
মাহি মার রাহা হে...! ইন্ডিয়া লিফ্ট দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ আফটার টোয়েন্টি এইট ইয়ার্স...! শর্মাজি মে ইস্কো জানতা হুঁ ইয়ে বোহত তগড়া মারতা হ্যায়...!
এই কয়েকটি শব্দ ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ঘিরে। আজকের দিনে ১৯৮১ সালে রাঁচির মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সবার প্রিয় মাহি। আজ পা দিলেন ৪০ বছর বয়সে।
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাস ও বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ক্যাপ্টেন বললে যার নাম সবার আগে মনে পড়বে তিনি আর কেউ নয় ক্যাপ্টেন কুল।
একটু ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে ঠিক দিনটা ছিল ১৫ আগস্ট ২০২০! হঠাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠলো ১৯৭৬ সালের অমিতাভ বচ্চনের 'কাভি-কাভি' ছবির মুকেশের গাওয়া গান ''মে পল দো পল কা শায়র হু, দো পল মেরি কাহানী হ্যায়'। ২২ গজে নেমে দর্শকদের চোখ ভিজিয়ে সতীর্থদের কাঁধে চেপে মাঠ হয়তো ছাড়া হয়নি মহেন্দ্র সিং ধোনির। তবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অবসর নিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনটে বিশ্বকাপ জয় বা ভারতের হয় বড় কিছু অর্জন করলেও তিনি এখনও 'ডাউন টু আর্থ'।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ৪ মিনিটের ভিডিও দেখতে দেখতে একসময় চোখ ভিজে আসছিল ধোনি ভক্তদের। নীল জার্সি গায়ে আরজে মাঠে নামবেন না সবার প্রিয় মাহি। তবে ওই যে ৪ মিনিটের গানের লাইন তিনি বুঝিয়ে দিলেন তিনিও কিছুটা সময় সবার সঙ্গে কাটাতে এসেছিলেন এবার তার পালা 'আলবিদা ক্রিকেট' বলার। তিনি যে সবার থেকে আলাদা ও বেস্ট ফিনিশার সেই কথার বোঝাতে বাকি রাখলেন না রাঁচির বছর চল্লিশের এই মানুষটি।
কাট টু ২৩ শে ডিসেম্বর ২০০৪। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের হয় অভিষেক ঘটলো রাঁচির ছেলে ধোনির। প্রথম কয়েকটি ম্যাচ নজর কাড়তে না পারা মাহিকে চিন্তায় ছিল তার পরিবার সহ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে এই ভারতীয় তারকারা ওপর পুরো ভরসা রেখেছিলেন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
সেই সঙ্গে বেশ কিছু মাস অপেক্ষার পরে প্রথম সেঞ্চুরিটি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সেরে ফেলেন ব্যাট হাতে। ১২৩ বলে ১৪৮ রানের ইনিংস পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ইনিংসে ১৫ টি বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারি। এমনটাই জাত ছিল ধোনির। ব্যাট হাতে ভয় পেতেন না তাবর বোলারদের। জীবনের শুরু থেকে ক্রিকেটের গ্রামারের বাইরে হলেও হাফ ভলি বলটা ছাড়তেন না কখনও। ধোনির চেন্নাইতে ২০০৫ সালে টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল। তবে একবার দলে ঢুকে যাওয়ার পরে ভারতীয় দলের এই ক্রিকেটারকে পারফরমেন্সের জন্য কোনদিনও বাদ পড়তে হয়নি।
২০০৭ সালে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর তারপর ফিরে তাকাতে হয়নি রাঁচির জেন্টেলমেন ক্রিকেটারকে। ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ তারপর ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই সবকটা ট্রফি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ক্যাবিনেটে এনে দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুল। আর সেই ক্যাপ্টেন কুল আজ পা দিলেন ৪০ বছর বয়সে। শুধুই কী ক্যাপ্টেন্সি! ব্যাট হাতে ও উইকেটের পিছনেও সেরা মাহি। একা হাতে ম্যাচ বাড়ে করে দিতেন ভারতীয় জার্সি গায়ে। ক্যাপ্টেন ইনিংস। উইকেটের পিছনে ধোনি থাকলে পপিং ক্রিজ ছেড়ে বাইরে যেতে ভয় পেতেন ব্যাটসম্যানরা।
নীল জার্সি গায়ে আর হয়তো মাঠে নামবেন না তিনি কিন্তু এখনও ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে পারেননি মাহি। নিজের প্রথম প্রেমকে জিইয়ে রাখতে আইপিএল এর মাধ্যমে নিজেকে ২২ গজে বাঁচিয়ে রেখেছেন মাহি। তিনি জানেন ক্রিকেট শূন্য থাকলে তার ভক্তরা সেটা মেনে নেবে না।
স্টেডিয়ামে ধোনি...ধোনি...! বলে চিৎকার আরও কিছুদিন চালিয়ে যেতে পারেন দর্শকরা। তবে বেশিরভাগটাই এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন ভারতীয় অধ্যায়ের অন্যতম সফল ক্যাপ্টেন। আর তার সিগনেচার হেলিকপ্টার শট এখনও দেখা যাবে ২২ গজ। কিন্তু নিজের অবসর জীবনেও তিনি হেলিকপ্টার মেরে ওভার বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছেন।
রাঁচির বাড়িতে বা অন্য কোথাও ধোনি হয়তো নিজের ৪০তম জন্মদিন সেভাবে সেলিব্রেট করবেন না। কারণ তিনি এই সব খুব একটা পছন্দ করেন না। যেমনটা বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার পরেও ধোনিকে বিশাল উচ্ছ্বাসে দেখা যায়নি। কারণ তিনি পরবর্তীর জন্য ভাবতেন। কিন্তু অধীর অপেক্ষায় তার এই দিনটাকে উদযাপন করবেন তার ফ্যানরা।