রাজনৈতিক হিংসা ও মাওবাদী সমস্যার কথা মাথায় রেখে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন বাংলায় সাত দফায় করেছিল কমিশন। এবারও যে তার হেরফের হবে না সেই ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। তবে এপ্রিল নয়, এবার ভোটের দিন এগিয়ে নিয়ে আসা হল মার্চে। বাড়ল দফার সংখ্যাও। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন হবে ৮ দফায়। ২৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ভোটগ্রহণ। গত লোকসভায় উত্তরবঙ্গকে দিয়ে শুরু হয়েছিল ভোটপর্ব। এবার বদলে গেল সেই নিয়ম। বরং পাহাড় নয় এবার জঙ্গলমহলকে দিয়ে শুরু হচ্ছে বিধানসভার ভোটপর্ব। এমনকি এখেকটি জেলাকেও কয়েক ভাগে ভাগ করেছে কমিশন। কেন এমন করা হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে সুর চড়িয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জঙ্গলমহল দিয়ে শুরু রাজ্যের ভোটপর্ব
২৭ মার্চ শুরু হচ্ছে এরাজ্যে ভোটপর্ব। প্রথম দফায় ভোট হবে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর পার্ট ওয়ান, পূর্ব মেদিনীপুর পার্ট ওয়ান। । অর্থাৎ জঙ্গলমহলকে দিয়েই এবার ভোটপর্ব শুরু করল কমিশন। তবে জঙ্গলমহলেও একদিনে মিটছে না ভোটপর্ব। দ্বিতীয় দফাতেও ভোট হবে বাঁকুড়া পার্ট টু, পূর্ব মেদিনীপুর পার্ট টু, দক্ষিণ ২৪ পরগনা পার্ট ওয়ানের মোট ৩০টি আসনে। অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় দফাতেই এবার জঙ্গলমহলের ভোট শেষ করতে চাইছে কমিশন।
কলকাতাতেও একাধিক পর্বে ভোট
শহর কলকাতাতেও এবার একাধিক পর্বে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায় রাজ্যে ভোট হবে ৩৬টি আসনে। যার মধ্যে রয়েছে কলকাতা দক্ষিণ। কলকাতা উত্তরের ভোট আবার হতে চলেছে অষ্টম তথা শেষ দফায় ২৯ এপ্রিল।
উত্তরবঙ্গে ভোট শুরু চতুর্থ পর্ব থেকে
উত্তরবঙ্গে এবার ভোটপর্ব শুরু হচ্ছে ১০ এপ্রিল থেকে। সেদিন ভোট হবে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলায়। পঞ্চমদফায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ভোট হবে দার্জিলং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়িতে। আবার উত্তর দিনাজপুরে ভোট পবে ষষ্ঠ পর্যায়ে ২২ এপ্রিল। মালদা পার্ট ১, মুর্শিদাবাদ পার্ট ১ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ভোট ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায়। অষ্টম দফায় মালদা পার্ট-২ এবং মুর্শিদাবাদ পার্ট-২ তে ভোট রেখেছে কমিশন। অর্থাৎ উত্তরবঙ্গে মোট ৫ দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে একুশের বিধানসভা ভোট।
ভাগ করা হয়েছে উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এবার ভোট হবে ৩ পর্বে। দুই দফায় উত্তর চব্বিশ পরগনায়। দুই মেদিনীপুরকেও ভাগ করা হয়েছে দু'ভাগে। উর্থাৎ উপকূলবর্তী জেলাগুলির ক্ষেত্রেও একদিন নয় বরং একাধিক দিনেই ভরসা রেখেছে কমিশন।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতেও বাড়তি নজর
নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর চব্বিশ পরগনার মত সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে হচ্ছে একাধিক দফায় ভোট। সেভাবে দেখতে দেলে হাতে গোনা কয়েকটি জেলা ছাড়া রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই একাধিক পর্বে ভোট করানোর ফরমুলা নিয়েছে কমিশন।
রাজনৈতিক হিংসার কারণে পশ্চিমবঙ্গে নির্বিঘ্নে ভোট করানোটা কমিশনের কাছে বড়পরীক্ষা। সেই ইঙ্গিত দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক সম্মলনে দিয়েছেন মুখ্যনির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা। আর তাই পশ্চিমবঙ্গের জন্য দু'জন পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে ও মৃণালকান্তি দাস, পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক ও বিশেষ পর্যবেক্ষক ভি মুরলীকুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ এনে কমিশনের কাছে কয়েকদিন আগেই স্মারকলিপি দিয়েছিল বিজেপি। এরাজ্যের হিংসা পরিস্থিতিকে যে কমিশন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে তা নির্বাচনী নির্ঘণ্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তাই জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গ বা সীমন্তবর্তী জেলাগুলির ক্ষেত্রে বাড়তি নজর দিতেই একাধিক দফায় ভোটপর্বের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। নজর থেকে বাদ যায়নি শহর কলকাতাও।