Kolkata Police: 'নিরুদ্দেশ' বিরিয়ানির হাঁড়ি খুঁজতে গিয়ে 'কিডন্যাপ' যুবক! রাতভর তল্লাশির পর হতভম্ব পুলিশ! সবাই অক্ষত রয়েছেন। যা নিয়ে চর্চা, সেই হাঁড়ির খোঁজ আপাতত মেলেনি।
আরও পড়ুন: আবার বাঘের দেখা সুন্দরবনে, লঞ্চটির একেবারে কাছে রয়্যাল বেঙ্গল
১০০ ডায়ালে ফোন
শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ১০০ ডায়ালে লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে আচমকা একটি ফোন আসে। দক্ষিণ কলকাতার গড়ফা থেকে এক ব্যক্তি ভয়ার্ত গলায় জানান, তাঁর ভাইকে বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বেশ কিছুক্ষণ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর তিন-চারজন যুবক মিলে তার ভাইকে একটি চারচাকা গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: Pedicure থেকে ইনফেকশন, পার্লারকে ১৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
তৎপর পুলিশ
তাই ভাইকে দ্রুত উদ্ধারের কাতর আর্জি জানিয়ে লালবাজারের দ্বারস্থ হন তিনি। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে এমন খবর পৌঁছতেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় লালবাজারে। অপহরণ করে গাড়িটি কোন দিকে যেতে পারে তার সম্ভাব্য রুটের সমস্ত ট্রাফিক গার্ডকে সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী সব থানাগুলোকেও।
আরও পড়ুন: IT Return নিয়ে দু'টি বড় সিদ্ধান্ত, লাভ হবে করদাতাদের
এদিকে লালবাজারের সর্তকতা পেয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে রাতের ডিউটিতে থাকা পুলিশের টহলদারি ভ্যানগুলি। ততক্ষণে রাতের শহরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নাকা চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টদের ওয়াকিটকিতে ভেসে আসছে সন্দেহভাজন গাড়িটির বিবরণ এবং তা দেখা মাত্রই দ্রুত পাকড়াও করার বার্তা। একই সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করে গড়ফা থানার পুলিশও।
আরও পড়ুন: Omicron ঠেকাতে তৎপর রাজ্য, একগুচ্ছ পরিকল্পনা
আসলে যা হয়েছে
সন্দেহজনক এই গাড়িটি খোঁজাখুঁজি শুরু করার ঘন্টা তিনেক পরেই অবশ্য জানা যায় আসল কাণ্ড। 'অপহৃত ব্যক্তি'র মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে রাতের মধ্যেই খোঁজ পাওয়া যায় তাঁর। পুলিশের ফোন পাওয়ার পর ওই সন্দেহভাজন গাড়িতে করেই সকলে মিলে হাজির হন গড়ফা থানায়।
আরও পড়ুন: কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্য়ালে থাকছে তাঁর সিনেমা, কেন এখনও অটুট কলকাতার গদার-প্রেম
হাঁড়ি নিয়ে এত কাণ্ড
তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানা যায়, অপহরণ নয় বরং রোশন সিং নামে ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে বিরিয়ানির হাঁড়ির সন্ধানে বেরিয়ে ছিলেন তিন চারজন যুবক। তাঁদের স্বীকারোক্তি শুনে ততক্ষনে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশ আধিকারিকদের।
তাজ্জব পুলিশ
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে 'অপহৃত ব্যক্তি'র দেওয়া বয়ান শুনে রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েন লালবাজারের কর্তারাও। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, পেশায় ডেকরেটর ব্যবসায়ী রোশন সিং গড়ফা থানা এলাকার যাদবগড়ের বাসিন্দা।
বাবু নামে আর এক ডেকরেটর ব্যবসায়ীর থেকে একটি বিরিয়ানির হাঁড়ি সহ বেশ কিছু জিনিস ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। সেগুলি আবার ভাড়াতেই অন্য কাউকে দিয়েছিলেন রোশন। বহুদিন হয়ে গেলেও বিরিয়ানির হাঁড়ি ফেরত না দেওয়ায় বাবুর হুঁশিয়ারির মুখে পড়েছিলেন রোশন সিং। এমনই অভিযোগ।
চাইলেও মেলেনি, তাই...
বারবার ফেরত চেয়েও হাঁড়ি না পাওয়ায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে ডেকরেটর বাবুর। ফলে এদিন তিন-চারজন যুবককে নিয়ে গাড়ি করে এসে রোশন সিংয়ের বাড়িতে হাজির হন বাবু। এরপর কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর সেই নিখোঁজ হাঁড়ির সন্ধানে রোশনকে গাড়িতে তুলেই রওনা দেন ওই ডেকরেটর ব্যবসায়ী।
বিহারের দাদা
কিন্তু তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে লালবাজারের ফোন গেলো কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত অন্য জায়গায়। কিছুদিন আগেই রোশন সিংয়ের বাড়িতে এসেছেন তাঁর এক দাদা। যিনি বিহারের বাসিন্দা। রাতের বেলা ভাইয়ের সঙ্গে কিছু অপরিচিত যুবকদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং তারপর তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে তিনি ঠাওর করেছিলেন, ভাইকে বুঝি কেউ অপহরণ করে নিয়ে গেল।
এরপরই ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে ১০০ নম্বরে ফোন করে লালবাজারের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে গোটা বিষয়টি জানান উদ্বিগ্ন দাদা। যার জেরেই রাতভর তল্লাশি চালিয়ে হতভম্ব হয়ে ফিরতে হল কলকাতা পুলিশকে। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, রোশন সিং ভোরের সূর্য উঠার আগে বাড়ি ফিরে এলেও তার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিরিয়ানির হাঁড়িটির অবশ্য এখনও সন্ধান মেলেনি।