বছরভর নানা অনুষ্ঠান উদযাপন পালন করেন ভারতবাসীরা। ভারতবর্ষ উৎসব প্রধান দেশ। আর হাতে গোনা দিন পরে পালন হবে রথযাত্রা উৎসব (Rath Yatra Utsav)। ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে মূলত এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।
বিশেষ তিথিতে ধুমধাম করে রথযাত্রার উৎসব পালিত হয় পুরী, মাহেশ, ইস্কনের মন্দিরে। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত মন্দিরে ও বনেদি বাড়িতে জগন্নাথ দেব আছেন, সেখানেও ঘটা করে পালন করা হয় এই উৎসব। করোনা অতিমারী গত এক বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছন্দপতন ঘটিয়েছে। এবারও বন্ধ পুরীর রথযাত্রা। তবে ভক্ত সমাবেশ না হলেও, নিষ্ঠা করে পালন করা হবে নিয়মকানুন। জগন্নাথধাম পুরী ঘিরে প্রচলিত রয়েছে একাধিক কাহিনী।
* অনেকে মনে করেন, জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব সনাতন ধর্মের অন্যতম প্রধান একটি উৎসব। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে রথযাত্রা উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে।
* রথযাত্রার আরও একটি পৌরাণিক কাহিনি শোনা যায়। আনুমানিক সাতশো বছর পুরনো পুরীর রথযাত্রা উৎসব। এই যাত্রা নাকি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল এবং দুটি ভাগে তিনটি করে মোট ছয়টি রথ বের হতো। রথযাত্রার রাস্তায় পড়তো বলাগুন্ডি নালা। ফল স্বরূপ দেবতাদের মূর্তি মাঝপথে রথ থেকে নামিয়ে নালা পার করে নতুন রথে রাখা হতো। এরপর রাজা কেশরী নরসিংহের আমলে এই নালা বন্ধ হওয়ার পর থেকে ৩ টি রথেই পুরীর রথযাত্রা সম্পন্ন হয়। সেই রীতি এখনও মেনে চলা হয়।
আরও পড়ুন: ইসকন : শিলিগুড়িতে জগন্নাথ দর্শনে বাধা নেই, তবে মানতে হবে কড়া বিধি
* অন্যদিকে ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ থেকে জানা যায়, এই রথযাত্রা উৎসব চলে আসছে সত্যযুগ থেকে। সেই সময়ে হঠাৎ একদিন মালব দেশের (ওড়িশা) রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন একটি বিষ্ণু মন্দির গড়ার। কিন্তু সেই মন্দির দেখতে কেমন হবে তাঁর বিশেষ ধারণা ছিল না। মন্দির স্থাপন করে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি তৈরি করেন বিশ্বকর্মা। কিন্তু ইন্দ্রদ্যুন্ম অসন্তোষ প্রকাশ করায় মূর্তি নির্মাণ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যেতে হয় বিশ্বকর্মাকে।
* আবার কথিত আছে, শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে দেখতে যান জগন্নাথদেব। সেইজন্যে ওই তিথি মেনেই গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আয়োজন হয়। এই যাত্রাকে সোজা রথযাত্রা বলা হয়। এর ঠিক সাত দিন পর তার ফিরে আসা উল্টোরথ বলে পরিচিত।
পুরাতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদদের মতে এই গুন্ডিচা, রাজা ইন্দ্রদ্যুন্মের স্ত্রী। আজও পুরীর এই রাজবংশ বর্তমান এবং বংশপরম্পরায় রাজা উপাধিতে অনেকেই ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের হাত ধরেই পুরীর রথযাত্রায় পুষ্পাঞ্জলি প্রদান থেকে, সোনার ঝাড়ু ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
আরও পড়ুন: খুঁটি পুজোর মাধ্যমেই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে! কেন হয় এই উৎসব জানেন?
রথযাত্রা ২০২১-র দিনক্ষণ
একনজরে দেখে নিন, পঞ্জিকা মতে এই বছরের রথযাত্রার সময়সূচি।
* রথযাত্রা - ১২ জুলাই (২৭ আষাঢ়), সোমবার। দ্বিতীয়া শুরু ১২ জুলাই সকাল ৭.২২ মিনিটে এবং শেষ ১৩ জুলাই সকাল ৭.১৫ মিনিটে।
* উল্টো রথযাত্রা ( পূর্ণ যাত্রা) - ১৯ জুলাই (২ শ্রাবণ), সোমবার।
আরও পড়ুন: দেবীর আগমন-গমনে কী বার্তা দিচ্ছে এবার! ধরায় ফিরবে সুদিন?
রথযাত্রা উপলক্ষে, পুরীর রথে জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন হওয়া খুব শুভ বলে বিবেচিত। জগন্নাথ, শুভদ্রা ও বলভদ্রর জন্য তিনটি রথ তৈরি করা হয়। যা দেখার জন্য ফি বছর ভিড় জমান লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থী। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, কোনও ব্যক্তি যদি রথযাত্রায় পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অংশ নেন, তাহলে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে উঠতে পারেন তিনি। রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে এই উৎসব উপলক্ষে যাত্রাপালাও মঞ্চস্থের রীতি বেশ জনপ্রিয়।