মতে খিচুড়ি শব্দটি এসেছে ‘খেচর’ শব্দ থেকে। বঙ্গীয় শব্দকোষ বইয়ে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, প্রাকৃত শব্দ ‘কিসর/ কৃসরা’ শব্দ বিবর্তিত হয়ে খিচুড়ি এসেছে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে তালগোল পাকিয়ে এক হয়ে গেলে তা হয়ে যায় 'জগাখিচুড়ি'। তবে, সঙ্গে এই তথ্যটাও জেনে রাখা ভালো জগাখিচুড়ি সত্যিই বিদ্যমান। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে খিচুড়ি নিবেদন করা হয়। জগন্নাথ দেবের ভোগের এই খিচুড়িই লোক মুখে হয়ে গেছে ‘জগাখিচুড়ি’। 

দেশে-বিদেশে কোথায় কীভাবে খাওয়া হত খিচুড়ি?

তথ্য অনুযায়ী, চাণক্যের লেখায় মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে চাল ও ডালের মিশ্রণে তৈরি খিচুড়ির উল্লেখ মেলে। পঞ্চদশ শতকে এ দেশে এসেছিলেন এক রাশিয়ান পর্যটক আফনাসিই নিকতিন। তাঁর লেখাতে দক্ষিণ ভারতে চাল-ডাল মিশিয়ে তৈরি খাদ্যের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। আরও জানা যায়, সপ্তদশ শতকে ভারত পরিভ্রমণকারী ফরাসি পরিব্রাজক তাভেরনিয়ের এসে লিখেছিলেন, সে-সময় ভারতের প্রায় সব বাড়িতেই নাকি খিচুড়ি খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। এও জানা যায় ইংল্যান্ডেও নাকি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির হাত ধরে পৌঁছে যায় খিচুড়ি। এমনকি মুঘল সাম্রাজ্যেও কাজু, কিশমিশ, পেস্তা সহযোগে তৈরি হত খিচুড়ি।

Advertisement

বাংলায় খিচুড়ির সৃষ্টি কবে? 

বাংলায় 'মনসামঙ্গল' কাব্যে খিচুড়ির উল্লেখ রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ধান এসেছিল ভারতে। কিন্তু ডাল কোনওভাবেই এ দেশের খাবার ছিল না। ডালের জন্মসূত্র মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফগানিস্তান, তারপর পাকিস্তান হয়ে উত্তর ভারতে প্রবেশ করে নানারকম ডাল। সেই ডাল এসে পৌঁছয় বাংলাতেও। মধ্যযুগেই খিচুড়ির আবির্ভাব। যদিও, ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় 'বাঙ্গালীর ইতিহাস' গ্রন্থে কোথাও ডালের উল্লেখ পাননি বলেই লেখেন। তাই এই নিয়ে সংশয় আছে ডালের ব্যবহার চালের সঙ্গে কীকরে এল।

খিচুড়িকে নিজের মতো করে তৈরি করে নেওয়া হয়েছে দেশ-বিদেশে। জায়গা অনুযায়ী এর স্বাদ ও রান্নার ধরন বদলে যায়। পশ্চিমবঙ্গে বসে যে খিচুড়ি খাবেন সেই রান্না ও স্বাদের বদল হয় ওপার বাংলা বাংলাদেশে, আবার দেশের দক্ষিণ প্রান্তে ও উত্তর ভারতে আলাদা হয়ে যায়। আবার আমিষ খিচুড়ি ও নিরামিষ খিচুড়িরও প্রকারভেদ আছে। তবে আর যাই হোক বাংলা ও বাঙালির খিচুড়ির চর্চা রয়েছে সর্বত্রই।

Advertisement