মালদার আম চাষে শুলি পোকার হানা। মাথায় হাত জেলার প্রায় লক্ষাধিক আমি চাষির। একদিকে করোনা আবহ, বন্ধ ভিন রাজ্যে আমের রপ্তানি। জেলাতেও আমের দাম পাচ্ছেন না তারা। ইতিমধ্যেই অনিয়মিত আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার এই মূল অর্থকরী ফল।
অনেকেই চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে এই চাষ করেন। ফলে একদিকে করো না অন্যদিকে এই শুলি পোকার আক্রমণ, দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণ নাজেহাল মালদা জেলায় আম চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ৪ লক্ষ কৃষক।
জেলার প্রবীণ আমচাষি দ্বিজেন ঘোষ জানিয়েছেন, লকডাউনে যখন বিশাল ক্ষতির মুখে জেলার আম চাষিরা, তখন এই পোকা জেলার আম চাষকে ব্যাপকভাবে আরও ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই পোকার আক্রমণে আম কালো হয়ে যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট হচ্ছে। কখনও বা গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। এভাবে বহু আম নষ্ট হয়ে গেছে। শুলি পোকার আক্রমণে আমরা দিশেহারা।
অন্য এক চাষি অরুণ ঘোষ জানিয়েছেন, সাধারণত বড় আমের ক্ষেত্রেই এই পোকার আক্রমণ বেশি। বহু টাকা চড়া সুদের হার করে আমরা এই চাষ করেছি। এই পোকার আক্রমণ আটকাতে না পারলে, চাষিরা পথে বসবে।
প্রতি বছরই নিয়ম করে এই পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার আম চাষ। মালদা জেলায় বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। মালদা জেলার অর্থনীতি ক্ষেত্রে এই আম চাষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলার প্রায় ৪ লক্ষ্য মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অর্থকরী ফল চাষের সঙ্গে যুক্ত।
জেলার আম চাষিদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, জেলার অর্থনীতিতে এই চাষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করলেও, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার তথা বাগিচা পালন দপ্তরের আধিকারিকরা এই চাষ সম্পর্কে উদাসীন। নিয়ম করে করা হয়না কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও। ফলে ফি বছরই ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার অর্থনীতি।
যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি, জেলার উদ্যানপালন বিভাগ এর আধিকারিকরা। উদ্যানপালন দপ্তর আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু নন্দন জানিয়েছেন, গত ৪-৫ বছর ধরে মালদা জেলার আম চাষে বিরাট ক্ষতি করছে এই প্রকার।
আম যখন ছোট থাকে তখন থেকে শুরু করে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই প্রকার আক্রমণ দেখা যায়। এর ফলে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ ফলন মার খায়।
এই পোকার আক্রমণে, প্রথমে আমের গায়ে এই পোকা ডিম পাড়ে, পরে এর লার্ভা আমের ভেতরে ঢুকে প্রথমে আমের নরম অংশ এবং পরে আঁটিটাকে খায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন চাষি।