ভারতবর্ষ ১৩০ কোটির দেশ। এই দেশে নায়কের কোনওদিন কোনও অভাব হয়নি। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকেই তাঁরা উঠে এসেছেন। আর এঁদের মধ্যে যে গুটি কয়েকজন দেশবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, তাঁদের ঈশ্বরের জায়গা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি এই দেশের তামাম জনগন। এমনই একজন নায়ক হলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ঈশ্বর। একজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান, সত্যিকারের ভদ্র মানুষ, যাঁর ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসে নিখুঁত স্ট্রেট ড্রাইভ, আরও যে কত শট তাঁর তুনের ভিতরে রাখা থাকত, সেটা একমাত্র তিনিই জানতেন। তাঁর নাম সচিন তেন্ডুলকর। আজ থেকে ৩১ বছর আগে করাচিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ক্রিকেটের এই বিস্ময়কর বালকের! তারপর তো ঈশ্বর নিজেই লিখেছেন ক্রিকেটের নয়া বিধান।
আজও ভাবলে গায়ে কাঁটা লাগে, যদি ১০ বছর বয়সে দাদা অজিত তেন্ডুলকর 'দুষ্টু' সচিনকে শান্ত করার জন্য কড়া হেডস্যার রমাকান্ত আচরেকরের কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে না দিতেন তাহলে গোটা বিশ্ব বোধহয় ক্রিকেটের এই অসামান্য প্রতিভাকে হয়ত চিনতেই পারত না। এরপর দিনের পর দিন, রাতের পর রাত মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে চলেছে অক্লান্ত পরিশ্রম। একদিকে সচিন যেমন পরিবারের থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছিলেন, তেমনই তাঁকে নিজেকেও অনেক কিছু উৎসর্গ করা হয়েছিল। অবশেষে সেই পরিশ্রম পুরস্কার পেল।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই রঞ্জি ট্রফিতে মুম্বই দলে জায়গা পান সচিন। আর সুযোগ পেয়েই ধামাকা! প্রথম রঞ্জি ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জানিয়ে দেন আগামীদিনে ক্রিকেট বিশ্ব কোন রত্নকে পেতে চলেছে। এরপর দেখতে না দেখতেই তিনি স্কুল ক্রিকেটে রানের পাহাড় গড়ে ফেলেন। সঙ্গী ছিলেন বিনোদ কাম্বলি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
করাচিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার জন্য সচিনকে নির্বাচন করা হয়। সত্যি কথা বলতে কী, কেউ ভাবতেই পারেনি যে মাত্র ১৬ বছরের ওই তরুণ ক্রিকেটার একদিন গোটা বিশ্বকে কাঁপাবে। যাইহোক, ৬ নম্বরে ব্যাট করতে এসেছিলেন সচিন, ততক্ষণে ভারতের ৪১ রানে চার উইকেট পড়ে গেছে। ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রম এবং ওয়াকার ইউনিসের মতো পেস ইঞ্জিনদের সামলানো খুব একটা কম কথা ছিল না। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবার আবদুল কাদির।
ফলে ১৬ বছরের এক তরুণের সামনে এটা কার্যত অভিমুন্যের চক্রব্যুহের সমান ছিল। বেশ কয়েকটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সচিন ১৫ রান করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানিয়ে রাখি, এই একই দিনে পাকিস্তান ক্রিকেট দলেরও এক ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছিল, পরবর্তীকালে যিনি কিংবদন্তি বোলার হয়ে ওঠেন। নাম ওয়াকার ইউনিস।
ওই সিরিজ়ে সচিন চারটে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। দলের ম্যানেজমেন্টকে অত্যন্ত এটুকু বোঝাতে পেরেছিলেন যে হ্যাঁ, সচিন বলেও কেউ একজন আসতে চলেছে। দুটো হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি বেশ কয়েকটা চোখ ধাঁধানো শটে তিনি নির্বাচকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। সচিনের এই অভিষেক টেস্ট ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। তবে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন কপিল দেব।
ওই ইনিংসের পর আজ ৩১ বছর কেটে গেছে। আজ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি টুইট করে সচিনের এই অভিষেক টেস্টকে সম্মান জানানো হয়েছে। সচিনের অভিষেক টেস্ট এবং বিদায়ী টেস্টের দুটো ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, গোটা ক্রিকেট বিশ্বের লক্ষাধিক সমর্থককে অনুপ্রাণিত করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
#OnThisDay 🗓️
— BCCI (@BCCI) November 15, 2020
1989 - @sachin_rt made his debut in international cricket
2013 - The legend walked out to bat for #TeamIndia 🇮🇳 one final time
Thank you for inspiring billions across the globe. 🙏👏 pic.twitter.com/fF4TzH7O44
বিদেশের মাটিতে পাকিস্তানের মতো একটা দলের মুখোমুখি হওয়া, কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না। এমন একটা ম্যাচ অভিষেক হওয়া বহু ক্রিকেটারকেই নার্ভাস করে দিয়েছে। সচিনও হয়ত নার্ভাস হয়েছিলেন, কিন্তু যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে তিনি চলে আসেননি। অসামান্য প্রতিভাদের শুরু থেকেই বোঝা যায় যে তাঁর মধ্যে কতটা ক্ষমতা রয়েছে। এই পাকিস্তান ম্যাচটা বুঝিয়ে দিয়েছিল সচিন কত বড় ব্যটসম্যান হতে চলেছেন।
এরপর ১৯৯০ সালের অগাস্ট মাসে ম্যানচেস্টারে প্রথম শতরান করেন সচিন। আর তারপরেই গোটা বিশ্ব সচিনের প্রতিভা নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করে দেয়। কিন্তু সেদিন হয়ত কেউ বুঝতে পারেননি এরপর আরও নিরানব্বইটি শতরান তাঁর কেরিয়ারে যুক্ত হবে। সেদিনের সেই ১৬ বছরের বিস্ময়কর বালকের ঝুলিতে আজ আন্তর্জাতিক ৩৪,০০০ রান রয়েছে। আশা করা যায়, এই গল্প আগামী কয়েক প্রজন্মকে অবশ্যই অনুপ্রাণিত করবে।