বছরের শুরু থেকেই এরাজ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছিল মোটামুটি সব রাজনৈতিক দলই। যদিও হাওয়া গরম করেছে বিজেপি ও তৃণমূল। তবে জোর নির্বাচনী লড়াই শুরু হলেও ভোটের দিন ঘোষণা তখনও বাকি ছিল। এবার সেই নির্ঘণ্টও প্রকাশিত। আর একমাস, তারপরেই রাজ্যে শুরু হয়ে যাচ্ছে ভোটগ্রহণ। এক মাস ধরে চলবে ভোটপর্ব। ২ মে বোঝা যাবে আগামী ৫ বছর কোন শিবির আসতে চলেছে বাংলার ক্ষমতায়। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী হ্যাটট্রিক করবেন সেই প্রশ্নেরও উত্তর মিলবে। এমনিতেই গত লোকসভা ভোটে বিজেপির উত্থান তৃণমূলনেত্রীর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আরও ৩টি কারণ রয়েছে যা এই নির্বাচনকে আগের নির্বাচনের থেকে আলাদা করছে।
জাতপাতের রাজনীতি
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে এবারই প্রথম জাতপারে রাজনীতি এত প্রকট আকার নিয়েছে।
এর আগে বাংলার নির্বাচনে শ্রেণি বিভাগ কখনই এমন ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। এবারের ভোটে মতুয়া সম্প্রদায় একটি বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে। পাশাপাশি আদিবাসী ও কুরমি সমাজের ভোটও বড় চালিকা শক্তি হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত নদিয়া এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় মাতুয়া সম্প্রদায়ের প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস করেন, এবার বিজেপি ও তৃণমূল দুই শিবিরের কাছেই তাদের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে।
বাঙালি Vs অবাঙালি
এবারে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে 'বহিরাগত বনাম বাঙালি' ইস্যুটিও সামনে এসেছে। এটিকে বাঙালি অস্মিতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সদ্ব্যবহার করতে চাইছেন। তিনি ভোট প্রচারে বিজেপি নেতাদের বারবার বহিরাগত বলে আক্রমণ শানাচ্ছেন। অন্যদিকে এর পাল্টা হিসাবে বিজেপি বাঙালি মনীষীদের স্মরণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক হিংসা
এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক হিংসাও একটি বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে। বলা হচ্ছে যে সেই কারণেই এবার নির্বাচন কমিশন ৮ দফায় নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনকে হিংসা মুক্ত রাখা এবার নির্বাচন কমিশনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। গত বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গে সনির্বাচন সাত দফায় হয়েছিল। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের দিকে অভিযোগ তুলেছিলেন। এবারও ৮ দফায় নির্বাচন ঘোষণার পর নিজের উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যায় মমতাকে।
৮ দফায় ভোটে ক্ষুব্ধ মমতা
কমিশন ভোটের দিন ঘোষণার পর রাজ্য রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন দিন ঘোষণার পরেই তিনি কমিশন এবং বিজেপিকে নিশানা করেছেন। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,"বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছে। ওরা পুরো দেশকে বিভক্ত করতে ব্যস্ত এবং বাংলাতেও একই কাজ করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দের ক্ষমতার অপব্যবহার করা উচিত নয়। কেন বাংলায় ৮ দফায় নির্বাচন হচ্ছে? বিজেপি বলেছে নির্বাচন কমিশনও তাই করেছে। একই জেলায় দুই-তিনবারে নির্বাচন কেন হচ্ছে?" তৃণমূলনেত্রীর হুঁশিয়ারি, এই সমস্ত পদ্ধতি কার্যকর হবে না। ফের একবার বাঙালি আবেগ তুলেছেন মমতা। দাবি করেছেন 'বাঙালি বাংলায় রাজত্ব করবে, আমরা বিজেপিকে পরাজিত করব।' অন্যদিকে, বিজেপি ৮ দফায় নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছে।