RG Kar Sandip Ghosh Arrest: সোমবার আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে CBI। প্রায় ১৫ দিন জিজ্ঞাসাবাদ চলে। আর তারপর আরজি করে দুর্নীতির অভিযোগে এই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্দীপ ঘোষ ছাড়াও বিপ্লব সিং, সুমন হাজরা এবং অফিসার আলি খানের নাম রয়েছে।
এর আগে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
অর্থাৎ, সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট গ্রেফতার পাঁচ।(RG Kar Latest News)
১. সঞ্জয় রায়:- সঞ্জয় রায় চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত। এখনও পর্যন্ত তদন্ত অনুযায়ী, সঞ্জয় একাই এই অপরাধে জড়িত। সিবিআইয়ের কাছে তার বিরুদ্ধে ৫৩টিরও বেশি প্রমাণ রয়েছে। এগুলি থেকেই তার অপরাধের বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন গোয়েন্দারা। বর্তমানে সঞ্জয় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে। ঘটনার দিন সকালেই তাকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। সঞ্জয় কলকাতা পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার ছিল।
সঞ্জয় রায়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন
২. সন্দীপ ঘোষ:- সন্দীপ ঘোষ কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন। সোমবার হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার ডাঃ আখতার আলি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে হাসপাতালের বেওয়ারিশ দেহ পাচার, বায়ো-মেডিকেল বর্জ্য দুর্নীতি, নির্মাণের টেন্ডারে স্বজনপ্রীতির মতো অভিযোগ রয়েছে।
সন্দীপ ঘোষ এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন
৩. বিপ্লব সিং:- বিপ্লব সিং আরজি করে দুর্নীতির মামলায় সহ-অভিযুক্ত। তাঁর একটি সংস্থা রয়েছে, যার নাম 'মা তারা ট্রেডার্স'।
এই ঘটনায় মা তারা ট্রেডার্সের নামে FIR দায়ের করা হয়েছে। বিপ্লব সিংয়ের বাবা মেডিকেল কলেজে চাকরি করেন।
বিপ্লবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাবার পরিচিতি কাজে লাগিয়ে হাসপাতালে পোস্টার-ব্যানার বানানোর ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে ওষুধ সরবরাহের কারবার শুরু করেন।
৪. সুমন হাজরা:- সুমন হাজরা হাসপাতালে জিনিস সাপ্লায়ারের কাজ করেন। সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি ওষুধ ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট কিনে সেগুলো বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
হাজরা মেডিকেল শপ নামে তাঁর একটি দোকানও রয়েছে।
সুমন ও বিপ্লব কলকাতায় একই এলাকায় থাকেন। দু'জনেই সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ। দুর্নীতির মামলায় তাঁর সহযোগী বলে অভিযোগ।
৫. আফসার আলি খান:- সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠমহলের অন্যতম নাম আফসার আলি খান। এই আখতার আলি খানেরই 'দিদিকে ফোন করব' হুমকির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।
অভিযোগ, সন্দীপ নিজের সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রাখতেন। তাতে বাউন্সার হিসেবে কাজ করত আফসার আলি খান। আরজি কর কাণ্ড সামনে আসার পর এই আফসার আলি খানের বিরুদ্ধে হাসপাতালের জৈব বর্জ্য বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ, বাংলাদেশের একজনকে সেই সব বিক্রি করতেন আফসার। তার মধ্যে থাকত সিরিঞ্জ, গ্লাভস ইত্যাদি।
১৯ অগাস্ট কলকাতা পুলিশ সন্দীপ ঘোষ সহ ৪ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইপিসির 120B, 420 ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৮৮-র ৭ নম্বর ধারায় মামলা রেজিস্টার করেছিল। এর পরে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে, সিবিআই ২৪ অগাস্ট তদন্তের দায়িত্ব নেয়।
এই উপরোক্ত ধারাতেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেনে নিন কোন ধারায় কী কী শাস্তি হতে পারে...
IPC-র 120B ধারা- ভারতীয় দণ্ডবিধির 120B ধারায় একত্রে কোনও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের জন্য এই ধারা আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত নিজেই যে সব অপরাধ করেছে এমনটা নয়। কেউ এ ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ হলেও এই ধারা প্রযোজ্য।
শাস্তি- যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ২ বছর বা তার বেশি সশ্রম কারাদণ্ড।
IPC-র 420 ধারা - প্রতারণা, জালিয়াতি এবং অসৎ উপায়ে আয়- এই সবকিছুর বিরুদ্ধে এই ধারার অধীনে একটি মামলা রেজিস্টার করা হয়েছে। বিএনএসের অধীনে, 420-র পরিবর্তে 318 ধারা ব্যবহার করা হচ্ছে।
শাস্তি- সাত বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৮৮-র ৭ নম্বর ধারা - যদি কোনও সরকারি আধিকারিক এবং কর্মচারী তাঁদের দফতরের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত টাকা আয় করেন, সেক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হয়।
শাস্তি: ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা।
সন্দীপ ঘোষকে ১৫০ ঘণ্টা জেরা করেছে সিবিআই
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ১৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেরা করেছে সিবিআই। ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দু'বার সন্দীপের পলিগ্রাফ টেস্টও করেছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে দাবি, প্রথমবার পলিগ্রাফ টেস্টের সময় সন্দীপ ঘোষ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দেননি।
সিবিআই অফিসাররা সন্দীপ ঘোষের বাড়ি ও হাসপাতালে গিয়ে তল্লাশি চালান। এক আধিকারিক জানান, আর্থিক অনিয়মের তদন্তে তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। প্রথম দল আরজি কর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তদন্ত করে। সেখানকার পরিকাঠামো, দেহের নিরাপত্তা এবং ময়নাতদন্ত পরিচালনার প্রোটোকল সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয়। পাঁচ সদস্যের দলটি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে। এর মধ্যে ছিলেন ডাঃ সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ও।
পড়ুয়াদের ফেল করিয়ে পাশ করাতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ
সিবিআইয়ের দ্বিতীয় টিম আরজি কর হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের ভবনের চেস্ট ডিপার্টমেন্টে গিয়েছিল। ঠিক যেখানে, সেই রাতে ডিউটিতে তরুণী চিকিৎসক। অপরাধ স্থল পরিদর্শন করেন তাঁরা। সেখানে নার্স ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গেও তাঁদের কথা হয়। এর আগে, এই কেসে শুধুমাত্র একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল- সঞ্জয় রায়।
বর্তমানে সঞ্জয় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে। এদিকে আরজি করে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হলেন সন্দীপ ঘোষ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি অভিযোগ তুলেছিলেন, সন্দীপ ঘোষের আমলে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে অনেক আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। এছাড়াও তিনি অনেক অনৈতিক কাজ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ তোলেন। পড়ুয়াদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো, এবং পরে টাকা নিয়ে পাশ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগও তোলেন এই আখতার আলি। ভিজিল্যান্স কমিটির কাছে গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন।
বাংলা ডট আজতক ডট ইন'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আখতার আলি অভিযোগ করেছিলেন, 'সন্দীপ ঘোষের মতো দুর্নীতিগ্রস্থ অধ্যক্ষ আমি জীবনে দুটো দেখিনি। তিনি মোস্ট কোরাপ্টেড প্রিন্সিপাল।' তিনি আরও জানান, সন্দীপের বিরুদ্ধে এর আগে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু সেই অভিযোগের পরেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
খবরটি হিন্দিতে পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।