রবিবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় রাজভবনে যেতেই বাংলার রাজনীতির অলিন্দে এখন কানপাতলে একটাই খবর শোনা যাচ্ছে। বাংলার মহারাজের কি খুব শীঘ্রই রাজনীতিতে যোগদান হতে চলেছে তাই নিয়েই এখন সরগরম পাড়ার চায়ের আড্ডা থেকে টেলিভিশনের টকশো। বরাবরই নিজেকে বিতর্ক থেকে দূরে রাখা সৌরভ অবশ্য রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রসঙ্গে দাবি করেছেন, এতে কোনও জল্পনার জায়গা নেই। তবে সেসব কথা শুনছে কে। তারমধ্যে সোমবার মহারাজের দিল্লি গমন সেই আলোচনা বাড়িয়েছে। এরমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য সেই যজ্ঞে বাড়তি ঘি ঢালল তা বলাই বাহুল্য। সৌরভের জন্যই তিনি সোমবার অরুণ জেটলির মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসেছেন বলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দাবি করেন শাহ। যা বাংলার মহারাজের পদ্মে গমন নিয়ে ডিসেম্বরের শেষে কনকনে ঠান্ডায় বাংলার রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনার মাত্রাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে এক দশকের বেশি সময় ধরে (১৯৯৯-২০১৩) সভাপতি ছিলেন অরুণ জেটলি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর আমলেই ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছিল ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলির প্রয়াণের পর তাই ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়াম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে । সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেও। প্রয়াত অরুণ জেটলির মূর্তি এদিন তাঁর জন্ম বার্ষিকীতে স্থাপিত হল ফিরোজ শাহ কোটলায়। সেই অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অমিত পুত্র তথা বোর্চসচিব জয় শাহ, বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, সাংসদ গৌতম গম্ভীর-সহ অনেকেই। ছিলেন অরুণ জেটলির দীর্ঘদিনের সঙ্গী তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আপাতদৃষ্টিতে রাজনীতির বাইরে খুব একটা সাধারণ অনুষ্ঠান। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে অমিত শাহ ও সৌরভের নৌকট্যই জন্ম দিচ্ছে যাবতীয় জল্পনার। আর সেই জল্পনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই। বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, 'আমি এই অনুষ্ঠানে আসব কি না ভাবছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম সৌরভ এসেছেন, গম্ভীর এসেছেন, তখন আসার লোভ সামলাতে পারলাম না।'
বেশ কিছুদিন ধরেই গেরুয়া শিবিরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম শোনা যাচ্ছে। এমনকি এটাও শোনা গিয়েছিল, তিনি দলে যোগ দিলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সৌরভকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করবে গেরুয়া শিবির। বাংলায় ক্ষমতায় এলে কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে তা নিয়ে নিজেদের অন্দরেই প্রশ্ন রয়েছে বিজেপির। কিন্তু ভোট আসতে আর বেশি দেরি নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ এখনও ঠিক না হলেও জোরকদমে প্রচারে নেমেছে গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তাবড় তাবড় নেতা কয়েক সপ্তাহ অন্তর দিল্লি থেকে রাজ্যে ছুটে আসছেন। শুধু তাই নয় বঙ্গ জয় হলে বাংলার ভূমিপুত্রই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে অমিত শাহ স্বয়ং ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই আবহে রবিবার রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সৌরভের রাজধানী গমন তাই নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।যদিও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাজনীতির কোনও প্রসঙ্গই তোলেননি সৌরভ। বদলে ক্রিকেটের প্রতি অরুণ জেটলির অবদানের কথাই শোনা যায় মহারাজের মুখে। দাদার কথায়, ‘‘অরুণ জেটলি বরাবরই ক্রিকেটার্স পার্সন ছিলেন। কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটারকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনিও তাই বলবেন। ক্রিকেটে একজনের প্রশাসকের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেও সেটা বুঝেছি।’’ এরপরই তিনি আশাপ্রকাশ করেন, ডিডিসিএ সভাপতি হিসেবে অরুণ জেটলির পুত্র রোহনও প্রশংসনীয় কাজ করবেন।