Megacity In Darjeeling-Kalimpong: দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং হবে মেগাসিটি। জিটিএ-র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দার্জিলিংয়ের ২০ একর জমি দান করবেন এক ব্যক্তি। সেই জায়গাতে হবে এই মেগাসিটি বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলাশাসকদের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দার্জিলিং ম্যাল থেকে এই ঘোষণা করেন তিনি। মিরিক এলাকা ছোট হওয়ায় সেখানে ইকো ট্যুরিজম এ জোর দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
"পাহাড়কে দখল করতে নয়, ভালবাসতে আসি"
দার্জিলিংকে আমূল পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের প্রতিটি ঘরে দেড় বছরের মধ্যে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে একাধিক পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে রাজ্য সরকার সহায়তা করবে বলে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, "পাহাড়ে শান্তি রাখুন। উন্নয়নের সুযোগ নিন। পাহাড়ে শান্তি থাকলে উন্নয়ন আসবে।" তিনি পাহাড়বাসিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, "আমি এখানে ভালবাসতে এসেছি, দখল করতে নয়।" বার্তা পরিষ্কার, পাহাড় চলবে পাহাড়বাসীর নিয়ন্ত্রণেই।
কী থাকবে মেগাসিটিতে?
দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পংয়ে মেগাসিটি তৈরি হব। এখানে স্কুল-কলেজ থেকে শপিংমল, ট্যুরিজম হাব থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক পার্কিং, হাসপাতাল, আইটি হাব সমস্ত কিছুই তাতে রাখা হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন হলে পৃথক আইটি হাব করার কথা বলেছেন তিনি।
পাহাড়ের দুই জেলাতেই আইটি হাব
দার্জিলিং ও কালিম্পং এর পৃথক আইটি হবে পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নির্দেশ দেন, বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে গোটা দেশের মানুষ এসে বসবাস করতে শুরু করছে। বাইরে থেকে কে কী বলছেন, সমালোচনা করছেন, তারা রাজনীতির কারণে করছেন। পশ্চিমবঙ্গে শান্তি রয়েছে। বাইরের লোক এখানে আসছেন। এখানে আইটি হাব হওয়ার সমস্ত রকম সুবিধা রয়েছে। দার্জিলিং ও কালিম্পং আইটি হাব প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কতা পাহাড়বাসীকে
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এটি মনে করিয়ে দেন যে পাহাড়ে কোনও রকম সিস্টেমে কাজ হয়নি। যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা কংক্রিটের নির্মাণ নিয়েও তিনি সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন পাহাড়ে কোনও সিস্টেম ছিল না। এটি কি এখন ঠিকঠাক করতে হবে। কারণ ভূমিকম্প হলে পাহাড়বাসীকে বাঁচানো মুশকিল হবে। অনিয়ন্ত্রিত কংক্রিট নির্মাণের কারণে তাই নতুন করে যা হবে নিয়ম মেনে করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় ছেলেমেয়েদের জন্য পাহাড়ি বন্দোবস্ত করার কথা বলেছেন। মংপুতে ইউনিভার্সিটি এবং কার্শিয়াং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বর্ধিত ক্যাম্পাস দ্রুত চালু করে দেওয়ার কথা তিনি জানিয়েছেন এবং মহিলাদের জন্য আলাদা শপিং মল করে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
প্রতিটি ঘরে পৌঁছবে পানীয় জল
তিনি পাহাড়ের জল সমস্যা সমাধানে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন পাহাড়ের ঝরনার জলগুলিকে রিজার্ভারে রেখে তা ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। রিজার্ভার তৈরি করার প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শুরু করা হবে। দার্জিলিং পৌরসভা, জিটিএ এগিয়ে এলে রাজ্য সরকার সহায়তা করবে। ১০-১২টি ঝোরাকে চিহ্নিত করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী. যেখানে সারা বছর কম বেশি জল থাকে। সেটিকে পরিশ্রুত পানীয় জলে পরিণত করে প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া আগামী দেড় থেকে দু বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পাহাড়ে পাইপ লাইন বসানোর কাজ কিছুটা কষ্টসাধ্য। তবে তা অসম্ভব কিছু নয়। আগামী দেড় থেকে দু বছরের মধ্যে এই জল মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছবে।
হোম-স্টে ও ইকো টুরিজম
চা-বাগানগুলিতে আলাদা হোমস্টে তৈরি করার কথা তিনি জানিয়েছেন তিনি। বলেন ইতিমধ্যেই জিটিএ বোর্ডের সম্ভাব্য চিফ এক্সিকিউটিভ অনিত থাপার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি চা বাগানগুলিতে ইকো ট্যুরিজম চালু করার দাবি জানিয়েছেন। সেটি খুব ভালো প্রস্তাব বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় হোমস্টেতে রাজ্য সরকার উৎসাহ দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ৬০০ জনের মধ্যে ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছে যারা হোস্টেল ব্যবসা করেন। লামাহাটা কয়েক বছরের মধ্যে বদলে গিয়েছে। মিরিক ছোট হওয়ায় এখানে ইকো টুরিজমে হাব করা হবে। মিরিক পুরসভা তৃণমূলেরই দখলে। তাই সেখানে কাজ করতেও আরও সুবিধা হবে।
জিটিএ-তে শপথ গ্রহণ
এদিন জিটিএ বোর্ডের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রথমেই শপথ নেন বিজিপিএমের সভাপতি অনিত থাপা। এরপরে একে একে অন্যান্যরাও শপথ গ্রহণ করেছেন। দার্জিলিং এর ভানুভবনে ভানু ভক্তের জন্মদিন অনুষ্ঠান পালন করা হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।