দু'দিনের সফরে সফরে বাংলায় এসে গত ২০ ডিসেম্বর বোলপুর শহরে রোড শো করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই রোড শোতে উপচে পড়া ভিড় দেখে স্বয়ং অমিত শাহ নিজে উৎফুল্ল হয়েছিলেন। এরপরেই ২৯ ডিসেম্বর বীরভূমের বোলপুরে অমিত শাহ যেখানে রোড শো করেছিলেন সেখানেই বঙ্গধ্বনি যাত্রা করবেন বলে ঘোষণা করেন মমতা। প্রায় দুলক্ষ মানুষ তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে রাস্তায় হাঁটবেন দাবি করেছিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অণুব্রত মণ্ডল। এদিন পদযাত্রায় জনস্রোত দেখিয়ে বিজেপির রোড শোর মধুর বদলা নিলেন তৃণমূলনেত্রী। যেখানে অবশ্যম্ভাবী ভাবেই বিজেপির প্রতি তোপ দাগলেন মমতা। পদযাত্রা শেষে জামবুনির জনসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একের পর এক আক্রমণের জবাব দিলেন। সেই সঙ্গে আদিবাসী বাড়িতে শাহের অধ্যাহ্নভোজ পর্ব নিয়েও এদিন কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না মুখ্যমন্ত্রী।
গত নভেম্বরে রাজ্য সফরে এসে বাঁকুড়ায় এক আদিবালী পরিবারে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শেষ হতেই বাঁকুড়ায় জেলা সফরে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার মাটিতে জনসভা করতে গিয়ে তোপ দাগেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর 'মধ্যাহ্নভোজ রাজনীতি'কে। ‘পাঁচতারা হোটেলের খাবার’ এনে লোক দেখাতে ওই বাড়িতে খেয়েছেন বলে অভিযোগ শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। বোলপুরের জনসভাতেও সেই একই সুর শোনা গেল তৃণমূলনেত্রীর গলায়। তবে এদিন কারও নাম না করেই মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রতি সপ্তাহে একবার চাই ফাইভ স্টারের খাবার। অথচ দেখাচ্ছে আদিবাসী বাড়ির খাবার।’ নিশানা যে কোনদিকে ছিল তা বুঝতে কারওই সমস্যা হয়নি।
এভাবে আদিবাসীদের অপমান করা হচ্ছে বলেই সুর চড়ান তৃণমূলনেত্রী। বলেন, ‘আদিবাসীদের অপমান করার অধিকার নেই।’ রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন নিয়ে বরাবরই বহিরগত তত্ত্ব দিচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী। সেই প্রসঙ্গেই অমিত শাহকে কটাক্ষ করে নেত্রী বলেন, 'বাংলায় এসে শুধু বিবেকানন্দের গলায় মালা দিলে হবে না। সব জানতে হবে। বেলুড় মঠ জানতে হবে, বক্রেশ্বর জানতে হবে, দক্ষিণেশ্বর জানতে হবে, রামকৃষ্ণ জানতে হবে। হিন্দু ধর্ম আমাদের শেখাতে হবে না। আপনারা মনে রাখবেন, বাংলার মানুষ হিন্দু ধর্ম পালন করতে জানে। আপনাদের নতুন আমদানি করা দাঙ্গা ধর্মের কোনও প্রয়োজন নেই বাংলার।'
সম্প্রতি এই বোলপুরে এসে অমিত শাহ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধী যখন বিশ্বভারতীতে আসতেন, তখন কি তাঁরা বহিরাগত ছিলেন?’ সেই বহিরাগত তত্ত্বের ব্যাখ্যাও এদিন দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের লোককে বহিরাগত বলি না। বাইরের লোক অর্থাৎ অন্য রাজ্যের মানুষ এ রাজ্যে আসতেই পারেন। এতে কোনও অসুবিধা নেই। আমিও অন্য রাজ্যে যাই।’ এর পরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নাম না-করে মমতার অভিযোগ, ‘ওরা একটা মিশন নিয়ে যে সংস্কৃতিটা বাংলায় আমদানি করতে চাইছে, তা দাঙ্গার সংস্কৃতি। ওরা চায়, বাংলার সংস্কৃতির মেরুদণ্ডকে ভেঙে ইতিহাসটাকে ভুলিয়ে দাও। এই সংস্কৃতি আমাদের বিরোধী। ওরা যে তত্ত্ব আমদানি করছে, সেটাই বহিরাগত চিন্তাধারা। আমরা ভারতীয় সংস্কৃতিকে সম্মান করি। কিন্তু ওরা যে সংস্কৃতিটা এখানে আনতে চাইছে, সেটা দেশের এবং বাংলার মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক।’
বীরভূমে রোড শো-তে এসে অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসন পেয়ে জয়ী হবে বিজেপি। সুযোগ পেলে সোনার বাংলা গড়বেন নরেন্দ্র মোদী। শাহের সেই দাবিকে কটাক্ষ করেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নতুন করে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখানোর দরকার নেই। সোনার বাংলার স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথই।