scorecardresearch
 

শাহ-মোদীরাই অভিষেককে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন, মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের ভোটে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এটাই তৃণমূল নেত্রীর সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু, কেন অভিষেককেই দলের নম্বর টু করলেন মমতা?

Advertisement
শাহ, মোদী ও অভিষেক শাহ, মোদী ও অভিষেক
হাইলাইটস
  • নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা অভিষেককে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তুলছেন
  • মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের ভোটে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এটাই তৃণমূল নেত্রীর সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু, কেন অভিষেককেই দলের নম্বর টু করলেন মমতা? সুব্রত বক্সি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়দের মতো বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের ছেড়ে কেন অভিষেককেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রোজেক্ট করা হল? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

এতদিন ধরে তৃণমূলের যুব মুখ ছিলেন অভিষেক। সেখান থেকে তাঁকে সরাসরি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করার পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কার্যত সবাই একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন, অভিষেককে নিয়ে বিতর্ক বা দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনিই এখন তৃণমূলের যোগ্য মুখ। তাই তাঁকেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছেন দলনেত্রী। 

আরও পড়ুন : 'সংসদের সাইটে নুসরত বিবাহিত, কোর্টে অবিবাহিত প্রমাণ করতে হবে'

অভিষেককে যোগ্য মুখ বলার পিছনে রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, পরিবারতন্ত্রের ছোঁয়া অভিষেকের পদোন্নতির মধ্যে রয়েছে, একথা একেবারেই ঠিক। তবে অভিষেকই এখন তৃণমূলের যোগ্য মুখ। কারণ, একুশের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে রাজ্যের মানুষের উপর সবথেকে বেশি দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছেন অভিষেকই। ডায়মন্ডহারবারের এই সাংসদ পরিশ্রমী, বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত। তাঁর ইংরেজি ও হিন্দিটাও ভালো। তাই তিনিই যোগ্য মুখ। অভিষেককে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের বড় 'অবদান' আছে বলেও মনে করেন উদয়ণবাবু। তাঁর কথায়, 'রাজ্যে বারবার এসে অভিষেককে ভাইপো বলে বারবার আক্রমণ করেছেন মোদী-শাহরা। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাঁকে এত টার্গেট করেছেন, তিনি যে প্রচারের আলোয় আসবেন, সেটাই স্বাভাবিক। অভিষেকের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আগে তাঁকে হয়তো শুধু রাজ্যের মানুষ চিনত। মোদী-শাহর দৌলতে অভিষেক এখন দেশজোড়া পরিচিত।' 

উদয়ণবাবুর মতের সঙ্গে একমত রাজনৈতিক আলোচক তথা অর্থনীতিবিদ মহানন্দা কাঞ্জিলালও। তাঁর কথায়, 'রাহুল গান্ধিকে পাপ্পু পাপ্পু বলে প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি। সেই প্রচার তাদের কাজে দিয়েছিল। একই কৌশল অভিষেকেই ক্ষেত্রেও নিয়েছিলেন মোদী-শাহরা। তাঁরা ভাইপো ভাইপো বলে অভিষেককে একটানা আক্রমণ করেছেন। এতে লাভ অভিষেকেরই হয়েছে। বলা যেতে পারে অভিষেককে নিয়ে বিজেপির ঋণাত্মক প্রচার, তৃণমূলের কাছে ধনাত্মক হয়ে ধরা দিয়েছে। 

Advertisement

আরও পড়ুন : ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ক্লাস টুয়েলভে তুলতে হবে, নির্দেশ WBCHSE-র

মহানন্দাদেবী আরও বলেন, 'পরিবারতন্ত্রের জন্য অভিষেককে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করেছেন মমতা- এই যুক্তি আজকের দিনে ধোপে টেকে না। সেই নেহরুদের যুগ থেকে পরিবারতন্ত্র চলে আসছে। প্রচুর রাজনীতিবিদের ছেলে পরিবারতন্ত্রের সুবাদেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। তাই মানুষ এগুলো দেখে অভ্যস্ত। তবে মনে রাখতে হবে, অভিষেক জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি। জেতার পিছনে তাঁর নিজস্ব দক্ষতা-যোগ্যতা অবশ্যই রয়েছে। তবে জাতীয় রাজনীতিতে উনি কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন, সেটা সময় বলবে। এত তাড়াতাড়ি বলা সম্ভব নয়।' 

মহানন্দাদেবীর মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিষেককে সর্বভারতীয়স্তরে প্রোজেক্ট করার পিছনে বড় কারণ হল, অতীত থেকে শিক্ষা। তাঁর কথায়, 'মুকুল রায় একসময় তৃণমূলের নম্বর টু ছিলেন। তিনি দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। আবার ঠিক একুশের ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী, সব্যসাচী দত্ত, সোনালী গুহ, শীলভদ্র দত্তর মতো মমতা ঘনিষ্ঠরা দল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিলেন। এতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিলেন। আমার মনে হয়, শুভেন্দু দল ছাড়ার পর উনি সবথেকে হতাশ বেশি হতাশ হন। মুখে প্রকাশ না করলেও ফলাফল বেরনোর আগে পর্যন্ত উনি শঙ্কিত ছিলেন। ফলাফল সামনে আসার পর তাই আর ঝুঁকি নেননি। অভিষেক নিজস্ব একটা পরিচিত এমনিতেই করতে পেরেছেন। আবার তিনি দলনেত্রীর নিকটাত্মীয়ও। এই ভাবনা থেকেই তাঁকে জাতীয় রাজনীতিতে তুলে ধরতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।' 

আরও পড়ুন : নিখিলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ৭ দিন পর নুসরতের ৭ বিস্ফোরক জবাব

এই দুই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই বলছেন, অভিষেককে সামনে এনে আসলে মোদী-শাহদের বিরুদ্ধে মাস্টারস্ট্রোক খেলতে চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর লক্ষ্য ২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। তবে নেত্রীর দেওয়া ভার কতটা সফলভাবে পালন করতে পারবেন অভিষেক, তা সময়ই বলবে। 

Advertisement