scorecardresearch
 

বন্ধ খেলাধুলো! ময়দান মার্কেটের অচেনা ছন্দ ঘুম কাড়ল ব্যবসায়ীদের

দেশে ঊর্ধ্বমূখী কোভিডের গ্রাফ। আর তারই মাঝে ময়দান মার্কেটের বিধান চন্দ্র রায় মার্কেটে চলছে না ব্যবসা। বেশ চাপের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বন্ধ খেলাধুলো, স্পোর্টস কমপ্লেক্স সহ কোচিং সেন্টারগুলি। ফলে কি হতে পারে ভবিষ্যৎ চিন্তায় ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement
ময়দানে এমন দৃশ্য খুঁজে পাওয়া এখন বেশ কঠিন। ফাইল ছবি। ময়দানে এমন দৃশ্য খুঁজে পাওয়া এখন বেশ কঠিন। ফাইল ছবি।
হাইলাইটস
  • পশ্চিমবঙ্গে করোনার কোপ, বন্ধ খেলাধুলো
  • রাজ্যে মিনি লকডাউন, মাথায় হাত ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ীদের
  • খেলোয়াড় নেই ময়দানে, বিক্রি নেই খেলার সরঞ্জাম

''ও দাদা নিয়ে যান! দাদা কি লাগবে! দাদা কেকেআরের জার্সি আছে! দাদা মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল!!!'' ধর্মতলার গ্র্যান্ড হোটেলের উল্টো ফুটপাথ দিয়ে হাঁটলে এমন কিছু শব্দ কানে ভেষে আসাটা স্বাভাবিক। ভিড়ে ঠাসা বাজারে ফুটবল হোক বা ক্রিকেট, তখন শুধু রমরমা ময়দানের উঠতি তারকা সহ বিভিন্ন ক্রীড়াবিদদের। কলকাতার ঐতিহ্যশীল নিউ মার্কেটের পাশাপাশি ধর্মতলায় বিধান চন্দ্র রায়ের নামে এই মার্কেটও অন্যতম জনপ্রিয়, বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় ময়দান মার্কেট নামে। ময়দানের ক্রীড়া সামগ্রী ও কলকাতার ক্রীড়া সরঞ্জামের সবচেয়ে বড় মার্কেট এটই।

বছর দেড়েক আগে ময়দান মার্কেটের চিত্র জমজমাট থাকলেও, সম্প্রতি বদলে গিয়েছে মার্কেটের দৃশ্য। দাদা বলে ডাকার আগে বেশ কিছু বার ভাবচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দেখা মিলছে না ক্ষুদে ক্রিকেটার বা ফুটবলারদেরও। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, ইস্টবেঙ্গল হোক বা মোহনবাগান, কেকেআর হোক বা ভারতীয় দলের জার্সি, সব কিছুই ঝুলিতে আছে ময়দান মার্কেটের। কলকাতার ময়দান মার্কেট থেকে ক্রীড়া সামগ্রী পৌঁছে যায় ক্রীড়া শিক্ষানবিষদের কাছে। কিন্তু করোনা নামক মারণ ভাইরাস এখন থাবা বসিয়েছে সেখানেও। কোভিডের ঊর্ধ্বমূখী গ্রাফ সামাল দিতে ইতিমধ্যেই লকডাউনের আয়োত্তে বেশ কিছু রাজ্য থেকে শহর। মিনি লকডাউন চলছে রাজ্যেও। রাজ্য সকরকারের নোটিশ অনুযায়ী বন্ধ হয়ে গিয়েছে কোচিং সেন্টার, স্পোর্টস কমপ্লেক্সগুলি। আর সেখানেই ঘুম উড়ে গিয়েছে ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। ময়দান মার্কেটের ক্রিকেট কিটস বিক্রেতা রাজা সাহা বলছিলেন, 'এক বছর হয়ে গেল লাভ করতে পারিনি। বিক্রি নেই। দিনে একটা ব্যাট, একটা বল বিক্রি করতে পারছি না। খুবই কঠিন সময়।'

গত দেড় বছর ধরেই নিজেদের ব্যবসা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর এই সময়টায় ময়দানে চলে ক্রিকেট থেকে ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল সহ বিভিন্ন স্পোর্টস। মেগা ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ আইপিএলও চলে ইডেন গার্ডেন্সে। সেটা শেষ হতেই শুরু হয় ফুটবল। কলকাতা লিগের প্রস্তুতি, আইলিগ সহ আইএসএল। তবে এখন সবটাই ক্লোজডোর। শুধু তাই নয় প্রফেশনাল খেলা ছাড়া বাকি সবটাই বন্ধ। আর তাতেই রাতের পর রাত ঘুম উড়ে গিয়েছে ময়দান মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। নেই বিক্রি, নেই ক্রেতা, আসছেন না কোনও খেলোয়াড়। 

Advertisement

জার্সি বিক্রেতা সইফুল বললেন, 'জার্সি নিয়ে বসে আছি। পরার কেউ নেই। খেলা হলে সবাই কিনে নিয়ে যায়, আইপিএল চললে দর্শকরাও কেনে। ফুটবলটাও বন্ধ হয়ে গেল। সব পুজি শেষ। দুবছর পর পর এমনটা হলো কি যে করব জানি না।' ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রেতা বিবেক গুপ্ত বলছিলেন, 'আমরা বেচতে পারছি না। সঙ্গে সরঞ্জামের দামও বেড়ে যাচ্ছে। নতুন কিছু কিনতেও সাহস পাচ্ছি না। সরকার একটু যদি আমাদের কথা ভাবতো ভালো হতো। শীতকালটা চলে গেল ব্যবসা করতেই পারিনি। এরপর ভালো ভাবে খেতে পারবো না পরিবার সহ।'

খেলোয়াড়দের সংখ্যা কমেছে। কোভিডের কারণে খেলাধুলো ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই। কোচিং ক্যাম্পগুলোও ফের বন্ধ। একে একে যখন মারণ ভাইরাস প্রাণ কারছে বিভিন্ন মানুষের। তখন অন্যরকম হাহাকার কলকাতার ময়দানে। জীবিকার লড়াই, সঙ্গে বাচার লড়াই, করোনার চেন ভাঙুক না ভাঙুক। ময়দানের চেনটা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে কোভিড-১৯। তবুও ওরা বলছিলেন, আবার হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে, 'উই শ্যাল ওভার কাম'।

Advertisement