আগামী শনিবার পঞ্চম দফার ভোট। কমিশনের নতুন নিয়মে মঙ্গলবার রাত ১০টায় শেষহচ্ছে প্রচার পর্ব। শেষলগ্নে এদিন তাই প্রচারের ঠাসা কর্মসূচি ছিল তৃণমূলনেত্রীর। কিন্তু কমিশনের কোপে পড়ে সেই কর্মসূচি বাতিল হয়েছে। সোমবার রাতেই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে দিয়েছে সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না মমতা বন্দ্যোবাধ্যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও ও সংখ্যালঘু ভোট ভাগ নিয়ে তৃণমূলনেত্রীর জবাবে কমিশন খুশি নয়। সেই কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা বলে কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেন মমতা। রাত ৮টার পর প্রচার করবেন তাও জানিয়েছেন নেত্রী।
এবারের ভোটে বারবার কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী। বিজেপিকে বাড়তি সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন। তবে অতীতে কিন্তু দেখা গেছে একাধিক বিজেপি নেতৃত্ব কমিশনের কোপে পড়েছেন। সেই তালিকায় বাদ যাননি স্বয়ং অমিত শাহের মত ব্যক্তিত্বও।
এবার বাংলার সঙ্গে বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হল অসমেও। তিন পর্বে মিটল অসমের ভোটপর্ব। এই রাজ্যে আবার ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। কিন্তু তৃতীয় দফা ভোটের আগে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন।
অসমে তৃতীয় তথা শেষদফার নির্বাচন ছিল ৬ এপ্রিল। কিন্তু পয়লা এপ্রিল হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে শোকজ নোটিস পাঠান হয়েছিল। বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টের নেতা হগরামা মোহিলারির বিরুদ্ধে হুমকিমূলক বক্তব্য পেশ করেছেন বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এই অভিযোগে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল কংগ্রেস। ভোট প্রচারের সময় নাকি হিমন্ত বলেছিলেন, এনআইএ-কে ব্যবহার করে বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টের নেতা হগরামা মোহিলারিকে জেলে পাঠাবেন তিনি।
আদর্শ আচরণ বিধি ভেঙে মন্তব্য করার অভিযোগে ২ এপ্রিল হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রচারের উপরে ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাচন কমিশন৷ যার অর্থ ছিল ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিজেপির এই তারকা প্রচারক প্রচারে নামতে পারবেন না। এদিকে অসমের তৃতীয় তথা অন্তিম দফার নির্বাচন ছিল ৬ এপ্রিল। তার আগে ৪ এপ্রিল বিকেল ৫টার মধ্যে প্রচার শেষ করতে হত। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার জেরে হিমন্তের বিজেপির হয়ে আর প্রচার করা সম্ভব ছিল না।
উত্তরপূর্ব ভারতে বিজেপির চাণক্য হিসেবে পরিচিত হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসে অসমের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন হিমন্ত। অসমে বিজেপি-র রণনীতি তৈরি করার পিছনে হিমন্ত বিশ্বশর্মার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল ৷ ফলে প্রচারের শেষলগ্নে হিমন্তের ময়দানে নামতে না পাড়া নিঃসন্দেহে বিজেপি-র কাছে ধাক্কা ছিল৷ তবে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানোর জন্য কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলেন হিমন্ত। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিজেপি নেতার প্রচারের উপর ৪৮ ঘণ্টার যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা কমিয়ে ২৪ ঘণ্টায় নামিয়ে এনেছিল কমিশন।
হিমন্তের মতই কমিশনের কোপে পড়তে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। এবারের ভোট বাংলায় বিজেপির অন্যতম প্রচারক তিনি। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের সময়ই ৭২ ঘণ্টার (৩ দিন) জন্য তাঁর প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কমিশন। অভিযোগ ছিল ‘আলি বনাম বজরংবলি’ সংক্রান্ত বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
কমিশনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিলেন বর্তমানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের সময় অমিত শাহের নির্বাচনী প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কমিশন। সেবার ১২ এপ্রলি কমিশন ধর্মীয় উস্কানির জন্য অমিত শাহের সমস্ত রাজনৈতিক প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। যদিও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
উনিশের লোকসভা ভোটের সময়ই আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বিজেপি-র মেনকা গান্ধীর প্রচারের উপরও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল কমিশনের তরফে।
বাবরি মসজিদ নিয়ে ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য করার জন্য উনিশের ভোটে সাধ্বী প্রজ্ঞার প্রচার ৩ দিনের জন্য বন্ধ রেখেছিল নির্বাচন কমিশন।
২০২০ সালে দিল্লি বিধানসভা ভোটের সময় প্রকাশ্য জনসভায় অনুরাগ ঠাকুরকে বলতে শোনা গিয়েছিল 'গোলি মারো শালোকো'। সেকরাণে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপরে।
এবারের ভোটে শীতলকুচি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে একাধিক বিজেপি নেতাকে। যার মধ্যে রয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা এবং সায়ন্তন বসু। মুখ্যমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর এদের বিরুদ্ধেও কমিশনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। এরপরেই রাহুল সিন্হার ভোটের প্রচারে ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করে কমিশন।