রাজনীতিতে যখন ক্ষমতাই মূলমন্ত্র, তখন রাজনীতিকদের দলবদল একটি রুটিন কাজ। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে-আগে রাজনীতিকদের দলবদলের তোড়জোড় বেশি দেখা যায়। একুশের নির্বাচনের আগে সেই হাওয়ায় ভেসেছে বঙ্গ রাজনীতিও। এবার তৃণমূল থেকে বিজেপি শিবিরে সবচেয়ে বেশি দলবদলের ঘটনা দেখা গেছে। এমনকি রাজ্যে নির্বাচন শুরু হয়ে যাওয়ার পরও সেই ধারা অব্যাহত। উল্টোদিকে বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার ঘটনা তুলনামূলক কম হলেও তাও ঘটেছে। এই আবহে বাম শিবিরেও যে ভাঙন ধরেনি এমনটা নয়। ২০২০ সালের নভেম্বরেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি একটি ট্যুইট করেছিলেন। যাতে তিনি দাবি করেন একদিনেই বিভিন্ন দল থেকে ৫০০ জন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪৮০ জন এসেছেন সিপিআইএম থেকে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপির উত্থানের পর থেকে বহু বামপন্থী নেতাকেই দেখা গিয়েছে দল বদলাতে। তবে তৃণমূল শিবিরের তুলনায় বামশিবিরে দলবদলের এই সংখ্যাটা নগন্য। এখনও দলের পুরনো আদর্শকেই আঁকড়ে ধরে বসে রয়েছেন অনেকেই। বর্তমানে বদলে যাওয়া রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কী ভাবছেন বাম নেতৃত্ব তারই খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছে ইন্ডিয়া টুডে।
দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সৌমিত্র চক্রবর্তী। রাজাবাজার-বেলাঘাটা এলাকায় সিপিএম নেতা হিসাবে যথেষ্ট পরিচিতিও রয়েছে তাঁর। দলবদলের হাওয়ার বহু সহকর্মী দল ছাড়লেও এখনও লাল ঝাণ্ডাতেই আস্থা সৌমিত্রবাবুর। এর কারণ হিসাবে প্রবীণ সিপিএম নেতার দাবি, 'এটা আদর্শবাদ। আমরা কমিউনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী, যা সাম্যের কথা বলে।' একদা কলকাতা পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের লোকাল কমিটির সেক্রেটারি এভাবেই বামপন্থাকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন।
সিপিএম থেকে বিজেপিতে যাওয়া নেতার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। যার মধ্যে রয়েছেন সিপিএম নেতা খগেন মুর্মু, হলদিয়ার বিদায়ী বিধায়ক তাপসী মালিক, শিলিগুড়ির যুব নেতা শঙ্কর ঘোষ, যাদবপুরের কাউন্সিলর রিঙ্কু নস্কর। সৌমিত্র চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, মাঝারি ও নিচুস্তরে দলবদল হলেও এখনও সিপিএমে প্রচুর ক্যাডার রয়েছেন। এইাই তাদের শক্তি। সৌমিত্রবাবু বলছেন, " শতাংশের হিসাবে বামেদের দলবদলের সংখ্যাটা নগন্য।" অন্যদিকে তৃণমূল ছাড়ার হিড়িকের কারণ হিসাবে বর্ষীয়াণ এই নেতার ব্যাখ্যা হল, দলের অত্যাচারের কারণেই বিজেপিতে পালাচ্ছেন কর্মীরা। তবে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, যেখানে ঘর গুছিয়ে নিতে গেরুয়া শিবিরের পতাকা ধরছেন অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেখানে এখনও আদর্শ আকড়ে বসে রয়েছেন কেন সৌমিত্র চক্রবর্তীর মত মুষ্টিমেয় কিছু বাম নেতারা।
এর ব্যাখ্যাও অবশ্য দিয়েছেন সৌমিত্রবাবু নিজেই। তাঁর কথায়, " তৃণমূল নেতাদের মত আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ নেই। সিপিএম তার কর্মীদের রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষিত করে। কিন্তু অন্য়ান্য বিরোধী দলগুলি মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। আর তাই আমাদের মত কর্মীদের ভয় পায়। " ১৯৮০ সাল থেকে সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সৌমিত্র চক্রবর্তী। আগামী দিনে হাজার ঝড়-ঝাপটা আসলেও দল ছাড়বেন না বলেই দাবি করেন এই প্রবীণ বাম নেতা।