বিশ্ব ফুটবলের ঈশ্বর বলা হয় যাঁকে, সেই দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার মৃত্যু নিয়ে ফের উত্তাল আর্জেন্টিনা। বাবার মৃত্যুর প্রায় চার বছর পর আদালতে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললেন মারাদোনার মেয়ে জানাইনা মারাদোনা। স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, যাঁরা বাবার চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দায়ী।
বুয়েনস আইরেসের আদালতে হাজির হয়ে মর্মান্তিক স্মৃতিচারণা করলেন জানাইনা। আদালতে শুনানি চলাকালীন তাঁর সামনে চালানো হয় বেশ কিছু অডিও রেকর্ডিং। সেগুলির মাধ্যমে উঠে আসে মারাদোনার চিকিৎসার সময়কার কথোপকথন। সেই সব শুনে মারাদোনার মেয়ে বলেন, 'এগুলো শোনার মতো নয়। আমি যা শুনেছি, তা কোনও মানুষকেই তাঁর প্রিয়জনের সম্পর্কে এমনভাবে বলতে শুনতে হবে না। ওরা একে অপরের সঙ্গে যেভাবে কথা বলছিল, আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমি হতবাক।'
কী বললেন জানাইনা?
জানাইনার দাবি, তাঁর বাবার চিকিৎসা ঠিকমতো হয়নি। তাঁকে বাড়িতে ‘সিরিয়াস’ কোনও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। অথচ পরে সেই চিকিৎসকদের একাংশই পরিবারকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ জানাইনার। তাঁর কথায়, 'ওরা আমাদের দোষ দিতে চায়। অথচ বাবাকে যেভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীন। এখন আমি কিছুটা হালকা বোধ করছি, কারণ সব কথা আদালতে বলতে পেরেছি। তবে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত মনের অস্থিরতা থাকবে।'
চার বছর আগে কী হয়েছিল?
২০২০ সালের নভেম্বরে মারা যান দিয়েগো মারাদোনা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬০ বছর। কয়েকদিন আগেই তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় অপারেশন হয়েছিল। সেই পরেই তিনি বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সেই ‘হোম হসপিটালাইজেশন’ যে একেবারেই পর্যাপ্ত ছিল না, সেই অভিযোগই এখন সামনে এসেছে।
কাদের বিরুদ্ধে মামলা?
মারাদোনার চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন অন্তত ৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৭ জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আর্জেন্টিনায় চলছে বিচার। একজনের বিচার হবে জুলাই মাসে জুরি বোর্ডের সামনে। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ‘খুনের অভিপ্রায়ে অবহেলা’ (simple homicide with eventual intent) ধারায় মামলা হয়েছে। যদি দোষী প্রমাণিত হন, তবে তাঁদের ৮ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
চিকিৎসকদের কী বক্তব্য?
তাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। তাঁদের মতে, মারাদোনার শারীরিক অবস্থা এমনই ছিল যে, তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় অবহেলা এবং সমন্বয়ের অভাবেই এই মৃত্যু হয়েছে।
আর্জেন্টিনায় কেন এত আলোড়ন?
মারাদোনা শুধু একজন ফুটবলার নন। তিনি আর্জেন্টিনার জাতীয় পরিচয়ের অংশ। ১৯৮৬-র বিশ্বকাপজয়ী সেই কিংবদন্তিকে ঘিরে আবেগ, ভালোবাসা ও গর্ব মিশে আছে গোটা দেশের মনে। তাই তাঁর মৃত্যুর বিচার নিয়ে আবেগ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি।