Purulia Best Tourist Spots: লালমাটির এই এলাকা ছিল ষোড়শ মহাজনপদের অন্যতম। মধ্যযুগে, এই অঞ্চলটিকে ঝাড়খণ্ডের অংশ বলে ধরা হত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার, ওড়িশার সুবা দেওয়ানি অনুদান পেয়ে এই অঞ্চলটি অধিগ্রহণ করার আগে পুরুলিয়া (Purulia) সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এর ঘন বনানী, ছৌনাচ, ধামসা-মাদলের টানে দূর-দূর থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। কুলকুল করে বয়ে যাওয়া মায়াবী সুবর্ণরেখা-কংসাবতী-দ্বারকেশ্বর। একের পর এক বাঁধ যেন তাদের সঙ্গী। আজও দার্জিলিং, সুন্দরবন, দিঘা-মন্দারমণির মতো পর্যটকের স্রোতের বাইরেই পুরুলিয়া।
শহুরে কোলাহল, ধুলো-ধোঁয়ার বাইরে দিন দুয়েক সবুজের মাঝে দিন কাটাতে বেছে নিতেই পারেন পুরুলিয়াকে। বিবিধ অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরবেন আপনিও। পুরুলিয়ার অযোধ্যা রেঞ্জে ঘুরতে গেলে কী কী দেখবেন?
মুরুগুমা (Muruguma)
ভিড় এড়িয়ে কোলাহলের বাইরে ছুটি কাটাতে হলে চলে যান মুরুগুমা। মুরুগুমা লেক দেখলে মনে হতেই পারে এক টুকরো কাশ্মীরকে হাতে পেয়েছেন। অযোধ্যায় পাহাড় ও সাহারাঝোর নদীর শোভা মনে করিয়ে দেবে কাশ্মীরের ডাল লেক। মুরুগুমা লেকের সূর্যাস্তও মন কাড়বে। এছাড়াও, মুরুগুমা থাকলে সুইসাইড পয়েন্ট দেখতে ভুলবেন না। সুইসাইড পয়েন্টের খাদের গভীরতা, পাহাড়ের উচ্চতা ভয় ধরাবে। অযোধ্যার বিস্তীর্ণ এলাকা ১৮০ ডিগ্রি ভিউতে উপভোগ করতে পারবেন।
আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম (Upper Dam-Lower Dam)
এরপর চলে যান আপার ড্যাম দেখতে। একদিকে প্রশস্ত বাঁধ, অন্যদিকে ঘন অরণ্য। মাঝখান দিয়ে কয়েক কিলোমিটারের লম্বা ব্রিজের মতো রাস্তা, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তকে আগলে রেখেছে। এরপর চলে যান লোয়ার ড্যামে।
মার্বেল লেক (Marble Lake)
পাথরে ঘেরা শক্ত উঁচু পাহাড়। মাঝে খানিকটা জায়গা জুড়ে ছোট্ট হ্রদ। কালো হ্রদের কালো জলের রূপের বাহার চোখ কাড়বেই।
বামনি ফলস (Bamni Falls)
বামনি ফলস ঘুরতে গেলে বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। বর্ষায় না গিয়েই হালকা বৃষ্টিতেই দেখবেন ঝর্ণার রুদ্ররূপ। বেশ খানিকক্ষণ ট্রেকিং করে তারপর পৌঁছতে পারবেন ফলসের কাছাকাছি।
লহরিয়া শিবমন্দির, লহরিয়া ড্যাম (Lahoriya Dam, Shiv Mandir)
লহরিয়া ড্যামের গা ঘেঁষে এই শিবমন্দির বেশ জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট।
চড়িদা-মুখোশ গ্রাম (Charida-Mask Village)
এই গ্রাম নিয়ে বলতে গেলে একটি গল্প রচনা হয়ে যায়। ছৌ নাচের আঁতুরঘর। কলকাতার যেমন একটা কুমোরটুলি আছে, পুরুলিয়ার আছে চড়িদা। শিল্পীদের ষ্টুডিও, আর সেখানে রং বেরঙের ছৌয়ের মুখোশ। ঘর সাজানো থেকে ছৌ নাচের মুখোশ সবটাই পাবেন এখানে। মুখোশ শিল্পীদের বয়স বাঁধ মানে না ,বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলকেই দেখবেন মুখোশ বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছে। তাঁদের নিখুঁত হাতের কাজ আপনাকে অবাক করবে। ৩০-৪০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার, দু;হাজার, পাঁচ হাজার সবরকমের রকমারি মুখোশ পাবেন এখানে। এমনকি চাইলে বাড়ি বসে অনলাইনে অর্ডার করার সুবিধাও মিলবে এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। বিদেশ বিভূঁইয়ে অনায়াসেই পৌঁছে দেবেন মুখোশ শিল্পীরা।
স্থানীয় মানুষের 'আমি ঘরকে যাবক বটে...' কানে লাগলেও ভাষার এমন অপরূপ মিষ্টত্বে মন জুড়িয়ে যাবে। এখানকার মানুষের ব্যবহার আর অসাধরণ রন্ধনশৈলী দিন দুয়েক আপনাকে স্বর্গসুখ দেবে।
কোথায় থাকবেন?
মুরুগুমায় থাকলে পলাশ বিতানে ভিলেজ ইকো হাট, বন পলাশীতে থাকতে পারেন। গাড়ির ব্যবস্থা হোটেলগুলি থেকেও করে দেওয়া হয়। চাইলে পুরুলিয়া জংশন থেকেও গাড়ি করতে পারেন। এই 'হাট' গুলিতে জন প্রতি থাকা খাওয়া খরচ দু-আড়াই দিনে প্রায় ২,০০০ টাকা। গাড়িতে আড়াইদিন ১২-১৪টি স্পট ঘোরার খরচ ৪ সিটের গাড়ি হলে ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা।