মারণ করোনা ভাইরাসের জেরে অন্যান্য একাধিক সেক্টরের মতো বিস্তর প্রভাবিত শিক্ষাক্ষেত্র। প্রায় দু'বছর ধরে ডিজিটাল মাধ্যমই শিক্ষার্থীদের ভরসা। তাই পড়ুয়াদের সংস্কৃতিচর্চার স্বার্থে এই বছর 'ইস্কুলে বায়োস্কোপ' (Iskule Bioscope) ভার্চুয়াল মাধ্যমেই আয়োজন করছে 'ছোটোদের সৌমিত্র' (Chotoder Soumitra)। স্বুলে গিয়ে বায়োস্কোপ দেখানো সম্ভব না। কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে তাই অনলাইনেই, তাঁর অভিনীত ছ'টি শিশু চলচ্চিত্র বেছে নেওয়া হয়েছে।
'সোনার কেল্লা', 'জয় বাবা ফেলুনাথ', 'হীরক রাজার দেশে', 'কনি', 'পাতালঘর' ও 'মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি' না- দেখানো গেলেও, অনলাইন মাধ্যমে সেগুলি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সেই আলোচনায় সরাসরি উপস্থিত থাকবেন শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore), গৌতম ঘোষ (Goutam Ghosh), অতনু ঘোষ (Atanu Ghosh), রূপক সাহা (Rupak Saha) ও সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Siddhartha Chatterjee) মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ২০ টি স্কুলের প্রায় দশ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করবে এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আলোচনা ছাড়াও থাকবে তাঁর অভিনীত ছোটোদের চলচ্চিত্রগুলির ওপর কিছু প্রতিযোগিতামূলক ও সৃজনশীল কাজকর্ম, যেগুলিতে ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। বিজয়ীদের সকলকে 'ইস্কুলে বায়োস্কোপ'-র পক্ষ থেকে শংসাপত্রও দেওয়া হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই উপস্থিত থাকবেন সৌমিত্র কন্যা তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব পৌলমী বসু, অতনু ঘোষ, অমিতাভ নাগ, রূপক সাহা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করবেন এস. ভি. রামন। আগামী ১৮ জুন, বিকেল ৫টা নাগাদ, ইস্কুলে বায়োস্কোপের ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠানটি দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: সৌমিত্রর প্রথম ও শেষ ওয়েব সিরিজ! এবার ওটিটি -তে রহস্যে মোড়া 'Next'
পড়ুয়াদের জন্য স্কুল পর্যায়ে বায়স্কোপের এই অভিনব ভাবনা বেঙ্গালুরু-নিবাসী বাঙালী কৌশিক চক্রবর্তীর। তিনি জানালেন, "বাংলা সিনেমার জন্য কিছু একটা না করতে পারলে যেন স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। তাই, একটা ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করলাম। ইস্কুল পর্যায়ে শিক্ষা ও সিনেমার মেলবন্ধনই ছিল সেই ব্লু-প্রিন্টের মূল বিষয়। যোগাযোগ করতে শুরু করলাম শিক্ষা ও সিনেমার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে। শেষমেশ অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার চৌধুরীর সাহায্যে পৌঁছলাম চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (Children's Film Society Of India/ CFSI)-র দরবারে। গৃহীত হল প্রস্তাব, আর কাজও শুরু হল। প্রথম বছর অবশ্য নাম ছিল 'সিএফএসআই বেঙ্গলি চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল' এবং অনুষ্ঠিত হয়েছিল হেয়ার, হিন্দু, লরেটো, লা-মার্টিনিয়ার, স্কটিশ চার্চ-সহ কলকাতার ২০টি নাম করা স্কুলে।"
আরও পড়ুন: "আমি রূপান্তকামী বলেই কি করোনা পরীক্ষা হল না? প্রশ্ন অসুস্থ মানবীর
'ইস্কুলে বায়োস্কোপ'-র যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। এর আগে বাংলা সিনেমাকে নিয়ে এই ধরনের শিক্ষা-বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান খুব একটা দেখা যায়নি। প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫টি স্কুলে গিয়ে সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল বাংলা সিনেমা দেখানো হয়। সত্যজিৎ রায়, সন্দীপ রায়, ঋতুপর্ণ ঘোষ, তপন সিনহা, নীতিশ রায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের মতো একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বানানো ছবি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোরঞ্জন করানো হয়। প্রতিটি স্কুল স্ক্রিনিংয়ের সঙ্গে থাকে সরাসরি যোগাযোগ, লাইভ ক্যুইজ, রিভিউ রাইটিং কম্পিটিশান সহ আরও অনেক কিছু।
আরও পড়ুন: 'শুট ফ্রম হোম' নিয়ে একরাশ ক্ষোভ, সন্দেহ প্রকাশ ফেডারেশনের
কৌশিকবাবু আরও বললেন, "ইতিমধ্যে আমরা একশোটির কাছাকাছি স্কুলের প্রায় এক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর কাছে পৌঁছতে পেরেছি। ওই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সচরাচর বাংলা সিনেমা দেখা হয়ে ওঠে না। আমরা ওই ছাত্র-ছাত্রী, তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বাবা-মায়েদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং সারা বছরই স্কুলগুলির মাধ্যমে তাদের বাংলা সিনেমা সংক্রান্ত কিছু না কিছু কাজ করতে বলছি। এর ফলে তারা মাঝেমধ্যেই নতুন নতুন বাংলা সিনেমা দেখছে, সেগুলো উপভোগ করছে, এবং যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে কাজগুলো করে তাদের ইস্কুলে জমা দিচ্ছে। নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখা ও সেগুলো নিয়ে চর্চা করার একটা অভ্যাস তাদের মধ্যে তৈরী হচ্ছে। এই অভ্যাসকে ধরে রাখতে যদি আমরা, শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও অভিভাবকরা সবসময় তাদের পাশে থাকি, আগামী দিনে এরাই হয়ে উঠবে বাংলা সিনেমার একনিষ্ঠ দর্শক।"
আরও পড়ুন: কার্যত লকডাউনে সহজের সঙ্গে বিশেষ সময় কাটছে প্রিয়াঙ্কার!
এই বছর সমগ্র অনুষ্ঠানটি নিবেদন করছেন শ্যাম সুন্দর কোম্পানি জুয়েলার্স। যার কর্ণধার রূপক সাহা বললেন,"এই সুন্দর উদ্যোগে আমরা অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। এরকম ভাবনায় এক অভিনবত্ব আছে। আশা করি সকলের এই উদ্যোগ ভালো লাগবে।" 'ছোটোদের সৌমিত্র' অনুষ্ঠানটি চলবে গামী ১৮ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। বিদেশের বাঙালী ছাত্র-ছাত্রীরাও এখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে।