নবান্ন দখলের লড়াইয়ে রাজ্য বিজেপি-র প্রথম সারির নেতারা প্রায় সকলেই প্রার্থী হয়েছেন। তাতে রয়েছেন স্বয়ং মুকুল রায়ও। কয়েক জন সাংসদকেও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু দিলীপ ঘোষ ভোটে দাঁড়াননি। তাতে জল্পনা শুরু হয় বাংলায় বিজেপি জিতলে দিলীপ ঘোষকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে না, সেই বর্তাই দিতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
কিন্তু খড়গপুরের জনসভায় দিলীপকে নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্তুতি সব হিসেব ওলটা পালট করে দিয়েছে। মোদী প্রকাশ্য জনসভায় বলেছেন, দিলীপ ঘোষের মতো নেতা পাওয়া গর্বের বিষয়। ভোটের বাংলায় দাঁড়িয়ে দলের রাজ্য সভাপতিকে এ ভাবেই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারবার আক্রমণের লক্ষ্য হওয়া সত্বেও দিলীপ লড়াই করে চলেছেন বলে দাবি করে মোদী।
বাংলার বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে কোনও মুখকে সামনে আনেনি বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা শুধু বলেছেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার ‘ভূমিপুত্র’-ই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কে তা নিয়ে জল্পনা চলছেই। মিঠুন চক্রবর্তী বিজেপিতে যোগা দেওয়ার পর শোনা যাচ্ছিল তাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে পারে গেরুয়া শিবির। কখনও বাতাসে ভাসছে স্বপন দাশগুপ্ত বা শুভেন্দু অধিকারীর নামও। এই অবস্থায় খড়্গপুর থেকে কেনও ইঙ্গিত কী দিলেন মোদী? তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে বঙ্গ রাজনীতিতে। তবে ভোটের লড়াইয়ে না থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীত্বের লড়াইয়ে যে দিলীপ আছেন সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল।
২০১৬ সালে অসম বিধানসভা ভোটের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সাংসদ সর্বানন্দ সোনেওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল বিজেপি। পরের বছর উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথকে যখন মুখ্যমন্ত্রী করা হয় তখন তিনি ছিলেন লোকসভার সাংসদ। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো হয়েছে লোকসভার সাংসদ তীরথ সিং রাওয়াততকে। তাই ভোটে না দাঁড়ালেও দিলীপরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।
আরএসএস যোগ
মুখ্য়মন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গেরুয়া শিবির বরাবর বিজেপি-আরএসএস যোগকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন দিলীপ ঘোষ। ১৯৮০ সালে আরএসএসে যোগ দেন দিলীপ। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের হয়ে আন্দামানে কাজও করেছেন দিলীপ। এবারের বাংলার ভোটে অন্যতম ইস্যু হিন্দুত্ব। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে হিন্দু ও ব্রাহ্মণ বলে প্রমাণে ময়দানে নেমেছেন। এই লড়াইয়ের কৃতীত্ব কিন্তু দিলীপরেই প্রাপ্য।
সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন
২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন দিলীপ। পরের বছর রাজ্য সভাপতি হন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে মাত্র ৩টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। ঘরে এসেছিল ১০ শতাংশ ভোট। কিন্তু সংগঠনকে জোড়ালো করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি দিলীপ। যার ফল দেখা দিতে শুরু করেছিল ২০১৭ সালের স্থানীয় নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। রাজ্যে বাম কংগ্রেসকে হটিয়ে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বিজেপি।
দিলীপের নিজের আলাদা জনভিত্তি রয়েছে
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে খড়গপুর আসনে কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপালকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন রাজনীতির ময়দানে তেমন অভিজ্ঞতা না থাকা দিলীপরে। খড়গপুর মানেই সেই সময় ছিল 'চাচা'র আধিপত্য। সেই যুগের অবসান ঘটান দিলীপ। এরপর ২০১৯ সালে মেদিনীপুর আসন থেকে জিতে সাংসদ হন। ২০১৪ সালে এই আসনেই জিতেছিল তৃণমূল। জীবনে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্বাচনে হারেননি দিলীপ ঘোষ। বিতর্কিত মন্তব্য করলেও এই রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের জনপ্রিয়তা বাড়াতোনর ক্ষেত্রে তার অবদান মানে বিজেপি নেতৃত্বও। তাই বাংলায় বিজেপির সরকার গঠনের পরিস্থিতি তৈরি হলে দিলীপ ঘোষই যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অন্যতম পছন্দের তারই যেন ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী।