ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ এমন একটা মঞ্চ যেখানে প্রত্যেকটা ক্রিকেটারকেই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। কে তারকা ক্রিকেটার, আর কে নয়, সেটা এই টুর্নামেন্টে একেবারেই প্রাধান্য দেওয়া হয় না। আইপিএল টুর্নামেন্টের সাহায্যে বহু নতুন ক্রিকেটারই সুযোগ পেয়েছে। সেইসঙ্গে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়ে অধিনায়কত্বও করতে হয়েছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে যদি একবার চোখ বুলানো যায়, তাহলে দেখা যাবে যে এমন অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন যাঁরা শুধুমাত্র নিজেদের প্রতিভার জোরে এই টুর্নামেন্টে বাজিমাত করেছেন। আইপিএল টুর্নামেন্টে কয়েকজন ক্রিকেটারকে নতুন মরশুম শুরু হওয়ার সময় থেকেই অধিনায়ক করা হয়েছে। তবে এমনও অনেকবার হয়েছে যে টুর্নামেন্ট চলাকালীনই টিম ম্যানেজমেন্ট অধিনায়ক বদল করে দিয়েছে। আসুন, সেইসব অধিনায়কদের নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক যাঁদের টুর্নামেন্ট চলাকালীনই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে কেভিন পিটারসনের জায়গায় RCB-র অধিনায়ক হন অনিল কুম্বলে
আইপিএল মরশুম চলাকালীন সবথেকে প্রথম অধিনায়ক হয়েছিলেন অনিল কুম্বলে। ২০০৯ সালে কুম্বলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলের সদস্য ছিলেন। সেই সময় RCB দলের অধিনায়ক ছিলেন কেভিন পিটারসন। তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য আচমকাই দেশে ফিরে যান। এরপর ফ্র্যঞ্চাইজ়ির পক্ষ থেকে অনিল কুম্বলেকে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। অনিল কুম্বলে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স করেছিল। আটটা ম্যাচের মধ্যে ৬টাতেই তারা জয়লাভ করেছিল। সেমিফাইনালে তারা মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে হারিয়েছিল। কিন্তু, ফাইনালে ডেকান চার্জার্সের কাছে তারা হেরে যায়। সেই বছর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে ছিল।
২০১৩ সালে রিকি পন্টিংয়ের জায়গায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের অধিনায়ক হন রোহিত শর্মা
২০১৩ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের অধিনায়ক ছিলেন রিকি পন্টিং। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে টুর্নামেন্টের প্রথম অর্ধে মুম্বই তেমন ভালো পারফরম্য়ান্স করতে পারেনি। এরপরেই রোহিত শর্মাকে এই দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। রোহিত তাঁর নেতৃত্বগুণে প্রথমবার মুম্বইকে চ্যাম্পিয়ন করে তোলেন। এরপর হিটম্যানকে লাগাতার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবেই ধরে রাখা হয়। এখনও পর্যন্ত রোহিতের নেতৃত্বে মুম্বই পাঁচবার খেতাব জয় করেছে।
২০১৬ সালে ডেভিড মিলারের জায়াগায় কিংস ইলেভেনের অধিনায়ক হন মুরলি বিজয়
আইপিএল ২০১৬ মরশুমে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের (বর্তমানে পঞ্জাব কিংস) শুরুটা বেশ খারাপ হয়েছিল। প্রথম ছ'টা ম্যাচের মধ্যে পাঁচটা ম্যাচেই তাদের হারতে হয়েছিল। এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট মিলারের জায়গায় মুরলি বিজয়কে অধিনায়কের পদে বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে বিজয়ের অধিনায়কত্বেও কিংস ইলেভেন পঞ্জাব তেমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স অবশ্য করতে পারেনি। পয়েন্ট টেবিলে সবথেকে নিচেই ছিল তারা।
২০১৮ সালে গৌতম গম্ভীরের জায়গায় দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের অধিনায়ক হন শ্রেয়স আইয়ার
২০১৮ সালে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস (বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিটালস) দলে ফিরে আসেন গৌতম গম্ভীর। টানা সাত বছর কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের সঙ্গে খেলার পর তিনি দিল্লিতে আবার ফিরে আসেন। গম্ভীরের অধিনায়কত্বেই কলকাতা নাইট রাইডার্স ২০১২ এবং ২০১৪ সালে আইপিএল খেতাব জয় করেছিল। কিন্তু, গম্ভীর যোগ দেওয়ার পর দিল্লির খুব একটা উন্নতি হয়নি। গম্ভীরের অধিনায়কত্বে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস প্রথম ছ'টা ম্যাচের মধ্যে পাঁচটা ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গম্ভীর নিজে থেকেই অধিনায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। এরপর ২৩ বছর বয়সি শ্রেয়স আইয়ারকে অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
২০২০ সালে দীনেশ কার্তিকের পরিবর্তে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের অধিনায়ক করা হয় ইয়ন মরগ্যানকে
গত আইপিএল টুর্নামেন্টে দীনেশ কার্তিকের অধিনায়কত্বে কলকাতা নাইট রাইডার্স একেবারে জঘন্য পারফরম্যান্স করে। এই দলটা প্রথম আটটা ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটে ম্যাচ জিততে পারে। কার্তিক নিজের খারাপ ফর্মের কারণে মাঠের মধ্যেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে তিনি নিজে থেকেই অধিনায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট ইয়ন মরগ্যানের কাঁধে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তুলে দেয়। মরগ্যানের অধিনায়কত্বে কলকাতা নাইট রাইডার্স যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স করে। কিন্তু নেট রান রেট কম হওয়ার কারণে তারা প্লে-অফে পৌঁছতে পারে না।